ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৩ মাঘ ১৪৩১, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬ শাবান ১৪৪৬

বিনোদন

১৫ বছর ‘নিষিদ্ধ’ থাকার পর মিলছে একুশে পদক, যা বললেন ফেরদৌস আরা

নাজমুল আহসান তালুকদার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৫
১৫ বছর ‘নিষিদ্ধ’ থাকার পর মিলছে একুশে পদক, যা বললেন ফেরদৌস আরা নজরুলসংগীত শিল্পী ফেরদৌস আরা

বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বাংলাদেশ বেতারে গেল ১৫ বছর গান গাইতে পারেননি তিনি। পতিত শেখ হাসিনার সরকারের আমলে অংশ নিতে পারেননি কোনো অনুষ্ঠানে।

কিছুদিন আগে এমনই আক্ষেপের কথা প্রকাশ করেছিলেন জনপ্রিয় নজরুলসংগীত শিল্পী ফেরদৌস আরা।  

এই কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী বলছিলেন, ‘‘একজন শিল্পীকে এত বছর পারফর্ম করতে না দেওয়ার কোনো কারণ থাকতে পারে না। শিল্পীকে তার প্রতিভা থেকে দমিয়ে রাখা যায় না। আমার জুনিয়ররা নিয়মিত বিটিভিতে গান করছেন, কিন্তু বিটিভি-বেতারের সব প্রোগ্রাম থেকে আমাকে কেন বাদ দেওয়া হয়েছে তা আমি জানি না। আমার ধারণা, যারা আমাকে ‘না’ করেছেন, তারাও জানেন না কেন আমাকে অনুষ্ঠানে নেওয়া হয়নি। আমাকে কেন নিষিদ্ধ করা হল? একজন শিল্পীকে কেন শাস্তি দেওয়া হল? সম্মানের বদলে কেন অসম্মান করা হবে? কেউ আমাকে বলতে পারেনি কেন আমাকে প্রোগ্রাম দেওয়া হচ্ছে না। কারা বাদ দিয়েছে, কেন দিয়েছে। এসব কারণ আমাকে জানানো হয়নি। ’’

দেড় দশক ধরে এমন ‘এক ঘরে থাকা’ ফেরদৌস আরা অবশেষে যেন গলা ছেড়ে গাইতে পারছেন। হাসিনার বিদায়ে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আবারও সরকারি অনুষ্ঠানগুলোতে আমন্ত্রণ পেতে শুরু করেছেন তিনি। নজরুল ইনস্টিটিউটের সদস্যও নির্বাচিত হয়েছেন। এবার পেলেন রাষ্ট্রের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদক।  

বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য এ বছর ১৫ বিশিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে একুশে পদকের জন্য মনোনীত করেছে সরকার। বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে মনোনীতদের নাম ঘোষণা করা হয়। সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী মনোনীতদের নাম প্রকাশ করেন।  

এই তালিকায় নিজের নাম দেখার তাৎক্ষণিক অনুভূতি প্রকাশ করে ফেরদৌস আরা বলেন, একুশে পদক পাওয়ায় আমি ভীষণ আনন্দিত। এই অনুভূতি সত্যিই প্রকাশের ভাষা নেই। আমার দীর্ঘ সংগীত ক্যারিয়ারে যারা পাশে ছিলেন, শ্রোতা, ভক্ত, অনুরাগী এবং আমার পরিবারের সবার কাছেই কৃতজ্ঞতা জানাই। একজন শিল্পী হিসেবে এমন পুরস্কারে দায়িত্ব আরও বেড়ে গেল। সবার কাছে দোয়া চাই যেন সুস্থ থেকে গান করে যেতে পারি।

তিনি বলেন, ‘স্বীকৃতি ব্যাপারটা কাগজ-কলমের। কিন্তু মানুষের ভালোবাসাটাই একজন শিল্পীর জন্য বড় পাওয়া। মানুষ ভালোবাসে বলেই গান গেয়ে যেতে পারছি। মাঝে কিছু অনুষ্ঠানে এমনও হয়েছে, মানুষ বাধভাঙা উচ্ছ্বাস নিয়ে আসছে শুধু দেখার জন্য। এমন পরিস্থিতি হয়েছে, তাদের জন্য তিনটি রাস্তার মোড় আটকে রাখতে হয়েছিল। এই যে মানুষের ভালোবাসা সেটাতো অ্যাওয়ার্ডে পাওয়া যায় না। তবে স্বীকৃতি শিল্পীসত্তার পূর্ণতা দেয়। ’

অনেক আগেই তিনি এই পুরস্কার পাওয়ার দাবিদার ছিলেন বলে মনে করেন ফেরদৌস আরা। তার মতে, “আমার সন্তানের বন্ধুরাও অনেকে সময় বলতো, ‘তোমার আম্মা যে মাপের শিল্পী তার তো এ ধরনের বড় পুরস্কার পাওয়া উচিৎ ছিল’। যাইহোক আল্লাহ তা’আলার রহমতে একুশে পদক পেয়েছি, এটাই বড় ভালোগার ব্যাপার। ’

ফেরদৌস আরার এর চেয়ে বেশি ভালোলাগা কাজ করছে এটা ভেবে যে, কোনো দলের ব্যানারের ছায়াতলে থেকে পুরস্কারটি পাননি তিনি। তার কথায়, “অনেককেই বিগত সময়ে বলতে শুনেছি—‘আওয়ামী লীগ করেছি বলেই পুরস্কার পেয়েছি’। এতে পুরস্কারকে আরও অসম্মানিত করা হয়েছে বলে আমি মনে করি। সেই জায়গায় কোনো দলের হয়ে নয়, বিনা শর্তে, স্বাধীন চিত্তে একুশে পদক পেয়েছি, এটা আমার কাছে পরম শান্তির। ”

দেশের নজরুলসংগীত শিল্পীদের মধ্যে যে ক’জন প্রথিতযশা পেশাদার নজরুলসংগীত শিল্পী রয়েছেন, তাদের অন্যতম একজন ফেরদৌস আরা। সব ধরনের গান গাইলেও নজরুলসংগীত শিল্পী হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন তিনি। চার যুগেরও বেশি সময় ধরে সংগীতচর্চা করছেন এই শিল্পী। উজবেকিস্তানে জাতিসংঘ আয়োজিত লোকসংগীত উৎসবে নজরুলসংগীত গেয়ে পুরস্কৃত হয়েছিলেন তিনি।

ফেরদৌস আরা বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের নিয়মিত শিল্পী। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন অধ্যাপনা, নজরুল ইনস্টিটিউটে নজরুলসংগীতের প্রশিক্ষক, সংগীত অনুষ্ঠান উপস্থাপনা, লেখালেখি, প্লে-ব্যাকের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন। সঠিকভাবে নজরুল এবং উচ্চাঙ্গ সংগীতচর্চার জন্য এ শিল্পী ২০০০ সালে ঢাকার মোহাম্মদপুরের হুমায়ুন রোডে গড়ে তোলেন সংগীত প্রতিষ্ঠান ‘সুরসপ্তক’।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০২৫
এনএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।