ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

উপজেলা ভোট

এমপির ছেলে-ভাইয়ের লড়াই, শঙ্কিত ভোটাররা

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৭ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০২৪
এমপির ছেলে-ভাইয়ের লড়াই, শঙ্কিত ভোটাররা এমপির ছেলে ও ভাই

লালমনিরহাট: সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ও লালমনিরহাট-২ আসনের বর্তমান এমপি নুরুজ্জামান আহমেদের ছেলে রাকিবুজ্জামান  আহমেদ এবং ভাই মাহবুবুজ্জামান আহমেদ লড়ছেন একই পদে।  

প্রভাবশালী পরিবারের একই পদে একাধিক প্রার্থী থাকায় শঙ্কায় আছেন ভোটাররা।

 

জানা গেছে, এমপি নুরুজ্জামান আহমেদ কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তার আপন ছোট ভাই মাহবুবুজ্জামান আহমেদ টানা ১০ বছর ধরে কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। পদ ধরে রাখতে আসন্ন কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন তিনি। তার প্রতীক ঘোড়া। একই পদে লড়ছেন তারই ভাতিজা সাবেক মন্ত্রীর ছেলে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিবুজ্জামান আহমেদ। একই পরিবারের শক্ত দুই প্রতিপক্ষের দ্বন্দ্ব সংঘর্ষের শঙ্কায় আতঙ্কিত ভোটাররা। সপ্তাহ পেরুলে ভোটগ্রহণ, তবুও জমে ওঠেনি ভোটের মাঠ।  

মনোনায়নপত্র জমা দিয়ে পোস্টার আর মাইকিং চালানো হলেও গণসংযোগ তেমনটা নেই এ উপজেলায়। যে উত্তাপের স্বপ্ন ছিল জনগণের মধ্যে, তা হয়ে ওঠেনি এখনো পর্যন্ত। এ উপজেলায় চাচা-ভাতিজা ছাড়াও তাররিকুল ইসলাম তুষার নামে আরও একজন চেয়ারম্যান প্রার্থী আছেন। তবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে চাচা-ভাতিজার মধ্যে।

নুরুজ্জামান আহমেদের ছেলে রাকিবুজ্জামান আহমেদ প্রথম ধাপেই সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ নিয়ে আওয়ামী লীগের জেলা কমিটিতে নাম অন্তর্ভুক্ত করেন। দলীয় কার্যক্রমে তেমন সম্পৃক্ত না থাকলেও মন্ত্রীর ছেলে হিসেবে জেলা কমিটিতে নাম বসিয়েছেন বলে অনেকের দাবি। তবে জনপ্রতিনিধি হতে এবারই প্রথম কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চাচার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন। তার প্রতীক আনারস।

নুরুজ্জামান আহমেদের ছোট ভাই মাহবুবুজ্জামান আহমেদ ছাত্রলীগ, যুবলীগ করেছেন। টানা ২১ বছর তুষভান্ডার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এরপর কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন টানা ১০ বছর ধরে। এবার ঘোড়া প্রতীকে চেয়ারম্যান পদে ভোট করছেন তিনি।  

এক সপ্তাহ পড়ে ভোটগ্রহণ। কিন্তু তবু চাচা-ভাতিজার প্রচার প্রচারণায় নেই ভোটের উত্তাপ। একই বাড়ির নিচতলায় এক প্রার্থী আর ওপর তলায় অপর প্রার্থীর বসবাস। কে কার সঙ্গে দেখা করছেন, ভোটের কাজ কে কার পক্ষে করছেন, সেটা নিয়েও ক্ষোভ চলছে প্রার্থীদ্বয়ের মধ্যে। কে কোন প্রার্থীর হয়ে কাজ করছেন, সে খবর রাখছেন প্রার্থীরা। এ কারণে অনেকটাই বিপাকে ভোটার-কর্মী-সমর্থকরা। একজনের পক্ষে কাজ করলে একই বাড়ির অপর সদস্যের রোষাণলে পড়ার শঙ্কায় পড়ছেন কর্মী-সমর্থকরা। ফলে ওই বাড়ির বিগত দিনের নির্বাচনের অনেক কর্মী নিরবতা পালন করছেন এবার। কিছু অংশ এমপির ছেলে পক্ষে কাজ শুরু করেছেন।  

সম্প্রতি একা ভ্যানে করে নির্বাচনী গণসংযোগ করেন সাবেক মন্ত্রীর ছেলে রাকিবুজ্জামান আহমেদ। এ দৃশ্য সাধারণ মানুষের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। অপরদিকে মাহবুবুজ্জামান আহমেদ নিজে ও তার সন্তানদের নিয়ে পৃথক পৃথক গণসংযোগে নেমে পড়েছেন। শেষ সময়ে দুই প্রার্থীই মাঠে নেমেছেন।  

নির্বাচনী কর্মীরা জানান, বিগত নির্বাচনে মন্ত্রী পরিবার যার দিকে সমর্থন দিত, আমরা তার হয়ে কাজ করেছি। এবার ওই বাড়িতেই দুজন প্রার্থী। তাই অনেকটা চাপে পড়েছেন কর্মী-সমর্থকরা। তবে সময় যত ঘনিয়ে আসছে, কর্মী বাড়ছে এমপির ছেলে রাকিবুজ্জামান আহমেদের দিকে। কারণ হিসেবে কর্মীরা বলছেন, চেয়ারম্যান যেই হোক, তার চেয়ে বড় পদ তো এমপি। তাই এমপির ছেলের হয়ে কাজ করছি। এদিক থেকে কিছুটা পিছিয়ে পড়েছেন চাচা মাহবুবুজ্জামান আহমেদ। তবে বিগত নির্বাচনে মাহবুবুজ্জামান আহমেদের বটগাছ ছিলেন এমপি নুরুজ্জামান আহমেদ। সেই বটগাছ এবার তার বিপক্ষে রয়েছেন। এদিক থেকেও অনেকটাই বিপাকে বর্তমান চেয়ারম্যান মাহবুবুজ্জামান আহমেদ।  

সাধারণ ভোটাররা জানান, একই বাড়িতে দুজন প্রার্থী হওয়ায় বেশ বিপাকে পড়েছেন তারা। একজনের পক্ষে গেলে অপরজনের রোষাণলে পড়ার শঙ্কা থাকে। ভোট শেষে এর রেশ থেকে যাবে। চাচা-ভাতিজা রক্তের টানে কখনো মিশে গেলেও রোষাণলে পড়তে হয় কর্মী-সমর্থকদের। এ কারণে বিগত সময়ের কর্মী-সমর্থকরা বর্তমান নির্বাচনে অনেকটাই নিরব। কারণ, বিগত বছরগুলোতে যত নির্বাচন হয়েছে, সবগুলোতে এ বাড়ি থেকে পরিচালিত হতো। এবারই প্রথম ওই বাড়িতে একই পদে দুজন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছেন।  

তুষভান্ডার বাজারের চা বিক্রেতা বুলু মিয়া বলেন, এখন পর্যন্ত কেউ ভোট চায়নি। চাচা-ভাতিজা প্রার্থী হওয়ায় আমরা বড় বিপাকে। একজনের পাশে দাঁড়ালে অপরজনের রোষাণলে পড়তে হবে। তাই নিরব আছি। ভোটের দিন পরিবেশ ভালো থাকলে ভোট দিয়ে আসব। তবে যা দেখছি, প্রভাবশালী পরিবারে দুই প্রার্থীর মধ্যে বড় ধরনের সংঘাতও হতে পারে। তাই সরকার পরিবেশ সুষ্ঠু করতে না পারলে ভোটার উপস্থিতি অনেক কম হবে।  

কৃষক ছকমল আজিজার ও আনিচ আলী বলেন, চাচা-ভাতিজা ভোটের লড়াই করলেও এখন পর্যন্ত কেউ ভোট চাননি। ওরাই এমপি ওরাই মন্ত্রী ওরাই উপজেলার চেয়ারম্যান। সব কিছু একই পরিবারে। চাচা বা ভাতিজা  যে জিতবে সেই ওই এমপি পরিবারের। তাই কেউ ভোট নিয়ে মাথা ঘামাই না।  

রাকিবুজ্জামান আহমেদ বলেন, আমার বাবা সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান এমপি হলেও আমি ব্যক্তি রাকিবুজ্জামান আহমেদ হিসেবে জনগণের কাছে যাচ্ছি। ভোটের গণসংযোগ করছি। জনগণ ভালো সাড়া দিচ্ছেন। আমার ও আমার পরিবারের প্রতি আস্থা রেখে ভোটাররা সাড়া দিচ্ছেন। জনগণের যে সাড়া পাচ্ছি, তাতে বিজয় আমাদের হবে ইনশাআল্লাহ।  

মাহবুবুজ্জামান আহমেদ বলেন, জনগণের পাশে ছিলাম বলে জনগন বেশ সাড়া দিচ্ছেন। নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে এমপি নুরুজ্জামান আহমেদ এলাকায় অবস্থান করছেন। একই সঙ্গে ভোটার ও জনপ্রতিনিধিদের বাড়িতে ডেকে নিয়ে কাবিখা, টিআরসহ নানান সরকারি সুবিধা দিয়ে ছেলের জন্য ভোট চাচ্ছেন। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে মিটিং করছেন। সেখানে তার ছেলের পক্ষে কাজ করতে বলা হচ্ছে। কিছু কিছু বিষয়ে অভিযোগ দিয়ে ইসির সাড়া পেয়েছি। ইসি এমন আন্তরিক হলে ভোট সুষ্ঠু হবে। ভোট সুষ্ঠু হলে জনগণ আমাকে পুনরায় নির্বাচিত করবেন। ভোট সুষ্ঠু হলে বিজয় আমাদের হবে ইনশাআল্লাহ।  

দ্বিতীয় ধাপে আগামী ২১ মে এ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৫ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০২৪
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।