ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

আত্মহত্যা রোধে কি বলছেন মনোবিজ্ঞানীরা

সাজ্জাদুল কবির, ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২২
আত্মহত্যা রোধে কি বলছেন মনোবিজ্ঞানীরা প্রতীকী ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভ এসে নিজের গুলি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন চিত্র নায়ক রিয়াজের শ্বশুর আবু মহসিন খান। ঘটনাটি দেশব্যাপী আলোড়ন তৈরি করেছে।

মূলত একাকীত্বের কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন।  

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যেও আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। এ ধরনের ঘটনার কারণ ও কিভাবে এটি রোধ করা যায় তা নিয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. একেএম রেজাউল করিম ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান।

অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বাংলানিউজকে বলেন, জীবনের শেষ সময়ের দিকে এসে মানুষ একাকীত্বে ভোগে। কারণ তার যখন প্রভাব-প্রতিপত্তি ছিল তখন সবাই যোগাযোগ করত, কিন্তু অবসর জীবনে মানুষের সামাজিক মর্যাদা কমে আসে। ছেলে-মেয়েরাও পাশে থাকে না। বয়স্ক লোকটার তখন কেয়ার বা আদর স্নেহ পেতে ইচ্ছা করে। যখন না পায় তখন তার মধ্যে হতাশা কাজ করে। এই হতাশা থেকেই আত্মহত্যার দিকে ধাবিত হয়।

 
এসময় মানুষের মনোজগতের পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাবা মা সন্তানকে বড় করার পাশাপাশি তার জন্য জীবন উৎসর্গ করার জন্যও প্রস্তুত থাকে। প্রতিটা মানুষই জীবনের শেষ সময়ে তার অতীতকে মূল্যায়ন করে। যেখানে তার পরিবার, ছেলে মেয়ে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কর্মস্থানসহ সারা জীবনের বিভিন্ন বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। আমি কতটুক অবদান রাখতে পেরেছি, কারও ক্ষতি করেছি কি না, অপকর্ম করেছি কি না এরকম প্রশ্ন আসে। পর্যালোচনায় যখন দেখতে পায়, জীবন সফল হয়নি। তখনই হতাশা কাজ করে।

বর্তমানে এসব থেকে রক্ষার জন্য প্রতিবন্ধকতা নিয়ে তিনি বলেন, জীবনের হতাশার কথা শেয়ার করার মতো কেউ থাকে না। যার কাছে বিষয়গুলো বলবেন সেই দেখা গেল আবার ডিসক্লোজ বা প্রকাশ করে দিল। এ ধরনের অনিরাপত্তায় ভুগে নিজের হতাশার কথা বলতে চায় না তারা।

একাকীত্বের কারণে আত্মহত্যা রোধে কি ধরনের পদক্ষেপ দরকার এমন প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাপক রেজাউল করিম বলেন, অবশ্যই কাউন্সেলিং দরকার। তবে সেটি হতে যথাযথ নিয়ম মেনে। বর্তমানে অনেক কাউন্সেলিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান থাকলেও সেখানে পেশাদারিত্বের সঙ্গে সার্ভিস দেওয়া হচ্ছে না। কোনো ধরনের নিয়ম নীতি মানা হয় না। এসব প্রতিষ্ঠান মনিটরিং করতে হবে। ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিকে বড় ভূমিকা পালন করতে হবে। শুধু কাউন্সেলিং প্রতিষ্ঠান করলে হবে না। মানুষ যেন সেবা নিতে আগ্রহী হয় সেজন্য মানুষদের উৎসাহ দিতে হবে। বিভিন্ন ফোরাম, সম্মেলনের মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।

একাকীত্ব নিয়ে আত্মহত্যাকে সমাজবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে বিশ্লেষণ করেছেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, এ ধরনের আত্মহত্যাকে ইগোয়িস্টিক (জেদ) সুইসাইড বলা হয়। হতাশা, ডিভোর্স বেকারত্ব থেকেও হতে পারে। সামাজিক পরির্তনের কারণে ব্যক্তির অসহায়ত্বের প্রকাশ ঘটে। আমরা মূলত সামাজিক বন্ধন নিয়ে বেঁচে থাকি। মানুষ যখন মনস্তাত্ত্বিকভাবে পারিপার্শ্বিক অবস্থা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তখন সে আত্মহত্যা করে।

আত্মহত্যার কযেকটি ধরণ নিযে ঢা্বির এ অধ্যাপক বলেন, মানুষ অতিমাত্রায় অনুশাসনের মধ্য দিয়ে যায় তাহলেও সে আত্মহত্যা করতে পারে। একজন শ্রমিককে যদি জোরপূর্বক পরিশ্রম করতে বাধ্য করা হয়। অন্যের জন্য জীবন উৎসর্গ করা (জঙ্গিরা) বা হঠাৎ কিছু পেয়ে গেলে তখনও আত্মহত্যা করতে পারে মানুষ।

এসব ঘটনা থেকে প্রতিকার পেতে করণীয় সম্পর্কে অধ্যাপক জিয়া রহমান বলেন, সামাজিক পরিবর্তনের ফলে আমাদের সামাজিক বন্ধনটা কমে গেছে। নগরায়নের ফলে ব্যক্তিকেন্দ্রিক সমাজের দিকে যাচ্ছি আমরা। এই পরিবর্তনটাকে মানিয়ে নিতে গিয়ে অনেকের কাছে জীবনকে তুচ্ছ মনে হয়। সামাজিক বন্ধন বৃদ্ধি ও সচেতনার মাধ্যমে এসব ঘটনা রোধ করা সম্ভব।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০২২
এসকেবি/এমআরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।