ঢাবি: ২০২৫ সালের জানুয়ারির শেষে কিংবা ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সারা দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংসদ নির্বাচনে ঐক্যে পৌঁছেছে ছাত্রসংগঠনগুলো।
বুধবার (৪ ডিসেম্বর) সক্রিয় ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মতবিনিময় সভায় এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছান নেতারা।
এদিন সন্ধ্যা সাতটায় রাজধানীর বাংলামোটরে রূপায়ণ টাওয়ারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কার্যালয়ে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৈঠকে ইসলামী শিবিরসহ অন্যান্য ইসলামী দলগুলো অংশ নিয়েছে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্র ফেডারেশনসহ বামপন্থী আট ছাত্রসংগঠনের মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট সভায় অংশ নেয়নি।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে ছাত্রসংগঠনকে আহ্বান না করায় তারা মতবিনিময় সভা বয়কট করেছেন বলে জানিয়েছেন।
ছাত্রসংসদ নির্বাচনের কথা জানিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আজকের সভায় আমরা একমত হয়েছি, জানুয়ারি অথবা ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ডাকসুসহ সারা দেশে ছাত্র সংসদ শুরু হয়ে যাক। কারণ মার্চ মাসে রোজা।
তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের পূর্বেই ডাকসু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের নির্বাচন ছাত্রপ্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা, গণঅভ্যুত্থানের ছাত্র নেতৃত্বকে লেজিটিমেট করতে…এর আগে ছাত্রসংসদ বা ডাকসু দীর্ঘ সময় বন্ধ ছিল। এরপর ২০১৮ সালে একটি নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন হয়েছে। সেই চর্চা বেরিয়ে এসে জাতীয় নির্বাচনের আগে জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে কিংবা ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ছাত্রসংসদ নির্বাচনে একমত হয়েছে সকল ছাত্রসংগঠন।
অন্যান্য ছাত্র সংগঠন অংশ না নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ড. ইউনূসের সঙ্গে ছাত্রসংগঠনের মিটিং ছিল না। কিন্তু অনেক গণমাধ্যম সেটিকে প্রচার করেছে, ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে ড. ইউনূসের মিটিং। এতে করে সমস্যাটি হয়েছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যাদেরকে ডিবিতে নিয়ে গিয়েছিল এবং যারা বর্তমানে নেতৃত্বে রয়েছে নতুন অরগানোগ্রামে—আমরা সাম্প্রতিক কনসার্নগুলো জানাতে গিয়েছিলাম।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদ বলেন, ছাত্রসংসদ নির্বাচনের ঐক্যমত্য ছাড়াও আরেকটি বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি, আমরা যে সংস্কার চাচ্ছি আগামী ২০ তারিখে সকল ছাত্রসংগঠন সে বিষয়ে একটি করে প্রস্তাব দেবে।
তিনি বলেন, আজকে ত্রিশটি সংগঠনের নেতৃত্ব এসেছে। অনেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আরেকটি প্রোগ্রামে যাওয়ায় উপস্থিত হতে পারেনি।
এদিকে বৈঠকে অংশ না নেওয়ার ব্যাপারে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, তারা ছাত্র প্রতিনিধি পরিচয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে, ছাত্রসংগঠনগুলোর কাউকে রাখেনি। তারাই যেহেতু একাই ছাত্রদের প্রতিনিধি হিসেবে গেছে, আমাদের আর প্রয়োজন কী। আমরা যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে দীর্ঘদিন ছিলাম, সকল ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে আমাদের মিলেমিশে চলতে হয়।
ভবিষ্যতে আলোচনায় যাবেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা আলোচনায় যাব তারাও আমাদের ডাকে আসবে। তবে পারস্পরিক একটি বোঝাপড়া তো থাকতে হবে।
ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ বলেন, আমরা সকল ছাত্র সংগঠনকে নিয়ে জাতীয় ছাত্র কাউন্সিল গঠনের দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু সকল ক্ষেত্রে নিজেদের গোষ্ঠীগত স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে তারা ছাত্র সংগঠনগুলো দূরে ঠেলে দিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টার সাথে বৈঠক বিষয়ে ছাত্রসংগঠনগুলোকে জানানোর প্রয়োজনও তারা বোধ করেনি। আমরা মনে করেছি, সকলের মাঝে ঐক্য টিকিয়ে রাখার মতো পরিপক্ব আচরণ তারা করেনি।
ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামীন মোল্লা বলেন, সভায় না যাওয়া আমাদের একটি প্রতিক্রিয়া। গত মিটিংয়ে আমরা আহ্বান করেছি ছাত্রসংগঠনগুলো প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বসতে চাই। আমাদের ওভারলুক করে ওনারা নিজেরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে চলে গেছেন।
তিনি বলেন, কাউকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া, দূরে রাখা এটি জাতীয় ঐক্যের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায়। এটা দূর করতে হবে।
ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি নূরুল বশর আজিজী বলেন, তারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে প্রোগ্রাম ছাত্রসংগঠনগুলোকে ডাকেনি। বিপ্লবের অংশীদারদের মাইনাস করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়। বিষয়টা আমরা ভালোভাবে নিইনি।
এদিকে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সালমান সিদ্দিকী বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গঠনের সময় বলা হয়েছিল সকল ছাত্রসংগঠনের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কিন্তু সকল ছাত্রসংগঠনকে বাদ দিয়ে তারা এককভাবে অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। ছাত্র সংগঠনগুলোর জাতীয় ঐক্য ভাঙার জন্য তারা দায়ী। তাদের অগণতান্ত্রিক আচরণের কারণে আজকের সভায় মূল ধারার প্রায় সকল ছাত্র সংগঠন বয়কট করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ০০০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০২৪
এফএইচ/এসএএইচ