ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

রাবিতে শোক ও শ্রদ্ধায় শিক্ষক দিবস পালন 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৮
রাবিতে শোক ও শ্রদ্ধায় শিক্ষক দিবস পালন  জোহার সমাধিতে পুস্পস্তবক অর্পণ-ছবি-বাংলানিউজ

রাজশাহী: ঊনসত্তুরের গণঅভ্যুত্থানকালে এই দিনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) রসায়ন বিভাগের শিক্ষক ড. শামসুজ্জোহা পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে নিহত হন। তিনিই এদেশের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী। দিনটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শিক্ষক দিবস’ হিসাবে পালন করা হয়।

দিবসটি উপলক্ষে রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) ভোরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনসহ অন্য ভবনে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। সকাল পৌনে ৭টায় উপাচার্য এম আব্দুস সোবহান, উপ-উপাচার্য আনন্দ কুমার সাহাসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা শহীদ ড. জোহার সমাধি ও জোহা স্মৃতিফলকে পুস্পস্তবক অর্পণ করে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন।

এরপর রসায়ন বিভাগ ও শহীদ শামসুজ্জোহা হলসহ অন্য আবাসিক হল, বিভিন্ন বিভাগ, পেশাজীবী সমিতি ও ইউনিয়ন, অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন প্রভাতফেরিসহ শহীদ জোহার সমাধি ও স্মৃতিফলকে পুস্পস্তবক অর্পণ করে। সকাল সাড়ে ৮টায় অফিসার সমিতি কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা।

দিবসের কর্মসূচিতে আরও রয়েছে বাদ জোহর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে কোরআন খানি ও বিশেষ মোনাজাত, শহীদ শামসুজ্জোহা হলে আলোচনা সভা ও প্রদীপ প্রজ্বলন, রাবি সাংবাদিক সমিতির মুক্ত আলোচনা সভা। এদিন শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত দর্শকদের জন্য খোলা থাকবে।

আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে জোহা স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠিত হবে। এতে স্মারক বক্তা থাকবেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান।

সৈয়দ মুহম্মদ শামসুজ্জোহা ১৯৩৪ সালের ১ মে পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ড. জোহা ১৯৪০ সাল থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত বাঁকুড়া জেলা স্কুলে পড়াশোনা করে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। ১৯৫০ সালে বাঁকুড়া ক্রিশ্চিয়ান কলেজ থেকে তিনি প্রথম শ্রেণিতে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় পাস করেন। ১৯৫০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নে স্নাতকে (সম্মান) ভর্তি হন। ড. জোহা ১৯৫৩ সালে স্নাতক (সম্মান) এবং ১৯৫৪ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি রসায়ন বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন তিনি। পরে নিযুক্ত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর হিসেবে।

১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি আগের রাতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সকাল সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে প্রায় হাজার দুয়েক শিক্ষার্থী সমবেত হয়ে শহরের দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করেন। পুলিশ ও ইপিআর মিছিলে বাধা দেয়, সেনাবাহিনীর জোয়ানরাও মিছিল ঠেকাতে ছাত্রদের দিকে রাইফেল তাক করে।

ড. জোহা তার সহকর্মীদের নিয়ে একবার ছাত্রদের পরিস্থিতির ভয়াবহতা আবার কখনও কর্মরত সেনা কর্মকর্তা ও ম্যাজিস্ট্রেটকে বোঝাচ্ছিলেন। তিনি সামরিক কর্মকর্তাদের বার বার বলছিলেন, ‘প্লিজ ডোন্ট ফায়ার, আমার ছাত্ররা এখনই চলে যাবে ক্যাম্পাসের দিকে। ’ 

ড. জোহা তার সহকর্মীদের নিয়ে ছাত্রদের বুঝিয়ে গেটের ভেতরে পাঠাতে সক্ষম হলেও তখনই পাওয়া যায় গুলির শব্দ। মুহূর্তের মধ্যে আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়ে ছাত্র-শিক্ষকদেরে মধ্যে। দুপুর ১২টার দিকে ক্যাম্পাসে খবর আসে ড. জোহাকে প্রথমে কাছ থেকে গুলি ও পরে বেয়নেট দিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করা হয়। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়।  

প্রচুর রক্তক্ষরণের কারণে অপারেশন থিয়েটারে ইন্তেকাল করেন ড. জোহা। তার সেই রক্তস্নাত পথ ধরে গণআন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে পরিণত হয়।  

২০০৮ সালে ড. জোহাকে মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার দিয়ে সম্মান জানায় বাংলাদেশ সরকার। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের একটি হলের নামকরণ করা হয় তার নামানুসারে। সেই থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রতি বছর ১৮ ফেব্রুয়ারি দিনটি ‘শিক্ষক দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৮
এসএস/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।