ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

নজিরবিহীন কাণ্ডের পর সিলেট চেম্বারের প্রেসিডিয়াম গঠন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০২১
নজিরবিহীন কাণ্ডের পর সিলেট চেম্বারের প্রেসিডিয়াম গঠন

সিলেট: এবার স্মরণকালের নজিরবিহীন ঘটনা ঘটলো সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ঘিরে। নির্বাচন পরবর্তী প্রেসিডিয়াম কমিটি গঠন নিয়ে ৮ ঘণ্টায় সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেননি দুই প্যানেল থেকে নির্বাচিত পরিচালকরা।

এ নিয়ে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছিল দুই পক্ষে।  

বিশেষ করে দুটি পক্ষকে নেপথ্যে থেকে শক্তি যোগানো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নেয়। সন্ধ্যার পর থেকে দু’পক্ষের লোকজন চেম্বার ভবনের বাইরের বিভিন্ন সড়কে সশস্ত্র মহড়া দেয়। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে নিয়ন্ত্রণে পুলিশ তলব করে চেম্বারের নির্বাচন কমিশন।  

অবশেষে সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) রাত ১১টার দিকে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে সক্ষম হয় চেম্বারের নির্বাচনী বোর্ড। উদ্বেগ, উৎকন্ঠার মধ্যেও গঠনতন্ত্র না মানার ইস্যুতে সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ থেকে সভাপতি পদে আব্দুর রহমান জামিল ও সিনিয়র সহ সভাপতি পদে হুমায়ন আহমদের প্রার্থীতা বাতিল করা হয়। পক্ষান্তরে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ থেকে বিজয়ী তাহমিন আহমদেকে সভাপতি, ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদকে সিনিয়র সহ সভাপতি ও সহ সভাপতি আতিক হোসেনের নাম ঘোষণা করা হয়। সিলেট চেম্বারের প্রধান নির্বাচন কমিশনার আব্দুল জব্বার জলিল এ ঘোষণা দেন।

শীর্ষ পদে আসার জন্য দুই প্যানেলের প্রার্থীদের নিয়ে এদিন বিকেল ৩টায় চেম্বার বিল্ডিয়ে সমঝোতা বৈঠকে বসে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। কিন্তু শীর্ষ পদে আসীন হতে উভয় প্যানেল কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি হননি।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, সিলেট চেম্বারের নির্বাচনে প্রচারণা থেকে শুরু করে প্রেসিডিয়াম গঠন পর্যন্ত সিলেট আওয়ামী লীগের শীর্ষ দুই নেতা সঙ্গে থেকে উভয় প্যানেলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের পক্ষে ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। আর ব্যবসায়ী পরিষদের পক্ষে অবস্থান জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খানসহ একাধিক নেতার।

প্রেসিডিয়াম গঠনে বৈঠক চলাকালে সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদের পক্ষে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা সিলেট চেম্বার বিল্ডিংয়ের আশপাশের সড়কে সশস্ত্র অবস্থান নেন। কমিটি ঘোষণার পর তারা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। এ সময় উপ পুলিশ কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলীর নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয় সিলেট চেম্বার ভবন ও আশপাশের এলাকায়।  

পরে নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। এ নিয়ে থমথমে অবস্থান বিরাজ করছে সিলেটে।  

এদিকে সংবিধান অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রেসিডিয়াম গঠনের সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা। এ সময় পেরিয়ে গেলে নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিতে পারে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেলের  প্রার্থীদের সংবিধানের দোহাই দিয়ে বাদ দেওয়ার অভিযোগ নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে। নির্বাচন কমিশনের হটকারী সিদ্ধান্ত বিরুদ্ধাচারণ করে ক্ষোভ ঝাড়েন সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদের পক্ষে অবস্থান নেওয়া তেলিহাওর গ্রুপের নেতাকর্মীরা।  

এ বিষয়ে চেম্বারের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান আব্দুল জব্বার জলিল বলেন, ব্যবসায়ী পরিষদের নেতারা একক নয়, প্যানেলে প্রার্থী হয়েছিলেন। কিন্তু চেম্বারের নিয়মানুযায়ী গ্রুপ, এসোসিয়েট, অর্ডিনারি থেকে পদগুলোতে প্রার্থী দেওয়া। সেক্ষেত্রে ব্যবসায়ী পরিষদের দু’জন প্রার্থী অর্ডিনারি প্যানেল থেকে পরিচালক নির্বাচিত হয়েছেন। যে কারণে শীর্ষ পদে তাদের প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে।  
 
এদিকে সিলেট চেম্বারের ইতিহাসে এই প্রথম এমন নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সাবেক ব্যবসায়ী নেতারা হাজি দেলোয়ার আহমদ, ফারুক আহমদ মিসবাহ, খন্দকার শিপার আহমদসহ আরো অনেকে।  

তাদের মতে, বিগত দিনে চেম্বারের নির্বাচনের পর সর্বোচ্চ এক ঘণ্টার বৈঠকে প্রেসিডিয়াম গঠন করা হয়েছে। কিন্তু এবারই প্রথম চেম্বারের শীর্ষ পদ ঘিরে উভয় প্যানেল সমঝোতায় পৌঁছাতে না পারা।

ব্যবসায়ী নেতাদের অনেকে জানান, চেম্বারের নির্বাচনে রাজনীতি ঢুকে যাওয়াতে ঐতিহ্যবাহী এই সংগঠনের আগের পরিবেশ বজায় থাকছে কিনা, এ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন।  

উদ্ভূত পরিস্থিতি কমিটি ঘোষণার কারণে সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদের প্যানেল ভুক্তরা নগরের একটি অভিজাত হোটেলে বৈঠকে বসেন এবং মঙ্গলবার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করবেন তারা।  

শনিবার (১১ ডিসেম্বর) সিলেট চেম্বার অব কমার্সের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। সিলেট সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ ও সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ প্যানেল থেকে ২২ পদের বিপরীতে ৪৪ জন প্রার্থী নির্বাচন করেন। এরমধ্যে ৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। ফলে ভোটের মাঠে ৪০ প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তাদের মধ্য থেকে সমান সংখ্যক ১১ জন করে প্রার্থী বিজয়ী হন। ফলে কোনো প্যানেল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারায় সমঝোতায় গড়ায়। কিন্তা তাতেও লাভ না হওয়াতে সংবিধানের আশ্রয় নেয় নির্বাচনী বোর্ড। তবে, শেষ পর্যন্ত চেম্বারের কমিটি গঠন আদালতে গড়াতে পারে, এমনটি ধারণা করছেন বিরোধী ব্যবসায়ী মহল।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০২১
এনইউ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।