ঢাকা: হাসনারা বেগম। গ্রামের বধু।
স্বল্প পুঁজি দিয়ে নিজ উদ্যোগে শুরু করলেন বাড়ির আঙ্গিনায় হাঁস-মুরগি পালন। হাসনারা আরো বড় কিছু করতে চাইলেন। প্রতিবেশীদের কাছ থেকে শুনে ইসলামী ব্যাংকের পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পের সদস্য হন। শুরু হলো দিন বদলের পালা। ব্যাংক থেকে পর্যায়ক্রমে বিনিয়োগ নিয়ে হাসনারা বেগম শুরু করেন গাভী পালন, সবজি চাষ এবং ট্রলি ভাড়ার ব্যবসা।

হাসনারা বেগমের মত বাংলাদেশের ৬৪ জেলার সাড়ে ১৮ হাজার গ্রামের ৯ লক্ষাধিক সদস্যের জীবনে এমনই পরিবর্তনের আশীর্বাদ বয়ে এনেছে ইসলামী ব্যাংকের এই পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প, যা শুরু হয়েছিলো ১৯৯৫ থেকে। কয়েক বছর আগেও গ্রামের মানুষের সহযাত্রী ছিলো দারিদ্র। আর অসহায়তার সবচেয়ে বড় শিকার ছিলো গ্রামীণ নারী ও শিশুরা।
ছেলেমেয়েরা দরিদ্র বাবা মায়েদের সাথে কৃষিকাজ বা অন্যান্য গৃহস্থালি কাজে সহায়তা করত। মহিলারা শত কষ্ট সয়েও উপার্জনের অংশ নিতে পারতো না। সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রচেষ্টার ফলে বিগত কয়েক দশকে বদলে যেতে শুরু করেছে এই চিত্র।
নারীর ক্ষমতায়নে ইসলামী ব্যাংকের পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পের অবদান এখন প্রায় সবখানে পরিলক্ষিত হচ্ছে। পল্লীর কর্মহীন ও দিশাহীন লক্ষ লক্ষ মানুষকে ব্যাংকিং কার্যক্রমের আওতায় এনে আর্থিক অন্তুর্ভুক্তিতে ভূমিকা রাখছে ইসলামী ব্যাংক। গ্রামের কর্মহীন দরিদ্র মানুষের দিনবদলের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে ইসলামী ব্যাংকের এ উন্নয়ন প্রকল্প। এপ্রিল ২০১৫ পর্যন্ত এ ব্যাংকের আরডিএস বিনিয়োগের পরিমাণ ১৮২০ কোটি টাকা।

এসব বিনিয়োগের অর্থ নিয়ে তারা কৃষি কাজ, হাঁস-মুরগী পালন, ক্ষুদ্র ব্যবসা, কুটির শিল্পসহ বিভিন্ন কাজ শুরু করেন। ব্যাংকের কর্মীরাও পরামর্শ দেন তাদের উন্নয়নে। সমন্বয় করেন তাদের উদ্যোগ ও ব্যাংকের ক্ষুদ্র বিনিয়োগ কর্মসূচির মধ্যে। তাদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, প্রাথমিক স্বাস্থ্য, ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার গুরুত্ব, সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ার উপকারিতা ও সামাজিক জীবনে পারষ্পরিক সুসম্পর্কের উপর উৎসাহিত করা।
ইসলামী ব্যাংকের পল্লী উন্নয়ন কর্মসূচি অসহায় মানুষের এক বন্ধু হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ব্যাংক এসব কেন্দ্রের সদস্যদের মধ্যে স্যানিটারি ল্যাট্রিন ও টিউবওয়েল প্রদান, বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা, ছেলেমেয়েদের বিবাহ অনুষ্ঠানে সহযোগিতা, বেকারদের কর্মমুখী প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণে সহযোগিতা করে তাদের স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করে।

ব্যাংক পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পের গ্রাহকদের শুধু বিনিয়োগই প্রদান করেনা তাদের বিনিয়োগ কিভাবে সফল হবে সে বিষয়েও প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। প্রকল্পের সদস্যদের মেধাবী ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার জন্য বৃত্তি প্রদান, প্রি-প্রাইমারি শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে।
পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পের গ্রাহকের অনেকেই সফলতার ধারাবাহিকতায় লক্ষাধিক টাকার বিনিয়োগ গ্রহণ করেছেন। অনেকে ক্ষুদ্র বিনিয়োগ গ্রাহক থেকে এসএমই গ্রাহকে উন্নীত হয়েছেন। হয়েছেন স্বাবলম্বী। কর্মসংস্থানের সংকট কেটেছে কর্মহীন মানুষের। এভাবে পরিবর্তিত হতে শুরু করেছে পল্লী বাংলার সেই অন্ধকার দিকগুলো।
এসব পরিবারে এখন সবাই বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকেন। ছেলেমেয়েরা যায় স্কুল-কলেজে। বাড়ীর আঙ্গিনায় শোভা পায় শাক-সবজি বা ফুলের বাগান। ইসলামী ব্যাংকের সহযোগিতা নিয়ে সেইসব পরিবার থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার। অনেকেরই ভাঙ্গা টিনের চালের জায়গায় এখন উঠেছে পাকা দালান।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৮ ঘণ্টা, মে ২১, ২০১৫
এনএস/