ঢাকা, সোমবার, ১০ চৈত্র ১৪৩১, ২৪ মার্চ ২০২৫, ২৩ রমজান ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খাবার বিতরণ কর্মসূচিসহ একনেকে উঠছে ১৫ প্রকল্প

এস এম এ কালাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩১১ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০২৫
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খাবার বিতরণ কর্মসূচিসহ একনেকে উঠছে ১৫ প্রকল্প

ঢাকা: শিশুদের পুষ্টি নিশ্চিত এবং বিদ্যালয়ে উপস্থিতি বাড়াতে সরকার একটি বিশাল উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। যার লক্ষ্য  "সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ফিডিং কর্মসূচি" নামে এই প্রকল্পের আওতায় দেশের ১৯,৪১৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা পুষ্টিকর খাবার পাবে।

এই প্রকল্পটি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় দ্বারা প্রস্তাবিত এবং এর উদ্দেশ্য হচ্ছে শিশুদের মধ্যে পুষ্টির অভাব দূর, বিদ্যালয়ে ভর্তি ও উপস্থিতি বাড়ানো এবং ঝরে পড়ার হার কমানো। প্রস্তাবিত এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য প্রায় ৫,৪৫২.৪২ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণরূপে সরকারের পক্ষ থেকে বাস্তবায়িত হবে।

প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন পরিচালক মিরাজুল ইসলাম উকিল এ বিষয়ে বলেন, "এই প্রকল্পের মাধ্যমে পুষ্টির অভাব দূর করা হলে, শিক্ষার্থীদের শারীরিক সুস্থতা এবং মনোযোগ বৃদ্ধি পাবে, যা তাদের শিক্ষার মান বাড়াবে। পুষ্টিকর খাবারের মাধ্যমে একটি শিশুর শারীরিক এবং মানসিক উন্নতি হবে, যা তার শিক্ষা শেষ করা সহজ করবে। "

খাবারের তালিকা এবং বিতরণ পদ্ধতি

স্কুল ফিডিং প্রোগ্রামটি স্কুল চলাকালীন সপ্তাহে পাঁচ দিন পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করবে। প্রতিটি শিশুকে সশক্ত বিস্কুট, বান, কলা, ডিম এবং আল্ট্রা-হাই টেম্পারেচার (ইউএইচটি) দুধ দেওয়া হবে, যা তাদের দৈহিক এবং মস্তিষ্কের উন্নতির জন্য অত্যন্ত জরুরি।

এই প্রোগ্রামটি ২০২৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে এবং এটি প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাস্তবায়িত হবে। সরকার আশা করছে যে, এই প্রোগ্রামটি শুধুমাত্র পুষ্টির অভাব দূর করবে না, বরং ছাত্রদের মনোযোগ, উপস্থিতি এবং শিক্ষা অর্জনেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

শিক্ষার মান উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা

স্কুল ফিডিং প্রোগ্রামটি শুধু শিশুদের পুষ্টি নিশ্চিত করবে না, বরং দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এবং সমাজে শিক্ষার মান উন্নয়নে একটি বড় ভূমিকা রাখবে। অভুক্ত বা পুষ্টির অভাবে শিশুদের মনোযোগ কমে যায়, যার কারণে তাদের শিক্ষার মানে বিরূপ প্রভাব পড়ে। পুষ্টিকর খাবার প্রদানের মাধ্যমে, শিক্ষার্থীরা ক্লাসে আরও ভালো মনোযোগী হবে এবং তাদের পারফরম্যান্স বৃদ্ধি পাবে।

সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে সাহায্য

শুধু শিক্ষা নয়, এই প্রকল্পের মাধ্যমে শিশুদের স্বাস্থ্যের উন্নত হবে, যা ভবিষ্যতে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে সহায়ক হবে। বিশেষ করে দরিদ্র এলাকায় শিক্ষার্থীদের পুষ্টির অভাব বেশ প্রকট, ফলে অনেকেই স্কুলে যেতে চায় না বা পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারে না। এই উদ্যোগের মাধ্যমে সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে, সেই অবস্থা পরিবর্তন করা এবং আরও শিশুদের শিক্ষার প্রতি আগ্রহ তৈরি করা।

আগের প্রোগ্রামের পরিপূরক

বাংলাদেশে স্কুল ফিডিং প্রোগ্রামের ইতিহাস দীর্ঘ। ২০০১ সালে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (WFP) সমর্থিত এই প্রোগ্রামটি শুরু হয়েছিল এবং বিভিন্ন পর্যায়ে এটি চালু ছিল। সর্বশেষ, ২০১০ থেকে ২০২২ পর্যন্ত "স্কুল ফিডিং প্রোগ্রাম ইন পোভারটি-স্ট্রিকেন এরিয়াজ (থার্ড অ্যামেন্ডমেন্ট)" নামে একটি প্রকল্প চলছিল। ২০২১ সালে সরকার ৪৯২টি উপজেলায় এই প্রকল্পের আওতায় পুষ্টিকর খাবার বিতরণের অঙ্গীকার করেছিল। বর্তমানে, এই নতুন উদ্যোগটি আগের কার্যক্রমকে আরও বিস্তৃত এবং শক্তিশালী করবে।

একনেকে উঠছে ১৫ প্রকল্প

রোববার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় মোট ১৫টি প্রকল্প তোলা হচ্ছে, যার মোট মূল্য ২১,২৯০.৮৬ কোটি টাকা। সভাটি প্রধান উপদেষ্টা এবং একনেক-এর চেয়ারপারসন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে পরিকল্পনা কমিশন চত্বরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হবে। সভায় একনেক সদস্য, সচিব এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।

সভায় উপস্থাপিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের পায়রা সমুদ্র বন্দরের প্রথম টার্মিনাল এবং আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণের প্রকল্প।  

এছাড়াও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে ও টেক্সিওয়ের শক্তি বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পটি আলোচনায় রয়েছে।  

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের তিনটি প্রকল্পের মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগরীর কালুরঘাট এলাকায় পয়ঃশোধনাগার নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ এবং সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার প্রকল্পের সংশোধিত ফেজ-৩ রয়েছে।

এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার নির্মাণ প্রকল্প, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল কানেকটিভিটি শক্তিশালীকরণের সুইচিং ও ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রকল্প এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের পঞ্চবটি হতে মুক্তারপুর সেতু পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ ও দোতলা রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পও আলোচনায় থাকবে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং নার্সিং কলেজ স্থাপন প্রকল্প, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঢাকা শহর সন্নিকটবর্তী এলাকায় ১০টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্প, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ফিডিং কর্মসূচি প্রকল্প এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ক্ষতিগ্রস্ত খাদ্য গুদাম ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক অবকাঠামোর মেরামত প্রকল্পটি বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে।

এর পাশাপাশি, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটারিং প্রজেক্ট এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দুধ ও মাংস উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রুভেন বুল তৈরি প্রকল্পও সভায় উপস্থাপিত হবে।

এছাড়া, কুষ্টিয়া জেলায় নতুন সার্কিট হাউজ নির্মাণ, চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোড এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল স্থাপনের প্রস্তাবগুলোও অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।

সভায় পরিকল্পনা উপদেষ্টা কর্তৃক ইতোমধ্যে অনুমোদিত ১৩টি প্রকল্প সর্ম্পকে একনেক সদস্যদের অবহিত করা হবে। সেগুলো হলো: ১. বানৌজা শের-ই-বাংলা পটুয়াখালী স্থাপন (২য় সংশোধিত) প্রকল্প, নরসিংদী জেলা কারাগার নির্মাণ (১ম সংশোধিত) প্রকল্প, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক, নর্দমা, ফুটপাত নির্মাণ ও উন্নয়নসহ সড়ক নিরাপত্তা (২য় সংশোধিত) প্রকল্প, ইসিবি চত্বর থেকে মিরপুর পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন এবং কালশী মোড়ে ফ্লাইওভার নির্মাণ (২য় সংশোধিত) প্রকল্প, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণাঙ্গ শিশু কার্ডিওলজি ও শিশু কার্ডিয়াক সার্জারি ইউনিট স্থাপন (১ম সংশোধিত) প্রকল্প, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের বিদ্যমান গামা সোর্স শক্তিশালীকরণ (২য় সংশোধিত) প্রকল্প ৭. ভ্রাম্যমাণ বিজ্ঞান প্রদর্শনী-বিসিএসআইআর (২য় সংশোধিত) প্রকল্প, সিলেট টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট স্থাপন-(২য় সংশোধিত) প্রকল্প, কৃষি আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতি উন্নতকরণ (কম্পোনেন্ট-সি) (২য় সংশোধিত) প্রকল্প, বান্দরবান জেলার লামা উপজেলায় লামাবাজার রক্ষাকল্পে মাতামুহুরী নদীতে প্রতিরক্ষা কাজ বাস্তবায়ন প্রকল্প, কক্সবাজার জেলায় সবুজ বেষ্টনী সৃজন, প্রতিবেশ পুনরুদ্ধার এবং ইকো-ট্যুরিজম উন্নয়ন প্রকল্প (২য় সংশোধিত) প্রকল্প, চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলমগ্নতা/জলাবদ্ধতা নিরসন ও নিষ্কাশন উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্প (১ম সংশোধিত) প্রকল্প ১৩. Feasibility Study on Livestock service Transformation (LST) প্রকল্প।

বাংলাদেশ সময়: ০৩০৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৩,
২০২৫
এসএমএকে/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।