ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১, ১৩ মার্চ ২০২৫, ১২ রমজান ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

আপনার ইফতারের খেজুর কোত্থেকে আসে?

নিউজ ডেস্ক  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩২৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০২৫
আপনার ইফতারের খেজুর কোত্থেকে আসে? মিসরের কায়রোতে একটি বাজারে বিক্রি হচ্ছে খেজুর

চলছে পবিত্র রমজান মাস। এই মাসে প্রতিদিন সূর্যাস্তে মাগরিবের আজানের সঙ্গে সঙ্গে অনেক মুসলমান তাদের রোজা ভাঙেন একটি মিষ্টি, বাদামী শুকনো ফল দিয়ে, যেটি শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে বেশ সমাদৃত।

রমজানের ২৯ বা ৩০ দিনে সক্ষম মুসলমানেরা ভোর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খাদ্য, পানীয়, ধূমপান ও যৌন সম্পর্ক থেকে বিরত থাকেন। সারা দিন পানাহার থেকে বিরত থেকে সন্ধ্যায় ইফতারে মুসলমানদের কাছে বেশ প্রিয় হলো খেজুর।

খেজুর ও পানি দিয়ে ইফতার করা নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর শিক্ষা অনুযায়ী একটি সুন্নত এবং এর পুষ্টিগুণ কুরআনেও উল্লেখ করা হয়েছে।

খেজুরের নানা জাত
 
তাজা বা শুকনো খেজুর গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন, খনিজ ও ফাইবার সমৃদ্ধ। এ ছাড়া, এতে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্টও রয়েছে। খেজুরে প্রাকৃতিক চিনি ফ্রুক্টোজের পরিমাণ বেশি থাকায় এটি দ্রুত শক্তি যোগায়, বিশেষ করে দীর্ঘক্ষণ রোজা রাখার পর।

খেজুরের রয়েছে নানা ধরন বা জাত। প্রতিটিরই স্বাদ, আকার, বাইরের আবরণ ভিন্ন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- মেডজুল, মাবরুম, আজওয়া, ডেগলেট নূর, পিয়ারম ইত্যাদি। এর বাইরেও খেজুরের জনপ্রিয় নানা জাত রয়েছে।  

মেডজুল জাতের খেজুর বেশ বড় আকারের এবং গভীর মিষ্টি স্বাদের। এর রং অ্যাম্বার থেকে গাঢ় বাদামি পর্যন্ত হতে পারে। নরম ও রসালো গঠনের জন্য এই খেজুর বিশেষভাবে জনপ্রিয়।

মাবরুম অন্যান্য জাতের খেজুরের তুলনায় কম মিষ্টি। এটি দেখতে লম্বাটে আকৃতির এবং লালচে-বাদামি রঙের। এর গঠন সামান্য শক্ত ও চিবনযোগ্য। মুখে নিলে ধীরে ধীরে মিষ্টি স্বাদ ছাড়ে।

নরম, মাংসল ও কিছুটা রসালো গঠনের সঙ্গে গভীর মিষ্টি স্বাদের খেজুর আজওয়া। এটি মুসলমানদের কাছে বিশেষভাবে মূল্যবান। কারণ এটি সৌদি আরবের মদিনায় জন্মে। ইসলামিক ঐতিহ্যে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে এই খেজুর।  

ডেগলেট নূর মাঝারি আকারের, হালকা সোনালি-বাদামি রঙের এবং তুলনামূলক কম মিষ্টি জাতের খেজুর। এটি শুকনো ও সামান্য দৃঢ় গঠনের হওয়ায় রান্না করা ও সেঁকার জন্য বেশ উপযুক্ত।

পিয়ারম গাঢ় বাদামি রঙ, দারুণ স্বাদ ও সামান্য শুকনো গঠনবিশিষ্ট খেজুর। এর অনন্য ও সূক্ষ্ম স্বাদ একে বিশেষভাবে জনপ্রিয় করেছে।  

হাজার হাজার বছর ধরে খেজুর চাষ করা হচ্ছে। খেজুর গাছ পুরুষ বা নারী হতে পারে, তবে শুধুমাত্র নারী গাছেই ফল ধরে।

ঠিকঠাক যত্ন নিলে একটি খেজুর গাছ ১০০ বছরেরও বেশি সময় বেঁচে থাকতে পারে। আর পরিপক্ব একটি খেজুর গাছে প্রতি মৌসুমে ১০০ কেজির বেশি পর্যন্ত খেজুর ধরতে পারে, সংখ্যায় যা প্রায় ১০ হাজার খেজুরের সমান। আজওয়া খেজুর হলো বিশ্বের সবচেয়ে দামি খেজুর।

কোন কোন দেশ সবচেয়ে বেশি খেজুর উৎপাদন করে?

খাদ্য ও কৃষি তথ্যভান্ডার ট্রিজের ২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী প্রায় এক কোটি টন খেজুর উৎপাদিত হয়।

খেজুর গাছ সাধারণত দীর্ঘ, গরম আবহাওয়ার দেশগুলোতে বেশ ভালোভাবে বেড়ে ওঠে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য ও আশপাশের অঞ্চলে।

ট্রিজের তথ্য অনুযায়ী, মিসর বিশ্বের শীর্ষ খেজুর উৎপাদনকারী দেশ, যা বিশ্বব্যাপী মোট খেজুরের প্রায় ১৮ শতাংশ উৎপাদন করে।

এর পরপরই স্থান সৌদি আরবের। দেশটি প্রায় ১৭ শতাংশ খেজুর উৎপাদন করে। সৌদি আরব খেজুর উৎপাদনের দিক দিয়ে বিশ্বে দ্বিতীয়। ১৩ শতাংশ উৎপাদন নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে আলজেরিয়া।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে খেজুর উৎপাদনে শীর্ষে ছিল মিসর। দেশটি ১ দশমিক ৮৭ মিলিয়ন টন খেজুর উৎপাদন করে।

আর দ্বিতীয় স্থানে ছিল সৌদি আরব, দেশটি ওই বছর ১ দশমিক ৩২ মিলিয়ন টন খেজুর উৎপাদন করে। আর ১ দশমিক ৩২ মিলিয়ন টন খেজুর উৎপাদন করে আলজেরিয়া।  

এরপর ইরান ১ দশমিক ০২, ইরাক শূন্য দশমিক ৬৪, পাকিস্তান শূন্য দশমিক ৫০, সুদান শূন্য দশমিক ৪৪ ও ওমান শূন্য দশমিক ৩৯ মিলিয়ন টন খেজুর উৎপাদন করে।

বয়কট ইসরায়েল

ট্রিজের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েল বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ খেজুর রপ্তানিকারক দেশ।  ২০২২ সালে দেশটি ৩৩০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের মেডজুল খেজুর বিদেশে রপ্তানি করে। তবে গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে বহু ফিলিস্তিনিকে হত্যা করায় বিভিন্ন সংস্থা ও গোষ্ঠী ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের আহ্বান জানিয়েছে।

ফিলিস্তিনি নেতৃত্বাধীন বয়কট, ডাইভেস্টমেন্ট ও স্যাংশনস (বিডিএস) আন্দোলন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক সমর্থন প্রতিহত করতে কাজ করছে।  তারা বলছে, ইসরায়েল বর্ণবাদী শাসন ও উপনিবেশবাদী নীতির মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের অধিকার হরণ করছে।

বিডিএস আন্দোলন ভোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, তারা যেন খেজুরের প্যাকেটে থাকা লেবেল ভালোভাবে যাচাই করে এবং ইসরায়েল বা এর দখল করা পশ্চিম তীরের অবৈধ বসতিতে উৎপাদিত বা প্যাকেট করা খেজুর না কেনেন।

প্ল্যাটফর্মটি বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ডের খেজুর এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, হাদিক্লাইম, এর ব্র্যান্ড কিং সলোমন, জর্ডান রিভার, জর্ডান রিভার বায়ো-টপ এবং মেহাদ্রিন, এমটেক্স, এডম, কারমেল অ্যাগ্রেক্সকো ও আরাভা।

আল জাজিরা অবলম্বনে

বাংলাদেশ সময়: ০২৫২ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০২৫
আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।