ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

টিসিবির পণ্যের জন্য দীর্ঘ সারি, খালি হাতে ফেরেন অনেকেই

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০২৪
টিসিবির পণ্যের জন্য দীর্ঘ সারি, খালি হাতে ফেরেন অনেকেই

ঢাকা: খোলা ট্রাকে টিসিবির পণ্য বিক্রি হবে। আসবে চাল, ডাল ও তেলবোঝাই ট্রাক।

সেই অপেক্ষায় সকাল থেকে মানুষের দীর্ঘ সারি। কেউ বেসরকারি চাকরিজীবী, কেউ গৃহিণী, কেউবা কর্মজীবী নারী। আছেন নিম্নআয়ের নানা পেশাজীবীও।

রোববার (১০ নভেম্বর) মিরপুরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে এমন চিত্রেরই দেখা মেলে। টিসিবির ট্রাকে ৪৭০ টাকায় পাওয়া যায় পাঁচ কেজি চাল, দুই কেজি ডাল ও দুই লিটার তেল। বাইরে থেকে কিনতে গেলে খবচ হয় প্রায় ৭৫০ টাকা

নিম্ন আয়ের মানুষকে বাজারের চেয়ে কম দামে পণ্য দিতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে সম্প্রতি ট্রাকে করে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম শুরু করে সরকার। গত ২৪ অক্টোবর থেকে ঢাকা মহানগরের ৫০টি ও চট্টগ্রাম মহানগরের ২০টি স্থানে এ কার্যক্রম চলছে।  

ঘড়িতে তখন সময় সকাল ১০টা। মিরপুর-১০ কাজীপাড়া স্টেশনের পাশে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন আছিয়া খাতুন। বিভিন্ন মেসে রান্নার কাজ করেন। বয়স ষাটের ঘরে। যা বেতন পান, তা দিয়ে নিজের বাসাভাড়া, নিজের ও স্বামীর চিকিৎসার খরচ চালাতেই হিমশিম থেতে হয়।  

আছিয়া আসেন টিসিবির পণ্য নিতে। টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য কিনলে তার ৪০০ টাকার মতো সাশ্রয় হবে। কিন্তু গাড়ি আসবে কি না, এলেও পাবেন কি না, সেই উত্তর তার জানা নেই। দীর্ঘ সারি। সামনে যারা ছিলেন, তারা চাল, ডাল ও তেল নিয়ে গেলে তিনি পাবেন কি না, সেই শঙ্কার ছাপ চোখেমুখে।

কম বেতন, সংসারের বাড়তি খরচ। নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সংসার সামাল দেওয়া-ই অনেকের কাছে বেশ কষ্টের। তাই  টিসিবির পণ্যে স্বস্তি। অনেকে অফিস ছুটি নিয়ে সারিতে অপেক্ষা করছিলেন। রাত্রিকালীন দায়িত্ব সেরে সারা রাত না ঘুমিয়েও অনেকে ছিলেন টিসিবির পণ্যের অপেক্ষায়।

মিজানুর রহমান। পেশায় নৈশপ্রহরী। একটি নিরাপত্তা কোম্পানিতে চাকরি করেন। সকাল ৬টা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে টিসিবির পণ্য নিতে সকাল ৮টা থেকে কাজীপাড়ায় টিসিবির লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সাড়ে ১০টা বেজে গেলেও ট্রাক আসছিল না।

মিজানুর রহমান বলেন, দুই ছেলে-মেয়েসহ সংসারে আমরা চারজন। সাড়ে নয় হাজার টাকা বেতন। টিনশেডের একটি বাসার ভাড়ায় চলে যায় চার হাজার টাকা। সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে খাওয়া-দাওয়া, নিজের যাতায়াত ও ছেলে-মেয়ের স্কুল খরচ চালাতে হয়। এই বাজারে কেমন আছি, আর কেন টিসিবির লাইনে (সারি) দাঁড়িয়ে আছি তাহলে বুঝুন।

শেওড়াপাড়াতেও টিসিবির পণ্যের অপেক্ষায় থাকা লোকেদের দীর্ঘ সারির দেখা মেলে। সেখানে কথা হয় বেসরকারি কোম্পানির অফিস সহায়ক জানু মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, বেতনে চলে না। রোজই জিনিসপত্রের দাম বাড়ে। এখন আর মানুষের কাছে ধার-দেনাও পাওয়া যায় না। আগে চাল, ডাল আর সবজির মধ্যেই খাওয়া সীমাবদ্ধ রেখেছিলাম। এখন সবজির দাম বেড়ে গেছে। সবজির কাছেও আর যাওয়া যায় না। সংসার চালাতে খেই হারিয়ে ফেলছি। নিরুপায় হয়ে টিসিবির লাইনে এসেছি।

স্বামী মিরপুরের দোকানি, নিজে গৃহিণী, রাবেয়া খাতুনও শেওড়াপাড়ায় টিসিবির সারিতে ছিলেন অপেক্ষায়। তিনি বলেন, ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না। দোকানে যে আয় হয়, জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে খরচ হচ্ছে তার চেয়ে বেশি। ছেলে-মেয়েকে নিয়ে তো খেয়ে-পরে বেঁচে থাকতে হবে! স্বামী টিবিসির চাল, ডাল ও তেল নিতে আসতে নিষেধ করেন। কিন্তু তার কষ্ট দেখে ভালো লাগে না, টিসিবির লাইনে আসি। পেলে ৪০০ টাকার মতো বাঁচবে, স্বামীর কষ্ট কমবে।

শেওড়াপাড়ায় মেট্রো স্টেশনের নিচে সারিটি ছিল বেশ দীর্ঘ। ২৫০ থেকে ৩০০ মানুষ সকাল থেকেই দাঁড়িয়ে। সারিতে দাঁড়ানো নারীদের অভিযোগ, ট্রাকে পণ্য কম থাকে। যাদের শক্তি বেশি, তারা জোর করে সারির সামনে গিয়ে পণ্য নিয়ে চলে যান। আর তাদের অধিকাংশই সারিতে দাঁড়ান না। ট্রাকে যারা থাকেন, তারা কল দিয়ে তাদের ডেকে আনেন। তারা সামনে থেকে চাল, ডাল ও তেল নিয়ে যান। পেছনে দাঁড়ানো অনেকেই খালি হাতে ফেরেন।  

সারিতে দাঁড়ানো ৩৫ বছর বয়সী রুনা বলেন, গত রোববার লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে ট্রাকের কাছাকাছি যাওয়ার পরই পণ্য শেষ হয়ে যায়। শেষে খালি হাতে ফিরে যাই। আজ এজন্য আরও সকালে এসেছি। কিন্তু আজ তো এখনো ট্রাকই আসেনি।

মিরপুরের দুই স্থানেই সারিতে দাঁড়ানো লোকেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সকাল ৭টা থেকে দাঁড়িয়ে কেউ টিসিবির পণ্য পাচ্ছেন, কারো ভাগ্যে মিলছে না। দুপুর ১২টা পর্যন্ত কাজীপাড়ায় মেট্রো স্টেশনের নিচে টিসিবির ট্রাক আসেনি। তবে শেওড়াপাড়ায় পণ্যও বিক্রি চলছিল।  

শেওড়াপাড়ায় টিসিবির ট্রাকের বিক্রয় প্রতিনিধি আনিসুর বলেন, ট্রাকে মালামাল ভরে নিয়ে আসতে আমাদের দেরি হয়ে যায়। সারি ভেঙে কেউ কেউ সামনে এসে পণ্য নিয়ে যান। আমরা চেষ্টা করি সারি মেনে পণ্য বিক্রি করতে। সবাই পান না কারণ, আমাদের পণ্য নির্দিষ্ট থাকে। শেষ হয়ে গেলে বাড়তি মানুষকে দিতে পারি না।  

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০২৪
জেডএ/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।