ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

সুদিন ফেরানো যাচ্ছে না সোনালি আঁশের

তৌহিদ ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০২৩
সুদিন ফেরানো যাচ্ছে না সোনালি আঁশের বাজারে পাট নিয়ে চাষিরা

নওগাঁ: সোনালি আঁশখ্যাত পাট তার সুদিন হারিয়েছে বেশ আগেই। কয়েক বছর ধরে পাটের আবাদ কিছুটা বেড়েছে উত্তরাঞ্চলে।

তবে কৃষকের অভিযোগ পাটের কাঙ্ক্ষিত দাম মিলছে না কোনো বছর।  

নওগাঁর ঐতিহ্যবাহী আহসানগঞ্জ পাটের হাট। সপ্তাহে একদিন বৃহস্পতিবার এই হাট বসে। নওগাঁ ছাড়াও নাটোর ও জয়পুরহাটের চাষিরা আসেন এই হাটে পাট বিক্রি করতে। এক সময়ের বিশাল এই হাটের আয়তন কমেছে অন্তত চারগুণ।

হাটে পাট বিক্রি করতে আসা নওগাঁ সদর উপজেলার পাট চাষি জাফর মণ্ডল বাংলানিউজকে জানান, বর্তমান বাজারে সব কিছুর উচ্চমূল্য। তাই পাট উৎপাদনে দিন দিন খরচ বেড়েই চলেছে। কিন্তু সেই অনুপাতে মিলছে না দাম।

তিনি বলেন, বাজারে জাত ও মানভেদে প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার থেকে ২২শ টাকা পর্যন্ত। তবে এই দামে চাষিদের অনেক লোকসান হচ্ছে। পাটের দাম সর্বনিম্ন ২৮শ থেকে তিন হাজার টাকা মণ বিক্রি হলে লাভের মুখ দেখা যাবে।

আত্রাই উপজেলার কৃষক শ্রী অতুল প্রামাণিক বাংলানিউজকে জানান, জমিতে হাল, সার, কীটনাশক সব মিলিয়ে এক মণ পাট উৎপাদনে খরচ পড়েছে গড়ে ১৯শ টাকা। এরপর এ বছর পাট পচানোর জন্য পানি পাওয়া যায়নি। এজন্য শ্রমিকের খরচ লেগেছে অনেক। প্রতিবছর এমনভাবে চলতে থাকলে মানুষ মানুষ আবাদ বন্ধ করে দেবে।

অন্যদিকে চাষিদের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের কণ্ঠেও লোকসানের সুর। আহসানগঞ্জ হাটে আসা নাটোরের এক ব্যবসায়ী জানান, পাট বেচাকেনা করে আমাদের সুবিধা হচ্ছে না। নগদ টাকায় পাট কিনে মিলে দিতে হচ্ছে বাকিতে। আবার মিলাররা সময়মতো দিচ্ছে না টাকা। সব মিলিয়ে পাটের ব্যবসার অবস্থা খুব খারাপ। এই মুহূর্তে সরকারকে পাটের দিকে বাড়তি নজর দিতে হবে। তা না হলে পাট চাষ বন্ধ হয়ে যাবে।

পাট কারবারে গতি আনা ও দূষণ রোধে পন্যে পাটজাত মোড়কের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে সরকার। কিন্তু এখনও বৃহত্তর চালকল সেক্টরসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে খুব একটা কার্যকর করা যায়নি সেই নির্দেশনা। মিলগুলোতে হরহামেশায় ব্যবহার হচ্ছে ক্ষতিকর প্লাস্টিক ব্যাগ। ব্যবসায়ীদের দাবি, প্লাস্টিক ব্যাগে খরচ অনেক কম। আবার পণ্যের মানও থাকে ভালো।

নওগাঁ চাল কল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার জানান, মিলগুলোতে চটের ব্যবহার হয়, তবে তুলনামূলক কম। কারণ হচ্ছে চটের বস্তার দাম বেশি আর প্লাস্টিকের বস্তার দাম কম। অন্যদিকে প্লাস্টিকের বস্তায় চালের গুণগতমান ভালো থাকে। কিন্তু চটের বস্তায় বাতাস যাওয়ার ফলে চালের মান খারাপ হয়ে যায়। এজন্য মিলাররা ধান কেনার সময় চটের বস্তায় কেনে। আবার চাল প্যাকেটিংয়ের সময় বস্তা ব্যবহার করে।

নওগাঁ পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা আখতারুজ্জামান জানান, এখনও ঠিকঠাক নিশ্চিত করা যায়নি পাটজাত মোড়কের ব্যবহার। সরকারি যে নিয়ম নীতি রয়েছে, তা অনুসরণ করা গেলে আগামী দিনে পাট নিয়ে আর ভাবতে হবে না। পাটের সুদিন নিশ্চিত হবে। সরকারের নির্দেশনা মেনে আমরা প্রতিনিয়তই বিভিন্ন মিলকারখানায় ভ্রাম্যমাণ অভিযান পরিচালনা করে থাকি। যারা চটের বস্তা ব্যবহার করে না, তাদের জন্য জরিমানার ব্যবস্থা রাখা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০২৩ 
আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।