ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

দেশে একের পর এক বিস্ফোরণ-অগ্নিকাণ্ডে সিপিবির উদ্বেগ

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৭ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০২৩
দেশে একের পর এক বিস্ফোরণ-অগ্নিকাণ্ডে সিপিবির উদ্বেগ ...

চট্টগ্রাম: সীতাকুণ্ডসহ দেশের বিভিন্ন কারখানায় একের পর এক বিস্ফোরণ, অগ্নিকাণ্ডসহ বিভিন্ন দুর্ঘটনায় প্রাণহানিতে গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ জানিয়েছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক অশোক সাহা ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর।

সরকারি যেসব সংস্থার গাফিলতির কারণে এবং নিয়মিত তদারকির অভাবে কারখানাগুলো মৃত্যুপুরিতে পরিণত হয়েছে, পার্টির পক্ষ থেকে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনার দাবি করা হয়েছে।

গণমাধ্যমে প্রকাশের জন্য প্রেরিত যৌথ বিবৃতিতে সিপিবি, চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক অশোক সাহা ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডে অর্ধশতাধিক মৃত্যু ও কয়েকশ’ আহতের মর্মান্তিক ঘটনার দগদগে স্মৃতি এখনও দেশের মানুষের মনে জ্বলজ্বল করছে। হতাহতদের ঘরে এখনও স্বজন হারানোর কান্না থামেনি।

 

এর মাত্র নয়মাসের মাথায় গত ৪ মার্চ বিএম ডিপো থেকে মাত্র পৌনে এক কিলোমিটার দূরে সীমা অক্সিজেন লিমিটেডে আবারও ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ড হয়েছে। সাতজন হতভাগ্য মানুষ পৃথিবী থেকে বিদায় নিল। অনেকে আহত হয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন, চিরজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে গেছেন অনেকে। সেই ঘটনার রেশ না কাটতেই আজ শনিবার (১১ মার্চ) সীতাকুণ্ডে আবারও তুলার গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ভয়, আতঙ্ক ও শঙ্কা তৈরি করেছে।  

এসব ঘটনা গণমাধ্যমের কল্যাণে আলোচনায় এসেছে, কিন্তু সীতাকুণ্ডে এখন এমন দুর্ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় যার অধিকাংশই সামনে আসে না। শত, শত শিল্প কারখানা সীতাকুণ্ডে গড়ে তোলা হয়েছে কোনো ধরনের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে। সেখানে অনিরাপদ পরিবেশে লাখো শ্রমিক কাজ করছে এবং দুর্ঘটনায় প্রতিনিয়ত বেঘোরে প্রাণ হারাচ্ছে। জাহাজ ভাঙার কারখানায় শ্রমিকের মৃত্যু যেন স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে।  

উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, এসব ঘটনা শুধু কারখানার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। প্রতিটি বিস্ফোরণে আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকার জনবসতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সাধারণ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। পুরো সীতাকুণ্ড যেন এখন একটি অগ্নিকুণ্ডে পরিণত হয়েছে। পত্রিকায় দেখেছি, সেখানকার বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে বলছেন, তারা এখন বোমা নিয়ে বসবাস করছেন, যেকোনোসময় বিস্ফোরণে উড়ে যেতে পারেন। বিভিন্ন কারখানার কাছাকাছি এলাকার বসতঘর থেকে প্রাণভয়ে অনেকে অন্য এলাকায় চলে যাচ্ছেন।

বিবৃতিতে সিপিবি নেতারা বলেন, কাদের অবহেলায়, কাদের গাফিলতিতে সীতাকুণ্ড মৃত্যুপুরিতে পরিণত হলো- সেটা বিশদভাবে তদন্ত করতে হবে। প্রতিটি ঘটনার পর প্রকাশ পাচ্ছে, কারখানাগুলো কোনো ধরনের দুর্ঘটনা মোকাবেলার ব্যবস্থাপনা ছাড়াই কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। এসব ঘটনার পেছনে কারখানার মালিকদের দায় অবশ্যই আছে, কিন্তু শুধু সেটা বলে পার পাওয়া যাবে বলে আমরা মনে করি না। সরকারি কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর, বিস্ফোরক অধিদফতর, ফায়ার সার্ভিস, স্থানীয় প্রশাসনসহ যাদের নিয়মিত তদারকির দায়িত্ব পালন করার কথা, তারা কী করছে সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে।  

আমরা মনে করি, প্রতিটি ঘটনায় সরকারি সংস্থাগুলোর দায় আছে এবং তাদের সেটা নিতে হবে। তাদের গাফিলতির কারণে কারখানাগুলো অনিরাপদ হয়ে পুরো সীতাকুণ্ডের লাখ, লাখ মানুষের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। তদন্ত করে সরকারি সংস্থার সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।  

সিপিবি নেতারা বিস্ফোরণের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিচার, নিহতদের পরিবারকে এক জীবনের আয়ের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং আহতদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ, চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৭ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০২৩
এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।