ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

‘ডেনিমের ক্ষেত্রে চীনকে ছাড়িয়ে বাংলাদেশ প্রথম অবস্থানে’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০২৩
‘ডেনিমের ক্ষেত্রে চীনকে ছাড়িয়ে বাংলাদেশ প্রথম অবস্থানে’ ...

চট্টগ্রাম: ডেনিমের ক্ষেত্রে চীনকে ছাড়িয়ে বাংলাদেশ এখন প্রথম অবস্থানে উল্লেখ করে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেছেন, সরকারের নীতিগত সহযোগিতায় ইউরোপের বাজারে আমরা অতি শিগগির এক নম্বর অবস্থান নিতে সমর্থ হবো।  

রোববার (২২ জানুয়ারি) নগরের খুলশীর বিজিএমইএ ভবনের মাহাবুব আলী হলে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

 

সম্প্রতি সরকার বেনাপোলের পাশাপাশি ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা কাস্টমস স্টেশনের মাধ্যমে সূতা আমদানির ক্ষেত্রে পার্শিয়াল শিপমেন্টের (আংশিক চালান) জটিলতা নিরসন করে আদেশ জারি করায় ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারের এ পদক্ষেপ শিল্পকে আরও গতিশীল করবে। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে এক দেশ থেকে অন্য দেশে পণ্যের অবাধ বিচরণে কোনো প্রতিবন্ধকতা কাম্য নয়।

আমাদের পোশাক কারখানাগুলো কেবল নিরাপদই নয়, বরং আরও গতিশীল, আধুনিক, জ্বালানি-সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব হয়ে উঠেছে। ইউএসজিবিসি কর্তৃক প্রত্যয়িত সর্বাধিক সংখ্যক সবুজ কারখানার আবাসস্থল, বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম নিরাপদ এবং সবচেয়ে পরিবেশবান্ধব পোশাক প্রস্তুতকারক দেশ হিসাবে বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত। আমাদের এখন ১৮৩টি লিড গ্রিন কারখানা রয়েছে, যেগুলোর মধ্যে ৬০টি প্লাটিনাম রেটেড এবং ১০৯টি গোল্ড রেটেড। ২০২২ সালে আমাদের ৩০টি কারখানা গ্রিন হয়েছে। আমরা এখানেই থেমে যেতে চাই না। বিজিএমইএ প্রতিনিয়ত কাজ করছে পোশাকখাতে গ্রিন কারখানার সংখ্যা বাড়ানোর জন্য।  

কোভিড মহামারি থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর মধ্যেই পোশাক শিল্প আবারও নতুন করে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে উল্লেখ করে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে এক অস্থির পরিস্থিতি বিরাজ করছে, যার প্রভাব পড়েছে আমাদের পোশাক শিল্পে। আইএমএফের পূর্বাভাষ অনুযায়ী বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ২০২২ সালে ৩ দশমিক ২ শতাংশ থেকে ২০২৩ সালে ২ দশমিক ৭ শতাংশ কমবে। পাশাপাশি, বিশ্ব বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধি ২০২২ সালে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে কমে ২০২৩ সালে ২ দশমিক ৫ শতাংশে দাঁড়াবে। ইতিমধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জার্মানি সহ প্রধান বাজারগুলোতে প্রবৃদ্ধি যে হ্রাস পাচ্ছে, তা দৃশ্যমান।  

যদিও অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২০২২ সালে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প ৪৫ দশমিক ৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানির নতুন রেকর্ড গড়েছে এবং ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ২৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেড়েছে, এর পেছনের কারণ হলো কাঁচামালের বাড়তি দামের কারণে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া এবং অপেক্ষাকৃত উচ্চমূল্যের পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধি। লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, পণ্যের এই মূল্য বৃদ্ধির সুফল উদ্যোক্তারা নিতে পারছেন না। অন্যদিকে, নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও সবুজ শিল্পায়নে বিপুল বিনিয়োগ করলেও তারা তার যথাযথ মূল্য দিচ্ছেন না।  

বিশ্বজুড়ে চলমান জ্বালানি সংকটের কারণে স্থানীয় পর্যায়ে বিদ্যুতের অপ্রতুলতার কারণে কারখানাগুলোতে ডিজেল দিয়ে জেনারেটর চালানো হচ্ছে। এতে করে শিল্পে উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে, শিল্পের প্রতিযোগী সক্ষমতা ক্রমবর্ধমানভাবে কমছে। এছাড়া সম্প্রতি গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদের উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। ২০২৩ সালে প্রতি ঘনমিটারে গ্যাসের মূল্য ২০২২ সালের তুলনায় ১৫০ শতাংশ বেড়েছে।  

সরকারের প্রতি আমাদের একান্ত অনুরোধ, খাত ভিত্তিক গ্যাস সরবরাহের ক্ষেত্রে দেশের অর্থনীতিতে রপ্তানিমুখী শিল্প খাতের অবদানের কথা বিবেচনা করে এ খাতকে আরও গুরুত্ব দেওয়া। এছাড়া গ্যাস আমদানির ক্ষেত্রে আমদানির ওপর ভ্যাট ও ট্যাক্স প্রত্যাহার করার জন্য আমি বিশেষ ভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি। আপনারা গ্যাস সঞ্চালনে সিস্টেম লস কমিয়ে আনুন, অবৈধ সংযোগগুলো বন্ধ করে দিয়ে গ্যাসের মূল্য সমন্বয় করুন। শিল্পের জন্য গ্যাস ও বিদ্যুতের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করুন। সেই সঙ্গে শিল্পে গ্যাস ও বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করুন।  

তিনি বলেন, পতেঙ্গা উপকূলে প্রস্তাবিত বে-টার্মিনালে ২৪ ঘণ্টা জাহাজ চলাচল সম্ভব হবে। সম্ভাব্যতা সমীক্ষা অনুসারে, ১২ মিটার ড্রাফটের জাহাজ বার্থ নিতে পারবে। বে-টার্মিনাল এর চূড়ান্ত কাজ সম্পাদন হলে প্রায় ১৫টি জাহাজ একসঙ্গে বার্থ নিতে পারবে। এতে আমদানি-রপ্তানিতে সময় এবং খরচ অনেকাংশে কমবে এবং রপ্তানি বাণিজ্যের সক্ষমতা বাড়বে। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর চালু হলে বড় বড় জাহাজের মাধ্যমে সরাসরি আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে। এক্ষেত্রে ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরসমূহের ব্যবহার অনেকাংশে কমবে। এতে করে পোশাক শিল্পে লিড টাইম কমবে, খরচ সাশ্রয় হবে।

মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে ‘গার্মেন্ট পার্ক’ স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে জমির জন্য বিজিএমইএ কয়েক কিস্তিতে টাকা দিয়েছে। যতদ্রুত সম্ভব বিজিএমইএকে জায়গা বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য সরকারের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।  

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, সহ-সভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম, রাকিবুল আলম চৌধুরী, আসিফ আশরাফ, মো. মহিউদ্দিন রুবেল, মো. হাসান (জ্যাকি),  এম এহসানুল হক, সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী, সাবেক সহ-সভাপতি মোহাম্মদ নাসির, এএম চৌধুরী সেলিম, সাবেক পরিচালক  আ.ন.ম সাইফুদ্দিন, মোহাম্মদ মুসা, অঞ্জন শেখর দাশ, আবদুল ওহাব প্রমুখ।  

বাংলাদেশ সময়: ২০৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০২২
এআর/পিডি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।