ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

তিনগুণ তাপদাহে পুড়বে বিশ্ব: গবেষণা 

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০২২
তিনগুণ তাপদাহে পুড়বে বিশ্ব: গবেষণা  ফাইল ছবি

চলতি গ্রীষ্মে পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে যে বিপজ্জনক তাপদাহ বয়ে গেছে তা এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ প্রায় তিন থেকে দশ গুণ বেশি আকারে বিশ্বের বেশিরভাগ অংশে আঘাত হানতে পারে। আর এর কারণ মানব সৃষ্ট জলবায়ু সংকট।

নতুন একটি গবেষণায় এ তথ্য জানানো হয়েছে।  

বৃহস্পতিবার কমিউনিকেশনস আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে এই শঙ্কার কথা জানানো হয়। যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি এবং ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির গবেষকরা এই গবেষণাটি করেছেন।  

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পৃথিবীর মধ্য-অক্ষাংশ বা যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান এবং পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোতে এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে। বর্তমানে গ্রীষ্মকালের কোনো কোনো সময় এখানকার তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা ১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৯.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বা তার বেশিতে পৌঁছাতে পারে। ২০৫০ সালে এই অঞ্চলে বিপজ্জনক তাপদাহ বয়ে যাওয়ার সময় দ্বিগুণেরও বেশি হবে। অর্থাৎ এখন যদি বছরে এক সপ্তাহ তাপদাহ হয়, তখন হবে ১৪ দিনেরও বেশি।

গবেষকেরা বলছেন, ২১০০ সালের মধ্যে এই অসহনীয় তাপপ্রবাহের প্রভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের মতো জায়গাগুলোতে গ্রীষ্মকাল দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। গ্রীষ্মপ্রধান দেশে এর প্রভাব হবে আরও ভয়াবহ।

গবেষণায় বলা হয়েছে, তাপমাত্রা ১২৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৫১ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ছাড়িয়ে গেলে সেটিকে অত্যন্ত বিপজ্জনক বলে মনে করা হয়। বর্তমানে এটি খুব কমই ঘটে। এই শতাব্দীর শেষ দিকে ভারতের মতো গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলগুলোতে এই ধরনের তাপপ্রবাহ প্রতিবছর এক থেকে চার সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

প্যারিসে অনুষ্ঠিত ২০১৫ সালের জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনের বলা হয়, আগামী শতাব্দীতে বিশ্বের তাপমাত্র ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে। এই অনুসিদ্ধান্তের নিরিখেই গবেষণাটি করা হয়। যদিও ওই সময় দেশগুলো তাপমাত্রা ১.৫° সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে বলে জানিয়েছিল।    

চলতি বছর মিশরে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে। গত বছর স্কটল্যান্ডের জলবায়ু সম্মেলনে দেশগুলো জানায়, চলতি বছরের সম্মেলনে কার্বন নির্গমন হ্রাসের বিষয়ে তারা পরিকল্পনা দেবে। তবে অনেক দেশই সময়মতো পরিকল্পনা জমা দেয়নি।  

গবেষকরা বলছেন, বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে যারা বাইরে কাজ করেন এবং নিম্ন আয়ের ব্যক্তিদের মধ্যে অসুস্থতা এড়াতে বিশ্বকে অবশ্যই তাপের পরিবর্তিত মাত্রার সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার উপায় খুঁজে বের করতে হবে।

বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশে চলতি বছর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা হয়, যুক্তরাজ্যে খুব কম লোকের শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা রয়েছে, ট্রেনগুলো বাতিল করা হয়েছে এবং একটি বিমানবন্দরের রানওয়ে তাপদাহের কারণে গলে গিয়েছিল। দেশটিতে তাপমাত্রা চলতি বছরই ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়ায়।  

গবেষকদের অনুমান অনুযায়ী, ২১০০ সালের সালের মধ্যে বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখা সম্ভাবনা শুধু শূন্য দশমিক ১ শতাংশ। আর ২০৫০ সালের মধ্যেই বিশ্বের তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়বে।  

হার্ভার্ডের জলবায়ু বিজ্ঞানী ও এই গবেষণার লেখক লুকাস জেপেটেলো বলেছেন, এটি এক ধরনের ভীতিকর পরিস্থিতি। এর ফলে কয়েক বিলিয়ন মানুষ নিয়মিতভাবে অত্যন্ত বিপজ্জনক মাত্রার তাপের সংস্পর্শে আসতে চলেছে।

সূত্র: সিএনএন

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০২২
ইআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।