ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

অপেক্ষার শীত রাজধানীতে, দুপুর গড়ালেও দেখা নেই সূর্যের

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৯
অপেক্ষার শীত রাজধানীতে, দুপুর গড়ালেও দেখা নেই সূর্যের

ঢাকা: সকাল পেরিয়ে দুপুর। তবুও রাজধানীতে দেখা মেলেনি সূর্যের। প্রতিদিনের ঝলমলে রোদের আলোয় ধুলো-ধোঁয়ার কালো রংয়ের পরিবর্তে এখন সাদা কুয়াশায় ঢেকে আছে রাজধানীর আকাশ। একইসঙ্গে গত কয়েকদিন সাধারণ পোশাকে সবাই বাইরে বেরুলেও একদিনের শীতেই পাল্টে গেছে রাজধানীর সেই দৃশ্য। গরম পোশাক আর কর্মস্থলে চায়ের কাপের উঞ্চতায় এখন ওম খুঁজছেন শীতের অপেক্ষায় থাকা শীত প্রিয় মানুষগুলো।

বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকেই রাজধানীবাসী কর্মস্থলে বেরিয়েছেন গায়ে শীতের পোশাক মুড়ে। স্কুলের শিশু থেকে কর্মস্থলের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাটিও ঘর ছেড়েছেন সোয়েটার বা জ্যাকেট পরে।

চাদর মুড়িয়েছেন কর্মজীবী নারীরা।

এ প্রসঙ্গে রাজধানীর ধানমন্ডির একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান বলেন, এটা জানি যে ঢাকাতে বরাবরই শীত নামে হুট করে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। গ্রামে অনেক আগে শীত এলেও ঢাকাতে শীত পড়ছে আজ দুইদিন। বিশেষত আজ বেশি। সকাল থেকে তো কুয়াশার কারণে এখনো সূর্যের আলোও দেখা যায়নি। তাই শীতকে বরণ করতে শীতের পোশাকেই বেরিয়েছি কর্মস্থলে। রাস্তার পাশে শীত নিবারণের চেষ্টা।  ছবি: শাকিলএদিন সকালে শহরের বিভিন্ন স্থানের সবাইকেই দেখা গেছে শীতের বাহারি পোশাকে। ছোট শিশুরা রং-বেরংয়ের সোয়েটার বা জ্যাকেটের সঙ্গে পরেছে জিন্স আর জুতো। মেয়েরা পরেছে সোয়েটার বা হাতের কাজ করা চাদর। ছেলেদের পোশাকের মধ্যে ছিল উলের সোয়েটার, মাফলার, কোর্টসহ প্রভৃতি।

এদিকে সকাল থেকে ঠাণ্ডা বাতাসের দাপুটে প্রবাহ বেশ খানিকটা মলিন করে রেখেছে সাধারণ মানুষদের। অনেকে আবার ঠাণ্ডায় জড়োসড়ো হয়েও পড়েছেন। বিছানা ছেড়েছেন অন্যদিনের তুলনায় সকালের অনেক পরে। তবে এসবের মধ্যেও শীতকে আপ্যায়ন করেতে ভুলে যাননি শীত প্রিয় মানুষেরা। সকাল সকাল ভাপা পিঠা আর আড্ডায় চায়ের কাপের উঞ্চতায় শীতকে আপ্যায়ন করেছেন তারা।

এ প্রসঙ্গে কথা হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের (ঢাবি) ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী আফিফা ফাইরুজ বলেন, বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) থেকে ঝুপ করেই যেন নেমে এসেছে শীত। ঢাকায় শীতের সময়টা খুব কম হওয়ায় এর জন্য একটা অপেক্ষা থাকে বলতে পারেন। সে অপেক্ষার পালা শেষে শীত যখন এসেছে তখন তাকে আপ্যায়ন না করলে কী চলে! সে তো আমাদের শহরের নতুন অতিথি। তাইতো সকালে মায়ের হাতে তৈরি ভাপা পিঠা খেয়ে ক্যাম্পাসে এসেছি। আর এখন বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছি গরম চা খেতে খেতে। হাতের মুঠোয় চায়ের কাপের উঞ্চতার যে ওম, তা অনন্য। শীতে জবুথবু শিশু।  ছবি: শাকিলরাজধানীতে শীত আসতে না আসতেই শীতের প্রকৃতি নিয়েও মেতেছেন অনেকে। সৌখিন মানুষগুলোর কাছে এখন ‘ফুলের বনে যার পাশে যায় তারেই লাগে ভালো’ পরিবেশ।  

এ বিষয়ে আইনজীবী ও প্রকৃতিপ্রেমী ফাতেমা-তুজ-জোহরা বাংলানিউজকে বলেন, শীত এলেই চলায় আনন্দ, ঘুরতে যাওয়ায় আনন্দ, শিশুদের খেলাধুলায় আনন্দ। এমনকি খুব বেশি দূরে না গেলেও মনটা ভালো হয়ে ওঠে অকারণে পথের পাশের ফোটা ফুলটা দেখে। বিশেষ করে ছাদের বাগান বা বারান্দার টবের ফুল গাছগুলোতে যখন ফুল ফোটে, তা অনেকটা চাদরের আড়ালে উষ্ণতার মতো অন্যরকম এক অনুভূতি জাগায় হৃদয়ে।

আর পড়ুন
** জেঁকে বসা শীতে রাজধানীর জনজীবনে 'ছন্দপতন' 
তবে এই শীত যেন অস্বস্তির কারণ না হয়ে ওঠে এমনটাই মতামত বিশেষজ্ঞদের। এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসক ডা. কামরুল ইসলাম বলেন, শীতে শুধু ঠাণ্ডা লাগার কারণেই যে আমরা অসুস্থ হই, তা নয়। বরং শীতকালীন অসুখের মূল কারণ বায়ুবাহিত বিভিন্ন রোগজীবাণু, যা সহজেই ছড়িয়ে পড়ে। সেইসঙ্গে থাকে প্রচুর ধুলোবালি, যা শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে নাক দিয়ে ফুসফুসে প্রবেশ করলে গলায় কিংবা নাকে প্রদাহ, সর্দি, কাশিসহ বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। আর মাত্রাতিরিক্ত দূষিত ধোঁয়া এবং ধুলো নিউমোনিয়া কিংবা ব্রঙ্কাইটিসের মতো সমস্যাও সৃষ্টি করতে পারে। তাই এদিক থেকে সতর্ক থাকতে হবে এবং বিশেষ করে শিশুদের প্রতি আলাদা নজর রাখতে হবে। গরম পোশাক ও পরিমিত পানি পান করা ছাড়াও ধুলোবালি এবং অধিকতর কুয়াশা থেকে একটু দূরে থাকার চেষ্টা করতে হবে।
সকাল থেকে গরম কাপড়ের দোকানে ভিড়।  ছবি: ডি এইচ বাদলএদিকে আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এ মাসে রাতের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে কমতে থাকবে। মাসের শেষ দিকে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে এক থেকে দু’টি মৃদু (৮-১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ও মাঝারি (৬-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। শেষ রাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের উত্তরাঞ্চল ও নদ-নদী অববাহিকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। বয়ে যেতে পারে দুই থেকে তিনটি মৃদু (৮-১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) থেকে মাঝারি (৬-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ধরনের শৈত্যপ্রবাহ।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৯
এইচএমএস/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।