ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

৪৯ বছরেও দিনটিকে ভোলেনি লক্ষ্মীপুরের মানুষ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৯
৪৯ বছরেও দিনটিকে ভোলেনি লক্ষ্মীপুরের মানুষ

লক্ষ্মীপুর: প্রতি বছর ১২ নভেম্বর শোকে বিহ্বল হয়ে পড়ে লক্ষ্মীপুরের মানুষ। ১৯৭০ সালের এদিনে উপকূলে আঘাত হানে মহাপ্রলয়ংঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস। সেদিন এর আঘাতে জেলার রামগতি ও কমলনগর উপজেলায় প্রায় ৫০ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। ৮ থেকে ১০ ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায় চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা। ৪৯ বছর পেরিয়ে গেলেও, আজও প্রিয়জন হারানো মানুষরা এ দিনটিকে ভুলতে পারেনি।

সরকারি হিসেবে ওই ঘূর্ণিঝড়ে উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় ৫ লাখ ও বেসরকারি হিসেবে প্রায় ১০ লাখ মানুষের প্রাণহানি হয়।

বরাবরের মতোই নানা কর্মসূচিতে জেলাজুড়ে দিনটিকে পালন করা হচ্ছে।

এ উপলক্ষে বিভিন্ন জায়গায় মিলাদ মাহফিল, কোরআন তেলওয়াত, নিহতদের স্মৃতিচারণা ও আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

১৯৭০ সালের এ দিনে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় দশ বছরের কিশোর শহিদুল ইসলাম। এখন তিনি প্রায় বৃদ্ধ। সে দিনের সেই প্রলয়ংঙ্কারী ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ হারান তার বাবা নুরুল হক মাস্টার, ভাই আবুল কালামসহ তাদের আরও ১৫ জন মজুর। ঘূর্ণিঝড়ের পর অনেক খোঁজাখুঁজি করেও বাবা-ভাইয়ের মরদেহও খুঁজে পাননি শহিদুল।  

সেদিনের কথা জানতে চাইলে কমলনগরের চর জাঙ্গালিয়া গ্রামের বাসিন্দা শহিদুল কান্নায় ভেঙে পড়েন। জানান, সেদিন কমলনগর চরকাদিরার ভূলুয়া নদীসংলগ্ন খামার বাড়িতে বাবা-ভাইয়ের সঙ্গে ছিলেন তিনি। তাদের সঙ্গে ছিলেন আরও ১৫ মজুর। সেদিন সন্ধ্যার দিকেই নদীতে জোয়ারের পানি বেড়ে যায়। রাত ৮টার দিকে শুরু হয় প্রবল ঘূর্ণিঝড়। ভেঙে পড়ে ঘর। অন্যদিকে ঘরের ভেতরেও নদীর পানি বাড়তে থাকে। বাঁচার জন্য সবাই ভাঙা ঘরের চালায় অবস্থান নেন। একটি কাঠের বাক্সে আশ্রয় নেন শহিদুল। রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিপুল পানির ঢল নেমে আসে। চোখের সামনে ঢেউ এসে ভাসিয়ে নেয় শহিদুলের বাবা-ভাইসহ ১৭ জনকে। পরের দিন সকালে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে অচেতন অবস্থায় শহিদুলকে উদ্ধার করা হয়।

ভয়াবহ সে ঘূর্ণিঝড়ে স্বজন হারানোরা জানায়, সেদিন রেডিওতে ১০ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত দেয়া হয়। কিন্তু উপকূলে পর্যাপ্ত রেডিও ছিল না। যাদের কাছে ছিল তারাও সেভাবে বিশ্বাস করেনি ওই হুঁশিয়ারি।  

ভয়াল ১২ নভেম্বর

সেদিন সকাল থেকেই গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। সন্ধ্যায় শুরু হয় হালকা বাতাস। গভীর রাতে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস। এর গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২২২ কিলোমিটার। ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় উপকূল। পানিতে ভাসতে থাকে লাশ আর লাশ। পানি কমতে কমতে নিখোঁজ অনেক লাশেই পচন ধরে। ওই পরিস্থিতিতে সেবার অসংখ্য লাশ দাফন করাও সম্ভব হয়নি। হৃদয়বিদারক সেই দিনে রামগতি ও কমলনগরে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়।

দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে প্রলয়ংকারী সে ঘূর্ণিঝড়ে রামগতির মেঘনা উপকূলীয় চরআবদুল্লাহ, কমলনগরের ভুলুয়া নদী উপকূলীয় চরকাদিরাসহ নোয়াখালীর হাতিয়া, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঘটনার দুই দিন পর সরকারিভাবে এ দুর্যোগের খোঁজখবর নেওয়া শুরু হয়।  

ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতায় জড়িত ছিলেন রামগতির বাসিন্দা এএইচএম নোমান। তিনি জানান, তার মতে ঘূর্ণিঝড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় রামগতির চর আবদুল্লাহ ইউনিয়ন।  

সিএসপি আব্দুর রব চৌধুরী জানান, সে রাতে চর কোলাকোপায় জলোচ্ছ্বাসে তার  ১১৩ জন আত্মীয়স্বজন ভেসে যায়।  

লক্ষ্মীপুরবাসীর দাবি ভয়াবহ এ দিনটিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্মরণ করা হোক। এ দিনকে ঘোষণা করা হোক ‘উপকূল দিবস’ হিসেবে। লক্ষ্মীপুরের বেশ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘উপকূল দিবস’ বাস্তবায়নের দাবিতে আজ মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) মানববন্ধন ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১০২৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৯
এসআর/এইচজে 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।