ঢাকা, বুধবার, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়লে অর্থনীতি শক্তিশালী হবে: ড. কবির

মান্নান মারুফ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২, ২০১১
ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়লে অর্থনীতি শক্তিশালী হবে: ড. কবির

ঢাকা: ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ালে বাংলাদেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে বলে মনে করছেন রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আহমদ আল কবির।

বাংলানিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন।

সাক্ষাৎকারে তিনি পুঁজিবাজার থেকে শুরু করে দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৫ কোটির মতো। এর মধ্যে সমস্যার যেমন অন্ত নেই, তেমন সম্ভবনারও কোনও কমতি নেই। আমার বিবেচনায় যেমন কিছু বড় বড় সমস্যা রয়েছে, তেমনি সম্ভাবনারও রয়েছে অনেক বিশাল। এর মধ্যেই দেশের জাতীয় প্রবৃদ্ধি এগিয়ে যাচ্ছে। গত অর্থ বছরে ৬.৭ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। যা গত প্রায় ৮ থেকে ১০ বছর ধরে ৫ শতাংশে কোঠায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। ৬ শতাংশে যেতে পারছিল না। আমাদের বুঝতে হবে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার রেশ এখনও কাটেনি। এর মধ্যেও আমাদের প্রবৃদ্ধি ৬.৭ শতাংশ হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী ২০১৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হবে।   আমাদের মাথাপিছু আয় ৮১৮ মার্কিন ডলার। এটিকে ১০৫০ নিয়ে ডলার যেতে পারলে আমরা মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হতে পারব। এগুলো হলে আমাদের দেশের সম্ভাবনা।

তিনি বলেন, গত অর্থ বছরে আমদানি-রপ্তানি প্রবৃদ্ধির পরিমাণ হলো প্রায় ৪০ শতাংশ। এ প্রবৃদ্ধির গতি আরও বাড়াতে সরকার নতুন নতুন খাত সৃষ্টি করেছে।

পাট, গার্মেন্ট, ওষুধ, টেক্সটাইল এবং মানবসম্পদ খাত উল্লেখযোগ্য। এসব সম্ভাবনার খাতগুলো উন্নয়ন করার সঙ্গে জড়িত লোকদেরও প্রশিক্ষণ দিয়ে জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তরিত করতে পারলে দেশের নিশ্চিত উন্নয়ন হবে।

তিনি বলেন, ওষুধ একটি সম্ভাবনাময় খাত। কিন্তু বিগত সরকারের সময় এ খাতের তেমন উন্নয়ন হয়নি। কিন্তু বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর এ খাতের উন্নয়নে কাজ শুরু করে দিয়েছে। ইতিমধ্যে ওয়ার্ল্ড হেল্থ আরগানাইজেশন (ডব্লিউএইচও) অনুমোদন পাওয়া নিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছে। অনুমোদন পেলেই বাংলাদেশের ওষুধ বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশেকেও রপ্তানির ক্ষেত্রে ছাড়িয়ে যাবে। ফলে এ খাতটি গার্মেন্টেস শিল্পকেও অতিক্রম করবে।

ড. আহমদ আল কবির বলেন, আমাদের সম্ভাবনা অনেক। এটিকে কাজে লাগাতে হলে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, বিদ্যুৎ এবং গ্যাসের আরও উন্নয়ন করতে হবে। এটি করা হলে বর্তমান অর্থবছরের তুলনায় আগামীতে আরও দ্বিগুণ বাজেট প্রনয়ণ করা সম্ভব হবে। বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশের সঙ্গে আমরা পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যেতে পারব। তবে এক্ষেত্রে দেশের যুবসমাজকে কাজে লাগানোর জন্যে সরকারের আরও বলিষ্ঠ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

দেশের আর্থিক খাতের কথা উল্লেখ করে প্রখ্যাত এ অর্থনীতিবিদ বলেন, দেশের আর্থিক খাত নিয়ে অনেকে প্রশ্ন করেন। কিন্তু বাস্তব অবস্থাকে বিবেচনা করতে হবে। আমাদের আর্থিক খাতের গতি অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সরকারের আগের সরকারগুলোর সময় বড় বড় প্রায় ১০ টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরে প্রকল্পের ধরনে ও পরিধি বেড়ে গেছে। প্রায় ৩০টি বড় বড় প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। বড় ধরনের প্রকল্প গ্রহণের ফলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর চাপ পড়ছে। বিশেষ করে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পাট, কৃষিভিত্তিক শিল্পে বড় বড় বিনিয়োগ করা হয়েছে। এতে ব্যাংকগুলোতে কিছুটা চাপ পড়ছে। এটি স্বাভাবিক ঘটনা।

ড. কবির বলেন, ২০০৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত রূপালী ব্যাংকের সিঙ্গেল বরোয়ার এক্সপোজার (সর্বোচ্চ একক ঋণ সীমা) ছিল মাত্র ৩১ কোটি টাকা। কিন্তু বর্তমান রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এটিকে বাড়িয়ে প্রায় ১৬০ কোটি টাকায় নিয়ে এসেছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে বিনিয়োগকারীরা যখন তাদের মূলধন সংগ্রহের চেষ্টা করছেন তখন এর ওপর কিছু প্রভাব পড়বে এটিই স্বাভাবিক।

তবে এ ধরনের প্রভাবকে মুদ্রা সংকোচন বলা যাবে না বলে অভিমত প্রকাশ করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘যারা এটি বলছেন তারা ব্যাংকের বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে জানেন না। তবে এটি ঠিক কিছু ব্যাংক তাদের সিডিআর ১শ’ শতাংশের ওপরে নিয়ে এসেছিল। অতি উদ্যোগী হয়ে তারা এটি করেছে। এতে কোনও কোনও ব্যাংকের ফান্ড ম্যানেজমেন্টের কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর মনিটরিংয়ের কারণেই সিডিআর নির্দেশিত মাত্রার চেয়েও অনেক হ্রাস পেয়েছে। ’

ব্যাংকের মুনাফা নিয়ে রূপালী ব্যাংকের অভিজ্ঞ চেয়ারম্যান বলেন, অনেকে বলেছেন শেয়ারবাজার পড়ে যাওয়ায় ব্যাংকের মুনাফা কম হবে। কিন্তু ব্যাংকগুলোর অর্ধ বার্ষিকী হিসেব অনুযায়ী সকল ব্যাংকই অনেক বেশি মুনাফা করেছে।

আগামীতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আরও অনেক বেশি মুনাফা করবে বলে মনে করছেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘প্রকৃত ব্যাংকিং লেনদেন থেকেই এসব মুনাফা অর্জন করা সম্ভব হবে। ’
 
রেমিটেন্স নিয়ে ড. আহমদ আল কবির বলেন, আগের চেয়ে রেমিটেন্স অনেক বেড়েছে। কিন্তু রেমিটেন্স বাড়ার গতি অনেক কম।

তবে রেমিটন্স বাড়াতে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পাশাপাশি ব্যাংকগুলো বিদেশে অনেক বেশি এক্সচেঞ্জ হাউজ খুলছে। এতে করে আগামীতে আরও বেশি রেমিটেন্স দেশে আসবে। ’

রিজার্ভের কথা উল্লেখ করে বিশিষ্ট এ অর্থনীতিবিদ বলেন, যেহেতু আমাদের আমদানি বাড়ছে। এতে আমাদের রিজার্ভের ওপর চাপ পড়া স্বাভাবিক। কিন্তু সরকার রপ্তানি বাড়াতে উদ্যোগ নিয়েছে। ব্যাপক হারে রপ্তানি বাড়াতে পারলে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ আরও বাড়বে।

তবে আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ালে দেশের অর্থনীতি আরও চাঙ্গা হবে বলে মনে করেন এ অর্থনীতিবিদ।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্যিক সম্পর্কের উন্নতি হলে বাংলাদেশই বেশি লাভবান হবে। বর্তমান সরকার ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক বৃদ্ধি নিয়ে কাজ শুরু করেছে। ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য বৈষম্য দূর করার সামগ্রিক চেষ্টা করা হচ্ছে।

তবে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যির সম্পর্ক অনেক টানাপোড়েনের মধ্যে ছিল বলে মন্তব্য করেন বিশিষ্ট এ অর্থনীতিবিদ।

তিনি বলেন, ‘ওই সময় সুসম্পর্কের পরিবর্তে আরও বৈরিতার সৃষ্টি হয়েছিল। ভারতের সঙ্গে জাতীয় ঐক্য করতে পারলে আমরা অর্থনৈতিক দিক দিয়ে অনেক এগিয়ে যাব। ’

এ ব্যাপারে তিনি আরও বলেন, ‘অনেক রাজনীতিবিদ ভারতবিরোধী কথা বলেন। এ প্রবণতা রোধ করতে হবে। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার করতে হবে। কারণ দু’দেশের মধ্যে গভীর বাণিজ্য সম্পর্ক করতে পারলে দেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে। এসব বিষয় জাতীয় স্বার্থে বিবেচনায় আনা দরকার। ’

দেশের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান বলেন, সকল সরকারের আমলেই কম বেশি উন্নয়ন হয়েছে। উন্নয়নের গতি থেমে থাকেনি। বিভিন্ন সমস্যা থাকার পরেও দেশের উন্নয়ন হয়েছে।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা উন্নয়নের জন্যে সহায়ক নয়। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেশের উন্নয়নকে থামিয়ে রাখতে পারেনি। কারণ দেশের সচেতন যুব সমাজ সকল অস্থিরতাকে কঠোর হাতে প্রতিরোধ করতে পারে। যার উদাহরণ হলো সাম্প্রতিক হরতাল। প্রথম দিনে মানুষ কিছুটা হরতাল পালন করেছে, কিন্তু দ্বিতীয় দিনে আর কোনও হরতাল পালন করেনি। এতে বোঝা যায় দেশের মানুষ আজ কোনও ধরনের অস্থিরতা মানতে নারাজ। যে কোনওভাবেই এটি মোকাবেলা করবেই। তবে এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের সঙ্গে সরকারকে আরও এগিয়ে আসতে হবে।

রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে অর্থনীতিবিদ বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি যে কোনও ধরনের রাজনৈতিক অস্থিরতা সাধারণ মানুষকে শঙ্কিত করে। এটি আমাদের ইতিহাসই স্বাক্ষী। তবে আমার বিবেচনায় দেশে আর ওয়ান ইলেভেনের মত পরিস্থিতি হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। কারণ দেশের দুই তৃতীয়াংশ মানুষ যুব সমাজ। তারা কোনওভাবেই ওই ধরনের পরিস্থিতি হতে দিবে না। যুব সমাজ দেশের অনাকাক্সিক্ষত পরিবেশকে কোনওভাবেই মেনে নিবে না। জাতীয় উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কাজ দেশের সচেতন নগরিক, ব্যবসায়ী ও যুব সমাজ প্রতিহত করবে বলে আমার বিশ্বাস।

রূপালী ব্যাংকের কথা তুলে ধরে ড. আহমদ আল কবির বলেন, ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার মধ্যে বড়  ধরনের দীনতা ছিল। এ অবস্থা থেকে ব্যাংকটিকে বের করে আনা সোজা কাজ ছিল না। এজন্য স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি গ্রহণ করি।

এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- স্বল্পমেয়াদি নতুন প্রডাক্ট নিয়ে আসা, ব্যবসায়ীদের স্বার্থে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মনোবল বৃদ্ধির জন্যে আলোচনার আয়োজন করা।

এছাড়া গ্রাহকদের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধির জন্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা। শ্রেণীকৃত ঋণ কমিয়ে আনতে আলোচনার মাধ্যমে আস্থা অর্জন ও শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনা।

ব্যাংকের প্রায় ৭শ’ অফিসার ছিল যাদের কোনও ধরনের প্রশিক্ষণ ছিল না। আমরা ব্যাংকের দায়িত্ব গ্রহণ করার পরেই ওইসব অফিসারদের প্রশিক্ষণ দেই।

একই সঙ্গে ব্যাংকটিকে ঢেলে সাজানোর ব্যবস্থা করি। লোকবল সংকট সমাধানে নতুন করে আরও ১ হাজার দক্ষ ও মেধাবী  লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যেসব শাখায় কম্পিউটার নেই সেসব শাখায় দু’টি করে কম্পিউটার দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা। ব্যাংকের সামগ্রিক আর্থিক অবস্থার উন্নয়নের জন্যে ’ম্যানেজমেন্ট রিভিউ’ করি। এর ওপর ভিত্তি করে মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি গ্রহণ করি।

মধ্যমেয়াদি কর্মসূচির মধ্যে অনেকগুলো উদ্যোগ গ্রহণ করি। ঋণ আদায়, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, ডিপোজিট বৃদ্ধি করাসহ বিভিন্ন খাতের উন্নয়নে উপদেষ্টা নিয়োগ।

ব্যাংকের ২৫টি জোনকে পরিবর্তন করে ১০টি বিভাগে নিয়ে আসি। প্রতিটি বিভাগ ১ জন ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নেতৃত্বে দেওয়া হয়েছে। ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ করার উদ্দেশ্যেই এটি করা হয়েছে।

এছাড়া ব্যাংকের আমানত বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১১ সালে নতুন করে ৫ লাখ একাউন্ট খোলার জন্যে কাজ করছি। এতে ব্যাংকের আমানতের ভিত্তি আরও শক্ত হচ্ছে। এতে ব্যাপক সংখ্যক লোক ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, মধ্যমেয়াদি কর্মসূচিতে অটোমেশন প্রক্রিয়ার কাজ পুরাপুরি হাতে নিয়েছি। ব্যাংকের এটিএম, মোবাইল ব্যাংকিং চালু ও আধুনিক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত করার উদ্যোগও হাতে নিয়েছি। এটি চলমান প্রক্রিয়া। এটি আরও করতে অন্যদের সঙ্গে অংশীদারী করছি। এরই মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত করেছি।

দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা: অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় রূপালী ব্যাংকের সম্পত্তির পরিমাণ অনেক বেশি। অনেকগুলো অব্যবহৃত ভূ-সম্পত্তি রয়েছে যেগুলো কাজে লাগানোর জন্যে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছি। ব্যাংকের অবস্থানকে আরও শক্তিশলী করার লক্ষ্যে এটি করা হচ্ছে।

উন্নত ও আধুনিক পরিকল্পনা না গ্রহণের ফলে মুষ্টিমেয় গ্রাহকদের হাতে ব্যাংকের বেশিরভাগই মূলধন চলে গেছে। এতে যে উদ্দেশ্যে রূপালী ব্যাংক করা হয়েছিল তা হচ্ছে না।
 
এসএমই খাতকে শক্তিশালী করাবর লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। ২০১০ সালে এমএসইতে তেমন অর্থায়ন করা হয়নি। কিন্তু ২০১১ সালে ১ হাজার কোটি টাকার ওপরে ঋণ বিতরণ করা হবে। তবে এখনও বড় গ্রাহকের ব্যবসা নিয়ে আমরা চিন্তাযুক্ত। এদের জন্যে প্রাথমিক বৈঠক করে উন্নয়নের চেষ্টা করছি। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদের স্বার্থে কঠোর হব। এ লক্ষ্যে আমাদের  প্রস্তুত থাকতে হবে।

ড. আহমদ আল কবির বলেন, আমি যখন ব্যাংকের দায়িত্ব গ্রহণ করি তখন শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ২১ শতাংশ। কিন্তু মাত্র দেড় বছরের ব্যবধানে সিএল’র পরিমাণ সিঙ্গেল ডিজিটে নেমে এসেছে।

তিনি বলেন, অনেক বড় বড় ব্যবসায়ী রয়েছেন যারা তাদের ব্যবসার সীমাবদ্ধতার মধ্যে রয়েছেন। আমরা চেষ্টা করছি যাতে ব্যবসায়ীদের বাধাগুলো দূর করতে পারি। কিন্তু ব্যবসায়ীরা তাদের সমস্যাগুলো সমাধানে এগিয়ে না এলে তাদেরকে শ্রেণীকৃত করতে বাধ্য হব। তবে যেসব এসএমই উদ্যোক্তা খেলাপী রয়েছেন তাদের সঙ্গে ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভালো ফল পাচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, আমি আশা করি আগামী দিনে শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমাণ কমে আসবে। তবে ব্যাংকের এখনও প্রায় ৫ হাজারের মতো মামলা রয়েছে। এসব মামলা আমরা দ্রুত সমাধানের জন্যে কাজ করছি। গ্রাহকদের সঙ্গে সর্বাত্মক যোগাযোগের মাধ্যমেই এটি সম্ভব হবে।

শেয়ারবাজার নিয়ে রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. আহমদ আল কবির বলেন, ‘আমি মনে করি মাত্র ৮ থেকে ১০ লাখ মানুষ শেয়ারবাজারের সঙ্গে জড়িত। যারা ৩০ থেকে ৩২ লাখ মানুষের কথা বলেন তাদের তথ্য কোনওভাবেই সঠিক নয়। কারণ একজন গ্রাহক নামে-বেনামে ১ থেকে ২শ’ সহযোগী বিও একাউন্ট নিয়ে কাজ করেন। এতে বিও একাউন্টধারীর সংখ্যা বেশি দেখানো হয়। এসব বিও একাউন্টধারীর মধ্যে যারা জুন ২০১০ এর আগে শেয়ার ব্যবসা শুরু করেছেন তারা সামগ্রিকভাবে কোনও ক্ষতির সম্মুখীন হননি। কারণ সূচক ১০ হাজারের চেয়ে কোনও অবস্থায় ৫ হাজারে নেমে আসেনি।

তবে এসব বিনিয়োগকারীরা তুলনামূলক কম মুনাফা করেছেন। এ অবস্থায় জুনের (২০১০) সালের পর দেড় লাখ মানুষ নতুন করে বিও একাউন্ট করে শেয়ার ব্যবসায় নেমেছেন। তারা অনেকেই ২০১০ সালে শেষের ৬ মাসে সফল ব্যবসার পর ২০১১ সালের শুরুতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে এটি শেয়ার বাজারের স্বাভাবিক ঘটনা।

তিনি বলেন, শেয়ারবাজারের দু’টি দিক রয়েছে। এখানে শুধু মুনাফা হবে আর লোকসান হবে না এটি হতে পারে না। তবে বিদ্যমান বাজারে যেসব বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তারা যদি ধৈর্য ধরে থাকতেন তাহলে লস হত না। কিন্তু এক শ্রেণীর স্বার্থান্বেষী মহলের প্ররোচনায় মুষ্ঠিমেয় কয়েকজন ব্যবসায়ী এবং অব্যবসায়ী মিলে শেয়ার বাজারের অস্থিরতার রসদ জুগিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, শেয়ারবাজারে যে পতন হয়েছিল হয়তো তা ৩ থেকে ৪ মাসের মধ্যেই ঠিক হয়ে যেত। কিন্তু স্বার্থান্বেষী মহলের কারণে বাজার স্বাভাবিক হতে ৬ মাস সময় লেগেছে।

শেয়ারবাজার নিয়ে বর্ষীয়ান এ অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) বাজার মনিটরিংয়ে অনেকটা দুর্বলতা ছিল। কিছু সংখ্যক স্বার্থান্বেষী ব্যবসায়ী সেই সুযোগ নিয়ে শেয়ারবাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছিল। অনেকক্ষেত্রে এসইসি বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। ফলে ২০১১ সালের শুরুতে দ্রুত একটি পতন দেখতে হয়েছিল।

তবে সরকারের বলিষ্ঠ পদক্ষেপের মাধ্যমে দ্রুতগতিতে একটি তদন্ত কমিশনের রিপোর্ট তৈরি করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে অত্যন্ত কম সময়ের মধ্যে শেয়ার বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে বলে দাবি করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘আমরা যদি মুম্বাই, করাচি বা এ অঞ্চলের শেয়ারবাজারের দিকে তাকাই তাহলে দেখব পতন ও রিকোভারির সময়টা অনেক দীর্ঘ ছিল। কিন্তু সরকার সঠিক ও কম সময়ের মাধ্যমে শেয়ারবাজারের পতন রোধ করতে সক্ষম হয়েছে। তবে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের সময় দেখে শুনে বুঝে ভালো মৌলভিত্তি কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করতে হবে।

অন্যদিকে হুজগে বা গুজবে বিনিয়োগ করা যাবে না বলেও বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে দেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘এটি নিজেদের স্বার্থেই বিনিয়োগ করতে হবে। সাধারণ নীতি অনুযায়ী মোট মূলধনের সর্বোচ্চ তিনভাগের এক ভাগ দ্রুত মুনাফা অর্জনের জন্যে এবং দু’ভাগ মূলধন দীর্ঘমেয়াদি হিসেবে শেয়ারে বিনিয়োগ করতে হবে। ’

শেয়ারবাজার নিয়ে এ অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, শেয়ারবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সরকারকে দ্রুত ডিমিউচ্যুলাইজেশন করতে হবে। এ পদক্ষেপ গ্রহণ করলেই বাজারে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। তবে শেয়ারবাজারে বর্তমান অবস্থায় নতুন শেয়ারের যোগান বাড়াতে হবে। কারণ শেয়ারের বর্তমান চাহিদার তুলনায় যোগানও আরও বৃদ্ধি করতে হবে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১১৫৮ঘণ্টা, আগস্ট ০১, ২০০১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।