ঢাকা : মহাজোটকে সম্প্রসারণ লক্ষ্যে ছোট দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় ইতিবাচক সাড়া পায়নি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তাদের এ আলোচনার উদ্যোগ রাজনীতিতে তেমন একটা প্রভাবও পড়েনি।
মহাজোটে টানার জন্য যে দলগুলোকে টার্গেট করে আওয়ামী লীগ আলোচনায় অগ্রসর হচ্ছিল তার কোনো কোনোটি এরই মধ্যে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির জোটে ভিড়ে গেছে।
আলোচনার জন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ্য থেকে বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, এলডিপি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, সিপিবি ও গণফোরামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিলো।
কিন্তু এলডিপি গত শুক্রবার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করে পর দিন শনিবারই দলটির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তার দলের কঠোর অবস্থান স্পষ্ট করেছেন।
আওয়ামী লীগ তার সঙ্গে চরম খারাপ ব্যবহার করেছে বলেও অলি অভিযোগ করেছেন।
দলের প্রতিনিধি সভায় এ অভিযোগের পাশাপাশি আগামী বাজেট অধিবেশন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে পারবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট গঠনের সময় গণফোরাম, বিকল্প ধারা ও এলডিপি এ জোটে অন্তর্ভূক্ত ছিলো।
তবে মহাজোটে পুনরায় আসার ব্যাপারে গণফোরামের দিক থেকেও তেমন কোনো আগ্রহ নেই বলে জানা গেছে।
শুরুতে গণফোরাম আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল ও মহাজোটের শরিক হলেও ওয়ান ইলেভেনের পর এ দলটিকে আর জোটে দেখা যায়নি।
গণফোরাম পুনরায় মহাজোটে আসবে কিনা জানতে চাওয়া হলে দলটির সভাপতি ড. কামাল হোসেন এখনই সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
এ বিষয়ে ড. কামাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, প্রস্তাব এলে পর্টিতে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানাবো।
এদিকে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আব্দুল কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে তার বাসায় গিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলির সদস্য ওবায়দুল কাদের ও সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বৈঠক করেন।
কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাদের এ আলোচনায়ও তেমন ইতিবাচক সাড়া আসেনি বলে জানা গেছে।
শুধু আওয়ামী লীগ নেতারাই নয় বিএনপির নেতারাও তার সঙ্গে একাধিক বার বৈঠক করেছেন। এমনকি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও তার সঙ্গে বৈঠক করেন।
আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে কাদের সিদ্দিকী বাংলানিউজকে বলেন, ‘আলোচনা হয়েছে, আলোচনা আরো হতে পারে। ’
মহাজোটের সঙ্গে ঐক্যের ব্যাপারে দলগতভাবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি।
খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ওনার সঙ্গেও আরো আলোচনা হবে।
বিকল্প ধারা বাংলাদেশের নেতাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের বৈঠক হয়নি। তবে পুনরায় মহাজোটে আসার ব্যাপারে বিকল্প ধারারও তেমন আগ্রহ নেই বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) বাম দলগুলোকে নিয়ে জোট গড়ার উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে বাসদের সঙ্গে তারা যৌথভাবে কয়েকটি কর্মসূচি পালন করেছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে সিপিবির সভাপতি মনজুরুল আহসান খান বাংলানিউজকে বলেন, আমরা সকল বাম শক্তিকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে অগ্রসর হতে চাই। আমরা এ প্রয়াস অব্যাহত রেখেছি।
এদিকে আওয়ামী লীগ নেতাদের মতে, জোট সম্প্রসারণ প্রকৃত টার্গেট নয়। মূলত সরকারের উপর বিরোধিতার চাপ কমাতে মহাজোটের বাইরে ছোট দলগুলোর সঙ্গে এ আকস্মিক আলোচনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সরকারের আড়াই বছর পার হতে না হতেই বিরোধী দলসহ বিভিন্ন দিক থেকে হঠাৎ করেই সরকার বিরোধী তৎপরতা বেড়ে যায়। এমনকি ক্ষমতাসীন মহাজোটের থাকা দলগুলোও সংবিধান সংশোধনসহ নানা ইস্যুতে সরকারের বিরোধিতা শুরু করে।
এ পরিস্থিতিতে দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের মহাজোটের বাইরের দলগুলোর পাশাপাশি মহাজোট শরিকদের সঙ্গেও যোগাযোগ করেন।
তিনি জোটের শরিক জাতীয় পর্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদসহ কয়েকটি দলের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকও করেছেন।
জোটের বাইরে দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির চেষ্টা এবং জোট শরিকদের শান্ত রাখার জন্যই এ উদ্যোগ ন্ওেয়া হয় বলে আওয়ামী লীগ নেতারা জানান।
প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের আন্দোলন কর্মসূচির সঙ্গে অন্য দলগুলোর কর্মসূচি ও লক্ষ্য এক না হলেও সার্বিকভাবে সকল বিরোধিতাই সরকারের উপর এসে পড়ছে।
জোটে আসার সম্ভাবনা না থাকলে নুন্যতম সম্পর্ক যাতে গড়ে উঠে এই টার্গেট নিয়ে বিভিন্ন দলের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে আওয়ামী লীগ নেতারা আরো মন্তব্য করেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলির সদস্য ওবায়দুল কাদের বাংলানিউজকে বলেন, জোট সম্প্রসারণের জন্য আমরা আলোচনা করছি না। গণতন্ত্র, টেকসই উন্নয়নে লক্ষ্যে এবং জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমরা সকলকে নিয়ে এক সঙ্গে কাজ করতে চাই।
জোট সম্প্রসারণের প্রয়োজন এখন নেই। তবে কেউ আসতে চাইলে আমরা মহাজোটে তাদের স্বাগত জানাবো। আমরা সবার সঙ্গে আলোচনা করতে চাই। দূরত্ব কমিয়ে সমঝোতার সেতু বন্ধন তৈরি করতে চাই।
শিগগিরই মহাজোটের আনুষ্ঠানিক আলোচনা হবে। এরই মধ্যে আমি মহাজাট শরিকদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করেছি।
বাংলাদেশ সময় ১৮৫০ ঘন্টা, আগস্ট ১, ২০১১