ঢাকা, বুধবার, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

সরকার কী চায় আমি বুঝি না: ড. ইউনূস

মাহমুদ মেনন, আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০১১
সরকার কী চায় আমি বুঝি না: ড. ইউনূস

ঢাকা: সরকারের বিরুদ্ধে ক্রমেই সোচ্চার হয়ে উঠছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তবে দেশে নয় এবার বিদেশে অবস্থান নিয়ে এ কাজটি করছেন তিনি।

আন্তর্জাতিক একটি সংবাদ মাধ্যম তার বরাত দিয়ে বলেছে, ‘বাংলাদেশ সরকার তার সারা জীবনের অর্জনকে ধ্বংস করে দিতে চাচ্ছে। সরকারই তার বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছে। ’

পশ্চিমা একটি প্রভাবশালী সংবাদপত্রকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস আরও বলেন, ‘আমি সরকারের উদ্দেশ্য কি তা বুঝতে পারছি না, আমি জানি না এর মধ্য দিয়ে দেশ কী অর্জন করতে যাচ্ছে, সরকারই বা কী চাচ্ছে। ’

দেশে কোনো সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে নারাজ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তবে সাম্প্রতিক বিপর্যয় ও গ্রামীণ ব্যাংকের মহা ব্যবস্থাপকের পদটি আদালতের নির্দেশে ছাড়তে বাধ্য হওয়ার পর পশ্চিমা ওই সংবাদপত্রটির কাছেই ড. ইউনূস প্রথম মুখ খুললেন।

সংবাদমাধ্যমটি লিখেছে, ড. ইউনূসই বাংলাদেশের সবচেয়ে বিখ্যাত সন্তান, বিশ্বে গরিবের ব্যাংকার হিসেবেই যার পরিচয়। ২০০৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী এবং বিশ্বজুড়ে ক্ষুদ্রঋণ ও সামাজিক বাণিজ্যের প্রচারকারী হিসেবেই তাকে সবাই চেনে।

হিলারি ক্লিনটন, নিকোলা সারকোজি, মেরি রবিনসনের সঙ্গে ইউনূসের ঘনিষ্ট বন্ধুত্ব রয়েছে উল্লেখ করে রিপোর্টে লেখা হয়েছে ‌`এই ব্যক্তিটি তার নিজের দেশেই কোনো স্বীকৃতি পেলেন না। ` এক্ষেত্রে `গেঁয়ো যোগী ভিখ পায় না` (‘অ্যা প্রফেট ইজ নেভার রিকগনাইজড ইন হিজ ওন কান্ট্রি’) প্রবাদটির কথাও উল্লেখ করা হয় ওই রিপোর্টে।

এতে বলা হয়, ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘গরিবের রক্ত চুষে খাওয়ার’ অভিযোগ এনেছেন কিন্তু তার বিরুদ্ধে তদন্তে ৭০ এর কোটা পার করেও গ্রামীণ ব্যাংকের শীর্ষপদে থাকার বিষয়টি ছাড়া আর কোনও অভিযোগই ধোপে টেকেনি। আর এ অভিযোগ প্রথম উঠে আসে অর্থমন্ত্রীর মুখ থেকে, যার নিজের বয়স ৭৭ বছর।

ইউনূস সংবাদপত্রটিকে বলেন, ‘দেশের সংবাদ মাধ্যমের অবমাননায় আমি মোটেই আহত হইনি। তবে আমি হতাশ এবং উদ্বিগ্ন। একটি প্রতিষ্ঠান দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে একটি অবস্থানে পৌঁছে গেছে, দেশের জন্য যা অনেক কিছু বয়ে এনেছে, দেশের মানুষকে ক্ষমতা দিয়েছে তা ধ্বংস হোক সেটা আমি চাই না। ’

তিনি বলেন, ‘অকেকেই ক্ষুব্ধ হয়েছেন, তবে ক্ষোভ বা ক্রোধ কোনো সমাধান এনে দিতে পারবে না। ’

তিনি বলেন, `গ্রামীণ ব্যাংক ধ্বংস হলে ক্ষতি অনেক। গত কয়েকটি মাস ধরে প্রতিষ্ঠানটির ২২ হাজার কর্মী আর ৮৩ লাখ ৬০ হাজার ঋণগ্রহীতা, যাদের অধিকাংশই নারী, এ নিয়ে চ’ড়ান্ত বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছে। `

রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ড. ইউনূস সাময়িকভাবে বেকার হয়ে পড়লেও তার জন্য অফারের কোনো অভাব নেই। সারাবিশ্ব থেকেই তার ব্যাপারে আগ্রহ দেখানো হচ্ছে। ইউনূস স্বীকার করেছেন তাকে কেউ কেউ প্রতিষ্ঠানের প্রধান করতে চাইছে, কেউ কেউ কোনো উদ্যোগের নেতৃত্ব দিতে ডাকছে ,কেউ দিতে চাচ্ছে বড় বড় পদ; কিন্তু তার একটাই কথা-- তিনি বাংলাদেশেই থাকতে চান।

দারিদ্র নিরসনে ক্ষুদ্রঋণ ভারতে সফর হয়নি, সেখানে ঋণের কারণে আত্মহত্যার বহু ঘটনাও ঘটে গেছে।   এ প্রসঙ্গে ইউনূস, ক্ষুদ্রঋণের পক্ষেই থাকছেন। তিনি বলেন, `এর মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষ উপকার পেয়েছে। `

তবে তিনি বলেন, ক্ষুদ্র ঋণকে যে একমাত্র উপায় হিসেবে দেখা হবে এবং এর মাধ্যমে যে সব হয়ে যাবে তা আমি কখনো বলিনি। আর সে কারণেই কৃষিখাত থেকে শুরু করে টেলিফোন পর্যন্ত আরও ৫০টি প্রতিষ্ঠান চালু করেছি। নিশ্চয়ই কর্মসংস্থান দারিদ্র বিমোচনের অন্যতম উপায়। ঋণের টাকা পরিশোধের জন্যও কাজ করাটা জরুরি।

নিজেও আরও কাজ করে যাবেন বলে জানান ড. ইউনূস। তিনি বলেন, ‘কাজ করে যাওয়ার মতো করেই আমি নিজেকে তৈরি করেছি। ’

বাংলাদেশ সময় ২০২৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।