ঢাকা: বাংলাদেশের সোনালী আঁশ পাট ফিরে পাচ্ছে পুরোনো সুদিন। চালু হচ্ছে বন্ধ হওয়া পাটকল গুলো।
এক্সপোর্ট প্রোমোশন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১০-১১ অর্থবছরে মে পর্যন্ত ১০৩ কোটি ৫ লাখ ডলারের পাট রপ্তানি হয়েছে, অথচ ২০০৯-১০ অর্থবছরে একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ৭২ কোটি ৫৫ লাখ ডলারের। অর্থাৎ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে শতকরা ৪২.০৪ ভাগ ।
ইপিবি থেকে জানা যায়, ২০১০-১১ অর্থবছরের মে পর্যন্ত ৯৯ কোটি ৯৭ লাখ ডলার পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু রপ্তানি হয়েছে ১০৩ কোটি ৫ লাখ টাকার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে শতকরা ৩.০৯ ভাগ বেশি।
পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি দিন দিন বাড়ছে। অথচ ১৯৮০ ও ১৯৯০’র দশকে পাট বিক্রি করতে গিয়ে ক্রেতা না পেয়ে চাষী পাট নদীতে ফেলে দিয়েছে। অনেক স্থানে বাজারে পাট পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
যদিও একসময় পাটই ছিল বাংলাদেশের প্রধান রফতানি পণ্য।
মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয় ছিল ৩৪ কোটি ৮৪ লাখ ডলার। এর মধ্যে শুধু কাঁচা পাট ও পাটজাত দ্রব্য রপ্তানি করে আয় হয়েছে ৩১ কোটি ৩১ লাখ ডলার। অর্থাৎ মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৯০ শতাংশ এসেছে পাট থেকে।
১৯৭৯-৮০ অর্থবছরে ৫৫ কোটি ২৫ লাখ ডলারের পাট রফতানি হয়েছে। সে বছর মোট রপ্তানি আয় ছিল ৭৪ কোটি ৯৪ লাখ ডলার। মোট রফতানি আয়ের ৭৪ শতাংশ এসেছে পাট থেকে।
তারপর থেকেই পাট রফতানির পরিমাণ ও আয় কমতে থাকে।
১৯৮৯-৯০ অর্থবছরে পাট থেকে রফতানি আয় হয়েছে ৪৫ কোটি ৫৯ লাখ ডলার। সে বছর মোট রপ্তানি আয় ছিল ১৫২ কোটি ৩৭ লাখ ডলার। মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৩০ শতাংশ এসেছে পাট থেকে।
সময়ের সাথে রপ্তানি আয় আরও কমেছে। ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছরে কাঁচা পাট রফতানি হয়েছে মাত্র ৭ কোটি ১৬ লাখ ডলার। আর পাটজাত পণ্যের রপ্তানি হয়েছে ২৬ কোটি ৫৮ লাখ ডলার। মোট রফতানির মাত্র ৫.৯ শতাংশ।
তার পরের বছর গুলোতে পরিমাণ ও আয় দুটোই আরও কমেছে। কারণ হিসেবে বলা হয়, পাট ধূলা-বালি ধরে রাখে। এতে পরিবেশ দূষণ হয়। তাই বিশ্বের উন্নত দেশগুলো পাট বর্জন করতে থাকে। পাটের বস্তা ও ব্যাগের স্থান দখল করে নেয় পলিপ্রোপাইলিন ও পলিথিনের বস্তা ও ব্যাগ। কৃত্রিম কার্পেটও বাজার দখলে নেয়।
তবে ফিরে আসছে পাটের সে সুদিন। উন্নত দেশগুলো বুঝতে পেরেছে পলিপ্রোপাইলিন ও পলিথিনের বস্তা ও ব্যাগ পরিবেশ দূষণের জন্য দায়ী। তাই দেশগুলো আবার পাটের পণ্যে ফিরে যাচ্ছে। আর তাই বাংলাদেশে দিন দিন বাড়ছে পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি আয়।
সূত্র জানায়, পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে ২০০৫- ০৬ অর্থবছরে বাংলাদেশ আয় হয়েছিল ২৯ কোটি ৮৯ লাখ ডলার। ২০০৬-০৭ অর্থবছরে আয় হয় ৩০ কোটি ৭৬ লাখ, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে আয় হয় ৩৫ কোটি ৪২ লাখ, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে আয় হয়েছে ৪৩ কোটি ১১ লাখ ডলারের।
এছাড়া, ২০০৯-১০ অর্থবছরে আয় হয়েছিল ৭৮ কোটি ৭৯ লাখ ডলার। আর ২০১০-১১ অর্থবছরের ১১ মাসেই রপ্তানি হয়েছে ১০৩ কোটি ৫ লাখ ডলারের। অর্থাৎ গত অর্থবছরের তুলনায় এ অর্থবছরের ১১ মাসেই পাটের রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পেয়েছে ৩১ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
পাটের সম্ভাবনার কথা জানতে চাইলে বাংলাদেশ জুট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ফরহাদ আহমেদ আখন্দ বাংলানিউজকে বলেন, ‘দেশে নতুন নতুন জুট মিল চালু হচ্ছে। আগে যেখানে কমবেশি ১০০ টি জুট মিল ছিল, এখন সেখানে ১৬০ থেকে ১৭০ টি জুট মিল চালু হয়েছে। যেহেতু মিল বাড়ছে, তাই রপ্তানিও বাড়ছে। ’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন পাট চাষ করে কৃষক লাভবান হচ্ছে। তাই চাষীরাও পাট চাষে আগ্রহী হচ্ছে। পাটকে তিনি বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সম্ভাবনাময় খাত বলে উল্লেখ করেন। ’
ইপিবির উপ-পরিচালক জাকির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিশ্ববাজারে পাট পণ্যের চাহিদা বেড়েছে। তবে বাংলাদেশ থেকে পাট পণ্যের চেয়ে পাটের কাঁচামালই বেশি রপ্তানি হচ্ছে। ’
পাটজাত পণ্য রপ্তানি বাড়াতে পারলে বৈদেশিক মুদ্রা অনেক বেশি অর্জন করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।
জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রোমোশন সেন্টারের (জেডিপিসি) নির্বাহী পরিচালক খন্দকার মোখলেছুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘পাট ও পাটজাত পণ্যের উৎপাদন বাড়াতে আমরা সারাদেশে পাট চাষীদের বিভিন্নভাবে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। সেই সঙ্গে বিভিন্ন মেলার আয়োজন করে আমরা তাদের উৎপাদনে উৎসাহিত করছি। ’
তিনি আরও বলেন, ‘ বন্ধ হয়ে যাওয়া পাটকলগুলো আবার চালু হচ্ছে। চাষীরাও ভাল মূল্য পাচ্ছেন। তাই পাট পুরনো ঐতিহ্য ফিরে পাবে বলে আশা করছি। ’
জেডিপিসির পরিচালক (মার্কেটিং) সীমা বোস অধরা বলেন, ‘দিন দিন পাট ও পাটজাত পণ্য উৎপাদন বাড়ছে। বর্তমানে ৮০০ পাটজাত পণ্য তৈরি হচ্ছে। ’
সমস্যা চিহ্ণিত করে সঠিক পদক্ষেপের মাধ্যমে পাটের পুরোনো সুদিন ফিরে পাওয়া সম্ভব বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১২ ঘণ্টা, জুলাই ০৪, ২০১১