ঢাকা, বুধবার, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

শেষ হরতালেও মাঠে নেই মহানগর বিএনপি

আসাদ জামান, স্টাফ করেসপন্ডে | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫০ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০১১
শেষ হরতালেও মাঠে নেই মহানগর বিএনপি

ঢাকা: কিছুতেই যেন ঘুম ভাঙছে না ঢাকা মহানগর বিএনপির। রাজধানীতে যে কোন রাজনৈতিক কর্মসূচি জমানোর অন্যতম এই দলীয় ইউনিটটির নেতা-কর্মীদের দীর্ঘ দিন ধরেই আন্দোলনের মাঠে কার্যকর কোন ভূমিকা পালন করতে দেখা যাচ্ছে না।

বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতিজনিত মামলার কারণে মহানগর কমিটির আহবায়ক সাদেক হোসেন খোকার আত্মরক্ষামূলক অবস্থানও বেশ ভোগাচ্ছে বিএনপিকে।

সর্বশেষ টানা ৩৬ ঘণ্টার হরতালেও মহানগর নেতা-কর্মীদের গা-ছাড়া ভাবই লক্ষ্য করা গেছে। হরতালের প্রথম দিন সকালে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কেবল চেহারা দেখিয়েই দায় সেরেছেন মহানগর বিএনপির আহবায়ক সাদেক হোসেন খোকা। এরপর হরতালের সমাপ্তি ব্রিফিংয়ের ঠিক আগে আগে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসতে দেখা গেছে তাকে।

আর তার মহানগর বিএনপিতে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে থাকায় তার অনুসারীরাও যেন হরতালের মাঠ থেকে সরেই ছিলেন।

ক্ষমতাসীন মহাজোটের আমলে ডাকা বিএনপির প্রথম চার হরতালে মহনগর নেতা-কর্মীদের তেমন একটা তৎপর দেখা না যাওয়ার জন্য অযুহাত হিসেবে অনেকেই দীর্ঘ দিন ধরে মহানগর কমিটি না থাকার কথা বলে আসছিলেন।

এ প্রেক্ষাপটে হরতালসহ বড় ধরনের কর্মসূচি সফল করতে গত ১৫ এপ্রিল সাদেক হোসেন খোকাকে আহ্বায়ক ও বিএনপির অর্থনীতি বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সালামকে সদস্য সচিব করে ২১ সদস্য বিশিষ্ট মহানগর কমিটি ঘোষণা করা হয়।

এর পর রাজধানীতে হরতালসহ যে কোন কর্মসূচি কঠোরভাবে পালন হবে বলেই জোর আওয়াজ ওঠে দলীয় ফোরামে।  

কিন্তু খোকা ও তার অনুসারীদের আত্মরক্ষামূলক কৌশলী অবস্থানের কারণে গত ৫ জুনের হরতালেও ফ্লপ থাকে মহানগর বিএনপি।

সর্বশেষ গত ১২ জুন শুরু হওয়া টানা ৩৬ ঘণ্টার হরতালেও সেই ধারাবাহিকতা বজায় থাকে। আর তার প্রতিদ্বন্দ্বী মির্জা আব্বাস চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে থাকায় তার অনুসারীরাও নিরুত্তাপ সময় কাটান।

দলীয় সূত্র মতে, গত ১০ জুন হরতাল ঘোষণার পর ১১ জুন মহাগনর বিএনপির নেতাদের ডেকে রাজপথে থাকার কঠোর নির্দেশ দেন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ওই নির্দেশ পেয়ে সাদেক হোসেন খোকা তার নগর বিএনপি নিয়ে হরতালে কড়া পিকেটিংয়ের প্রস্তুতি নিতে থাকেন। এ পরিস্থিতিতে সাদেক হোসেন খোকার ৮টি মামলা পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ নেয় সরকার পক্ষ। আর এটাই সাদেক হোসেন খোকার হঠাৎ চুপসে যাওয়ার প্রধান কারণ বলে অনানুষ্ঠানিক দাবি উঠছে।

তবে নিজেদের পক্ষে সাফাই গেয়ে কারো কারো দাবি, এখনো আড়াই বছর বাকি থাকায় সবটুকু শক্তি নিয়ে মাঠে নেমে ক্লান্ত হতে চায় না মহানগর বিএনপি। এক্ষেত্রে ধীরে চলো নীতিতে এগিয়ে যেতেই আগ্রহী তারা।

মহানগর বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতা বাংলানিউজকে জানান, এমনিতেই মেয়াদের অতিরিক্ত সময় পার করছেন। তারওপর আছে মামলার জুজু। তাই এ মুহূর্তে কোমর কষে মাঠে নেমে সরকারের রোষাণলে পড়ে মেয়র পদ হারাতে খোকা যেমন চাইছেন না, তেমনি চাইছেন না জেলে-জুলুমের শিকার হতে।

অপরদিকে নগর বিএনপির দায়িত্ব না পাওয়ায় রাজপথের লড়াকু ভূমিকা পালনে সিদ্ধহস্ত মির্জা আব্বাস এখন অনেকটাই দায়মুক্ত মনে করছেন নিজেকে। বিভিন্ন ইস্যুতে তার সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধা স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী, সমাজ কল্যাণ সম্পাদক আবুল খায়ের ভুঁইয়া, সাবেক সাংসদ সালাউদ্দিন আহমেদ, কমিশনার সাজ্জাদ জহির, খিলগাঁও থানা বিএনপির সভাপতি ইউনুস মৃধাকে হরতালের মাঠে খুব একটা দেখা যায়নি। যার যার এলাকায় নামকাওয়াস্তে হরতাল পালন করেছেন তারা।

এদিকে ৩৬ ঘণ্টা হরতালের প্রথম দিনে হরতাল শুরুর প্রাক্কালে ও শেষ দিনে হরতালের সমাপ্তি ব্রিফিংয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাদেক হোসেন খোকাকে দেখা গেছে। এছাড়া আর কোনো এলাকায় মিছিল, মিটিং বা পিকেটিংয়ে খুঁজে পাওয়া যায়নি তাকে।

তবে খোকা অনুসারীদের দাবি, মাঠে না নামলেও বিভিন্ন স্পটে দলীয় নেতা-কর্মীদের পিকেটিং তদারকি করেছেন খোকা। এ মুহূর্তে রাজপথে নেমে এসে বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রমের ভাগ্য বরণ করতে রাজি নন তিনি।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আব্দুস সালাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘রাস্তায় নেমে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে নিজেকে জাহির করার মধ্যে কোনো কৃতিত্ব নেই। বরং নিজেকে রক্ষা করে আন্দোলনের জন্য দলীয় নেতা-কর্মীদের সংগঠিত করাই এখন বড় কাজ। ’

তিনি বলেন, ‘১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে যখন আমরা বিরোধী দলে ছিলাম তখনকার পরিস্থিতি আর এখনকার পরিস্থিতি এক নয়। তখন আমাদের উপর নিপীড়ন, নির্যাতন চললেও হরতালের সময় রাস্তায় নামতে পেরেছি। মিছিল-মিটিং করতে পেরেছি। কিন্তু এবার সে সুযোগও দিচ্ছে না। রাস্তায় নামতে গেলেও আটক করছে। তাছাড়া এমনতো নয় যে, আমরা এখনই সরকারের পতন ঘটিয়ে ফেলব। যেহেতু হাতে সময় আছে। সেহেতু ধীরে চল নীতিতেই এগুতে চাই। ’

আব্দুস সালাম আরো বলেন,  ‘বিএনপির হরতাল এখন আর সেন্ট্রাল অফিস কেন্দ্রিক নয়। মহানগরের ১০০টি স্পটে তা ডিসেন্ট্রালাইজ করা হয়েছে। সে কারণে হয়ত মনে হতে পারে আমাদের কর্মীরা মাঠে নেই। ’

মির্জা আব্বাসের অভাব অনুভব করছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দলের মধ্যে পদ-পদবী নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকতে পারে। কিন্তু জাতীয় ইস্যুতে সেই বিষয়টি প্রভাব ফেলবে না। ’

আন্দোলন কর্মসূচি থেকে দূরে রাখার জন্য সাদেক হোসেন খোকার মামলাগুলো পুনরুজ্জীবিত করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন আব্দুস সালাম।

প্রসঙ্গত, কোন অডিট ফার্ম দিয়ে এখনো পর্যন্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনে (ডিসিসি) কোন অডিট (নীরিক্ষা) পরিচালনা না করায় প্রতিষ্ঠানটির রাজস্ব আয় ও ব্যয়ের প্রকৃত হিসাব জানা যায় না। বিষয়টি নিয়ে বেশ বেকায়দায় আছেন খোকা।

এছাড়া তার বিরুদ্ধে সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বিভিন্ন নির্মাণ কার্যক্রম ও কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম, ঠিকাদারদের বিশেষ সুবিধা পাইয়ে দেওয়া, নিয়ম বহির্ভূতভাবে হাট-দোকান-লেক লিজ দেওয়া, সেবা কার্যক্রম, মশক নিধন, ভূমি উন্নয়নও  ওষুধ ক্রয় ও কবর সংরক্ষণে অনিয়ম আর বিশেষ কর্মকর্তা ও দলীয় লোকজনকে বিশেষ সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এসব কারণে বেশ ক’টি মামলাও আছে তার নামে। ক্ষমতাসীন মহলে এখন ওই মামলাগুলোই পুনরুজ্জীবিত করার প্রক্রিয়া চলছে বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

আর এ কারণেই খোকা সরকারি অবস্থানে কঠোর ভূমিকা নিচ্ছেন না বলে জানিয়েছে তারই ঘনিষ্ঠ সূত্র।    

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।