ঢাকা, বুধবার, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

পশ্চিমবঙ্গে সরকার পরিবর্তনেও বহাল তবিয়তে বাংলাদেশের ৯ শীর্ষ চরমপন্থী

শরীফ বিশ্বাস, জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৭ ঘণ্টা, জুন ৬, ২০১১
পশ্চিমবঙ্গে সরকার পরিবর্তনেও বহাল তবিয়তে বাংলাদেশের ৯ শীর্ষ চরমপন্থী

কুষ্টিয়া: পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতার পালাবদলেও সেখানে আত্মগোপন করে থাকা বাংলাদেশি সন্ত্রাসীরা একপ্রকার নিরাপদেই আছে।

সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে বামফ্রন্টকে হটিয়ে মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বাধীন তৃণমূল-কংগ্রেস জোট ক্ষমতায় আসার পরও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় বাংলাদেশের বিশেষ করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৯শীর্ষ চরমপন্থী আগের মত বহাল তবিয়তেই আছেন বলে জানা গেছে।



তারা সেখানে বসে একই কায়দায় দেশের ভেতরে নিজ নিজ এলকায় চাঁদাবাজিসহ সন্ত্রাসী কর্মকা- নিয়ন্ত্রণ করছেন। নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ইউপি নির্বাচন, টেন্ডারবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকা- তদারকি করছে তারাই।

কে কোথায়?
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের কুখ্যাত চরমপন্থী সন্ত্রাসী পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ ব্যক্তি জাতীয় নেতা কাজী আরেফ হত্যা মামলার অন্যতম প্রধান আসামি মান্নান মোল্ল¬া রয়েছেন ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার রানীনগর থানা এলাকায়।

একই এলাকায় রয়েছেন তারই সহযোগী কুষ্টিয়া শহরের পূর্ব মজমপুর এলাকার মাদক সম্রাট ও অস্ত্র ব্যবসায়ী বিপুল চৌধুরী।

পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের নির্ভরযোগ্য সূত্র বাংলানিউজকে জানিয়েছে, তারা দু’জন গত ৭বছর ধরে সেখানে অবস্থান করছেন। সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় এরা গ্রামীণ ফোন ও বাংলালিংক টাওয়ার ব্যবহার করে সন্ত্রাসী কর্মকা- পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করছে।

জাসদ গণবাহিনীর শীর্ষ নেতা কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পশ্চিম আব্দালপুর গ্রামের  কালু ওরফে রাজু ওরফে কমল ও তার সেকেন্ড-ইন-কমান্ড ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুণ্ড এলাকার ভাইনা গ্রামের আলতাব মেম্বর থাকেন পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁ মহকুমার গাইঘাটা থানা এলাকার বিধান সরকারের বাড়িতে। কালুর ফুফাত ভাই বড় ফারুক ওরফে বাদলও থাকেন কালুর ছত্রছায়ায়ই।
 
গণমুক্তিফৌজের শীর্ষ নেতা কুষ্টিয়া সদর উপজেলার দহকুলা গ্রামের বাদশা ওরফে সম্রাট থাকেন মুর্শিদাবাদ জেলার রানীনগর থানা এলাকায়। তবে সম্প্রতি তিনি কুষ্টিয়ায় অবস্থান করছেন এমন সংবাদ পাওয়া গেছে। দলে চলমান সংকট মোকাবিলায় তিনি কুষ্টিয়াতে এসেছেন বলে সূত্র জানিয়েছে।

খুলনা জেলার বাসিন্দা বিপ্ল¬বী কমিউনিস্ট পার্টির নেতা পুরো ম-ল যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলায় সন্ত্রাসী কর্মকা- পরিচালনা করলেও তিনি এখন থাকেন ভারতের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বারাসাতের মধ্যমগ্রাম এলাকায়।

অপরদিকে, বাংলাদেশে র‌্যাবের কর্মকা- শুরুর পর থেকে বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির দুই শীর্ষ নেতা আব্দুল লতিফ লাট্টু ও স্বপন চক্রবর্তী ভারতে পালিয়ে গেছে বলে খবর চাউর হলেও লাট্টু বর্তমানে রাজধানী ঢাকার কোথাও অবস্থান করছে বলে পুলিশের কাছে তথ্য আছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। তবে পুলিশ তাকে ধরতে পারছে না বলে সূত্র জানায়।    

বাংলাদেশ-ভারত আলোচনা প্রয়োজন
ভারতের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার ডিএসপি সমরেন্দ্র দাস বাংলানিউজকে উলে¬খিত সন্ত্রাসীদের ভারতে অবস্থানের কথা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, তারা সেখানে ৭/৮বছর ধরে অবস্থান করছে। দেশে যোগাযোগের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার স্বার্থে তারা ভারতীয় মোবাইল ফোন ব্যবহার না করে করছে সিটিসেল, বাংলালিংক ও গ্রামীণ ফোনের টাওয়ার।

সম্প্রতি তৃণমূল সরকার পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসার পর তাদেরকে পাকড়াও করে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো বা সেদেশেই শাস্তির মুখোমুখি করার বিষয়ে প্রশ্ন করলে ডিএসপি সমরেন্দ্র বাংলানিউজকে জানান, সবেমাত্র নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। সরকারেরও সদিচ্ছা রয়েছে বাংলাদেশি সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারপূর্বক  নিজদেশে হস্তান্তর করা।

তিনি বলেন, ‘অচিরেই তারা আইনের আওতায় আসবে। ’

তবে নতুন করে বাংলাদেশ-ভারত সরকারি পর্যায়ে আলোচনা সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলেও তিনি মনে করেন।

প্রত্যেকের নামে হত্যাসহ ১৫-২০টির বেশি মামলা
উল্লে¬খিত চরমপন্থী সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে কুষ্টিয়ার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার সুভাষচন্দ্র সাহা বাংলানিউজকে বলেন, ‘তারা সবাই পুলিশের তালিকাভূক্ত সন্ত্রাসী। প্রত্যেকের বিরুদ্ধে হত্যাসহ ১৫/২০টির অধিক মামলা রয়েছে। অধিকাংশ সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার এড়াতে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে অবস্থান করছে। ’

তিনি জানান,  যারা বাংলাদেশে রয়েছে তাদেরকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হচ্ছে।

সম্প্রতি ভারতে প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীদের হাতে বাংলাদেশী চরমপন্থী গণবাহিনীর শীর্ষ নেতা আইনাল হোসেন ওরফে আনু খুন হন। আইনালকে প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীরা কৃষ্ণনগর থানার নবদ্বীপ এলাকায় হত্যা করে গঙ্গায় লাশ ভাসিয়ে দেয়।

এদিকে, এলাকায় থেকে এখনও সংগঠনকে চাঙ্গা করে রেখেছেন নিষিদ্ধ গণমুক্তিফৌজের সামরিক কমান্ডার কুষ্টিয়ার সিদ্দিক ও রুহুল। তারা চাঁদাবাজীসহ বিভিন্ন অপকর্ম করে যাচ্ছেন নিরবে।

সূত্র জানায়, এমন অভিযোগ ও তথ্য পুলিশের কাছে থাকলেও তাদেরকে গ্রেপ্তার করতে পারছে না পুলিশ।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৩ ঘণ্টা, ০৬ জুন, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।