ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

কাজী নজরুল ইসলাম: সব সময়ের জন্য প্রাসঙ্গিক

মোস্তফা মোরশেদ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৩ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০২৩
কাজী নজরুল ইসলাম: সব সময়ের জন্য প্রাসঙ্গিক

বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের এক অবিস্মরণীয় সত্তা জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তাঁর মহিমান্বিত ও কালজয়ী সৃষ্টি বাঙালির অন্তহীন আনন্দ ও প্রেরণার উৎস।

আমাদের জাতীয় চেতনা ও নান্দনিকতা বিকাশে তাঁর ভূমিকা অনস্বীকার্য। নজরুলকে নিয়ে আলোচনা করার সত্যিই আমার কোন যোগ্যতা নেই। তবে সে ছোটবেলায় এক মোহাচ্ছন্ন আবেগ নিয়ে তাঁকে পড়তে শুরু করেছিলাম। ‘লিচু চোর’ ছড়া দিয়েই তার প্রতি আমার ভালোবাসার শুরু। সম্ভবত লিচু চোর আমার ভালোলাগার প্রথম ছড়া। এখানে সম্ভবত বললেও যেটি আমি নিশ্চিত তা হলো ‘সঞ্চিতা’ আমার পড়া প্রথম সম্পূর্ণ কাব্যগ্রন্থ। একজন নজরুলপ্রেমী হিসেবে এ লেখায় তাঁকে নিয়ে দশটি প্রসঙ্গের অবতারণা করতে চাই।

প্রথমত, রবীন্দ্র-উত্তর বাংলাসাহিত্যে যে কয়জন কবি নিজেদের জন্য আসন তৈরি করতে পেরেছিলেন নজরুল তাদের মধ্যে অন্যতম। রবীন্দ্রনাথ পরবর্তী কবিদের মধ্যে বিখ্যাত ছিলেন একদিকে নজরুল, আরেকদিকে ছিলেন পঞ্চপাণ্ডব নামে বিখ্যাত পাঁচজন কবি। এ পঞ্চপাণ্ডবের ৫ জন কবি হলেন অমিয় চক্রবর্তী, বুদ্ধদেব বসু, জীবনানন্দ দাশ, বিষ্ণু দে, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত। সে সময়টাতে রবীন্দ্র প্রভাবের বাইরে গিয়ে তারা বাংলাসাহিত্যে অবদান রেখেছিলেন। এ পাঁচজন একদিকে, আর নজরুল ছিলেন একাই একদিকে। বুদ্ধদেব কবি নজরুল সম্পর্কে লিখেছেন—‘নজরুল ছিল একাই একশো’।

দ্বিতীয়ত, বাংলাসাহিত্যের বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী কাজী নজরুল ইসলাম। তাঁর সাহিত্যকর্মের পরিমাণ অনেক, লিখেছেন চার হাজারের বেশি গান, সম্পাদনা করেছেন একাধিক পত্রিকা, সরাসরি সংশ্লিষ্ট ছিলেন রাজনীতিতে, সংযোগ ছিল মানবকল্যাণমূলক অনেক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। জীবনের সাথে সম্পৃক্ত এমন কোনো বিষয় পাওয়া যাবে না যেখানে নজরুল অনুপস্থিত। মানুষের জীবনের উপাখ্যান নিয়ে গড়ে উঠেছিল তাঁর ছোটগল্প, প্রেম ও নানা মনোসংঘাত কিংবা মনের সাথে বাহ্যিক জগতের নানা দ্বন্দ্ব-ব্যাকুল কথকতা নিয়ে গড়ে উঠেছিল তাঁর কথাসাহিত্য, উপন্যাস। জীবনের গভীর উপলব্ধি ও নানা দার্শনিক বোধসম্পৃক্ত সুখানুভূতি ও বেদনা নিয়ে গড়ে উঠেছিল তাঁর কাব্য ও সংগীত, সৃষ্টি হয়েছিল তাঁর চিঠিপত্র এবং নাট্যাঙ্গিকে রচিত নানা সৃষ্টিমালা।

অসম্ভব প্রতিভাবান এ কবির প্রতিভার একটি উদাহরণ দেই। ১৯১৪ সালে নজরুল কাজীর শিমলা থেকে পাঁচ মাইল দূরে দরিরামপুর হাইস্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন। স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষায় তিনি শীর্ষতম স্থান অধিকার করে সপ্তম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণিতে উঠেই পালিয়ে রানীগঞ্জে ফিরে আসেন।

তৃতীয়ত, সাহিত্যের এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে নজরুল বিচরণ করেননি। সবচেয়ে অবাক করার বিষয়, মুসলমানদের ধর্মীয় সঙ্গীত যেমন লিখেছেন তেমনি সনাতন ধর্মালম্বীদের জন্য রচনা করেছেন ভজন সঙ্গীত, শ্যামা সঙ্গীত বা কীর্তন। আর এ কারণে তিনি হিন্দু, মুসলিম উভয় সম্প্রদায়কে ধর্মান্ধতা পরিহার করে মানবিক জীবনের আহবান জানাতে গিয়ে যেমন সমাদৃত হয়েছেন, তেমনি উভয় সম্প্রদায়ের ধর্মান্ধদের কাছে হয়েছেন উপেক্ষিত ও নিন্দিত। নজরুল খুব ভালোকরেই জানতেন, হিন্দু-মুসলমানের মিলিত আবাস ভারতবর্ষ থেকে ঔপনিবেশিক শাসনের উচ্ছেদ ঘটিয়ে ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জনের জন্যে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে সাম্য স্থাপন সবচেয়ে বেশি জরুরি। নজরুল ইসলাম হিন্দু ও মুসলমান ঐতিহ্য এবং আবহমান বাঙালির সমবায়ী ঐতিহ্যকেই বিস্ময়কর সাফল্যে শিল্পশ্রী দান করেছেন।

১৯২৬ সালে নজরুল যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে বক্তৃতা দিতে আসেন, তখন মুসলিম ছাত্রদের অনেকেই আশা করেছিলেন, নজরুল মুসলিম উম্মাহকে জাগানোর আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য দেবেন। কিন্তু তিনি সেভাবে বক্তব্য দেননি। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাকালে তিনি ডাক দিয়েছিলেন: ‘হিন্দু না ওরা মুসলিম ঐ জিজ্ঞাসে কোন জন,/কাণ্ডারি বল ডুবিয়ে মানুষ সন্তান মোর মার’।

চতুর্থত, নজরুল খুব অল্প সময় বাংলাসাহিত্যকে দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। মধ্যবয়সে এক দুরারোগ্য রোগে কবি বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন। ১৯৪২ সালের শেষের দিকে তিনি মানসিক ভারসাম্যও হারিয়ে ফেলেন। ২৩ বছরের সাহিত্যিক জীবনে তার প্রকাশিত কবিতার বই ২২টি, নানা বিদেশি কবির কবিতার অনুবাদের বই ৩টি আর ছোটদের কবিতার বই ২টি। এছাড়া তাঁর রচিত উপন্যাস ৩টি, গল্পের বই ৩টি, নাটক ৩টি, ছোটদের নাটক ২টি, প্রবন্ধের বই ৫টি আর গানের বই ১৪টি। নজরুল সুস্থ থাকতে থাকতেই প্রায় ৫০টির মতো বই প্রকাশিত হয়। তার মৃত্যুর আগেই প্রকাশিত হয় আরও ৩০টির মতো বই। আর তার মৃত্যুর পর অপ্রকাশিত রচনা নিয়ে আরও ১১টি বই প্রকাশিত হয়েছে।

পঞ্চমত, বাংলা কাব্যে শব্দভান্ডারও নজরুল উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করেছেন। কবিতায় তিনি যেসব বিদেশি শব্দ ব্যবহার করেছেন, বাংলা কাব্যভাষায় তা স্থায়ীভাবে অন্তর্ভুক্ত হয়ে আছে। নজরুলের পুরাণ-ঐতিহ্যের বর্ণবহুল-বিচিত্র ব্যবহারকে সমালোচকগণ পাঁচটি ধারায় বিন্যস্ত করেন-

এক) ভারতীয় পুরাণ-ঐতিহ্য,
দুই) বাংলার দেশজ লোকপুরাণ,
তিন) ইউরোপীয় মিথ,
চার) ইসলামি ঐতিহ্যের নবমাত্রিক প্রয়োগ, এবং
পাঁচ) ইসলাম-পূর্ব পারস্য-আরবীয় মিথিক-উৎসের ব্যবহার।

নজরুলের কাব্যের প্রায় সর্বত্রই পুরাণের প্রয়োগ সুপ্রচুর। তবে পুরাণের ব্যবহারে সর্বাধিক সমৃদ্ধ কাব্যগ্রন্থ অগ্নিবীণা (১৯২২) ও সাম্যবাদী (১৯২৫)।

ষষ্ঠত, কবি নজরুল জন্মেছেন এবং বেড়ে উঠেছেন ঔপনিবেশিক সময়ে। এ সময়ে তিনি গতানুগতিক ধারার সাহিত্যচর্চা করে ক্ষান্ত থাকেননি। পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে স্বাধীন সার্বভৌম স্বদেশ ভূমি বিনির্মাণের প্রত্যয়ে ছিলেন প্রতিজ্ঞ। এ লক্ষ্যে রচনা করেছেন গান, কবিতা, প্রবন্ধ ও নাটক। বাঙালি জাতিকে জেগে ওঠার জন্য জানিয়েছেন উদাত্ত আহবান। নির্বিক কণ্ঠে বলেছেন—‘এই পবিত্র বাংলাদেশ বাঙালির-আমাদের’। একটি শোষণমুক্ত বাংলাদেশ বির্নিমাণের জন্য তিনি শুধু বিদেশিদের তাড়ানোর কথাই বলেননি, উপমহাদেশি মুনাফালোভী সম্প্রদায়কেও বাংলার মাটি থেকে উৎপাটন করার কথা বলেছেন। তাঁর সাহিত্যকমের্র সর্বত্রই মানুষ ছিল প্রধান উপজীব্য। বাংলা কাব্যজগতে তাই তিনি ‘বিদ্রোহী কবি’ হিসেবে খ্যাত।

প্রকাশ করেন 'বিদ্রোহী' এবং 'ভাঙার গানের' মতো কবিতা এবং ধূমকেতুর মতো সাময়িকী। ১৯২২ খ্রি: ধুমকেতুর ১৩শ সংখ্যায় নজরুল স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেন: ‘ধুমকেতু ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতা চায়’। সেখানে রাজনৈতিক স্বাধীনতার সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার কথাও তিনি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছিলেন। ইতিহাসবিদগন বলেন, এটিই প্রথম ভারতীয় স্বাধীনতার ডাক। ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন নজরুল। তিনি বহু লেখায় বলেছেন সশস্ত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়েই ভারতবর্ষকে স্বাধীন করতে হবে।

সপ্তমত, নজরুল ছিলেন সাম্যবাদী এবং প্রতিবাদী। তাঁর এক চোখে ছিল দুঃখ-দারিদ্রকে জয় করার সংগ্রাম, আরেক চোখে ছিল অসাম্প্রদায়িক, প্রেমময় একটি সাম্যবাদী সমাজ গড়ার স্বপ্ন। কবি লিখেছেন—
“আমি বঞ্চিত ব্যথা পথবাসী চির গৃহহারা যত পথিকের
আমি অবমানিতের মরম বেদনা, বিষ জ্বালা, চির লাঞ্ছিত বুকে গতি ফের। ”

তাঁর লেখায় অবহেলিত ও অধিকার বঞ্চিতদের অধিকার আদায়ের দাবি অত্যমত স্পষ্ট ও সোচ্চার হয়ে উঠেছে। অন্যায়, অসত্য, নির্যাতন, পরাধীনতার গ্লানি ও শৃঙ্খলা মোচনে কবির দীপ্ত উচ্চারণ যুগ যুগ ধরে মানুষকে সাহসী হওয়ার প্রেরণা যুগিয়েছে। ‘অগ্নিবীণা’, ‘বিষের বাঁশী’, ‘সাম্যবাদী’, ‘সর্বহারা’, ‘ফণী-মনসা’, ‘জিঞ্জির’, ‘সন্ধ্যা’ ও ‘প্রলয়শিখা’ কাব্যগ্রন্থে কবির বিদ্রোহরূপ পরিস্ফুটিত হয়েছে।

অষ্টমত, নজরুল যে ঘরে আড্ডা জমাতেন, সে ঘরে আর কেউ ঘড়ির দিকে তাকাতো না। তাঁর অনেক রসিকতার নজির পাওয়া যায়। চওড়া মজবুত জোরালো তার শরীর, লাল-ছিটে লাগা বড়ো বড়ো মদির তার চোখ, মনোহর মুখশ্রী, লম্বা ঝাঁকড়া চুল তার প্রাণের ফূর্তির মতোই অবাধ্য, গায়ে হলদে কিংবা কমলা রঙের পাঞ্জাবী এবং তার উপর কমলা কিংবা হলদে রঙের চাদর, দুটোই খদ্দরের। কেউ জিজ্ঞেস করেছিল, আপনি রঙিন জামা পরেন কেন? ‘সভায় অনেক লোকের মধ্যে যাতে চট করে চোখে পড়ে তাই’, বলে ভাঙা ভাঙা গলায় হো হো করে হেসে উঠেছেন তিনি। কথার চেয়ে বেশি তার হাসি, হাসির চেয়ে বেশি তার গান। একটি হারমোনিয়াম এবং যথেষ্ট পরিমাণ চা এবং অনেকগুলো পান দিয়ে বসিয়ে দিতে পারলে দীর্ঘ সময় একনাগাড়ে গান করতে থাকতেন।

নবমত, একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্ব মানচিত্রে জায়গা করে নেয়া বাংলাদেশ নামকরণের সাথে নজরুল এক হয়ে মিশে আছেন। ১৯৩১ সালে প্রকাশিত একটি গানে তিনি প্রথম ‘বাংলাদেশ’ নামকরণের কথা উল্লেখ করেন।

“নম নম নম বাংলাদেশ মম,
চির মনোরম চির মধুর,
বুকে নিরবধি বহে শত নদী চরণে জলধির বাজে নূপুর
নম নম নম বাংলাদেশ মম,
চির মনোরম চির মধুর। ”

সে সময়ের সাহিত্যে আমাদের এ অঞ্চলকে কোথাও ‘বঙ্গ’, কোথাও শুধু ‘বাংলা’ নামে অভিহিত করা হয়েছে। নজরুলই প্রথম ‘বাংলাদেশ’ নামকরণ করেন। ১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর আয়োজিত এক জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব বাংলাকে ‘বাংলাদেশ’ নামে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, “একসময় এদেশের বুক হইতে, মানচিত্রের পৃষ্ঠা হইতে ‘বাংলা’ কথাটির সর্বশেষ চিহ্নটুকুও চিরতরে মুছিয়া ফেলার চেষ্টা করা হইয়াছে। ...... একমাত্র ‘বঙ্গোপসাগর’ ছাড়া আর কোন কিছুর নামের সঙ্গে ‘বাংলা’ কথাটির অস্তিত্ব খুঁজিয়া পাওয়া যায় নাই। ... জনগণের পক্ষ হইতে আমি ঘোষণা করিতেছি- আজ হইতে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশটির নাম পূর্ব পাকিস্তানের পরিবর্তে শুধুমাত্র বাংলাদেশ!”

দশমত, আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম আর আজকের এগিয়ে চলার মূলমন্ত্র ‘জয় বাংলা’ শব্দটিও নজরুলের কাছ থেকে পাওয়া। ১৯২৪ সালের আগস্টে প্রকাশিত ‘ভাঙার গান’ কাব্যগ্রন্থের একটি কবিতা ‘পূর্ণ-অভিনন্দন’। প্রসঙ্গত, ১১ নভেম্বর ১৯২৪ তারিখে তৎকালীন বঙ্গীয় সরকার গ্রন্থটি বাজেয়াপ্ত ও নিষিদ্ধ করে। ব্রিটিশ সরকার পরবর্তীতে এ নিষেধাজ্ঞা আর প্রত্যাহার করেননি। ‘ভাঙার গান’- এর দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ পায় ১৯৪৯ সালে। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের নেতা ‘পূর্ণচন্দ্রে’র জেল-মুক্তির দিনে অভিনন্দন জানিয়ে নজরুল লিখেছিলেন ‘পূর্ণ-অভিনন্দন’ কবিতাটি। এ কবিতায় কাজী নজরুল ইসলাম ‘জয় বাংলা’ শব্দটি ব্যবহার করেন। কবিতাটির দু’টি চরণ তুলে ধরা হলো:

“জয় বাঙলা’র পূর্ণচন্দ্র, জয় জয় আদি অন্তরীণ,
জয় যুগে যুগে আসা সেনাপতি, জয় প্রাণ অন্তহীন। ”

যদিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর বলেছেন, জয় বাংলা শব্দটি ‘পূর্ণ-অভিনন্দন’ কবিতা থেকে আসেনি। তাঁর দাবি ‘জয় বাঙলার পূর্ণচন্দ্র’ (অর্থাৎ পূর্ণচন্দ্রের জয়, যিনি বাংলার মানুষ) কবিতায় শুধু পূর্ণচন্দ্রের জেল থেকে মুক্তির বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। অধ্যাপক সৌমিত্র শেখরের মতে, কাজী নজরুল ইসলাম ‘নবযুগ’ পত্রিকায় ১৯৪২ সালে ‘বাঙলার জয় হোক’ লিখেছিলেন। ‘বাংলা’ ও ‘জয়’-এর এমন চমৎকার সাযুজ্য এর আগে আর দেখা যায়নি। নবযুগ পত্রিকায় প্রকাশ থেকেই হোক আর ‘পূর্ণ-অভিনন্দন’ কবিতা থেকেই হোক আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও সোনার বাংলা গড়ার মূলমন্ত্র ‘জয় বাংলা’ শব্দটি নজরুল থেকেই নেওয়া।

পরিশেষে, আমাদের জাতীয় চেতনার নবজাগরণে, সমাজ-সংস্কৃতির স্বকীয়তা বিনির্মাণে, সুশাসন, ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নজরুলের সৃজনশীল রচনা ও সংগ্রামী জীবন আমাদের অফুরন্ত প্রেরণার উৎস এবং সব সময়ের জন্য প্রাসঙ্গিক হয়ে থাকবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৫ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০২৩
এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।