ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

নবীন লেখকরাই আকৃষ্ট করছেন নতুন পাঠককে

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৩
নবীন লেখকরাই আকৃষ্ট করছেন নতুন পাঠককে

ঢাকা: সমকালীন সাহিত্যে ক্রমশ নবীনদের উত্থান ঘটেছে। তাই ১০ বছর ধরে তরুণরাই নেতৃত্ব দিচ্ছে সাহিত্য ভুবনে।

প্রবীণ লেখকদের অনেকেই প্রয়াত হয়েছেন, আবার অনেকেই নিষ্ক্রিয়। আশি ও নব্বই দশকের লেখকদের একটি অংশ লিখলেও শূন্যতার জায়গাটি পূরণ করছে নবীনরা। এই লেখকদের মধ্যেই প্রতিশ্রুতিশীল গল্পকার, ঔপন্যাসিক ও কবি রয়েছেন। ইদানীং প্রবন্ধ ও গবেষণাধর্মী লেখায়ও পারঙ্গমতার পরিচয় দিচ্ছে তরুণরা। এসব কারণেই প্রকাশনা শিল্পে বিকিকিনির বিবেচনায় বইয়ের বর্তমানটা অতীতের চেয়ে ভালো।

পাঠক, লেখক এবং প্রকাশকদের মতে, তরুণ লেখকরা এখন আর শুধু বইমেলার প্রাণই নন, তারা সাহিত্যচর্চার পরীক্ষিত সেনানি। তাদের লেখার মান এবং বৈচিত্র্য অনেকের কাছে এখন ঈর্ষণীয়। ফিকশন, নন-ফিকশন দুই জায়গাতেই তারা সমানতালে নিবিষ্টভাবে লিখছেন। তাদের লেখা সেসব বই কয়েক মুদ্রণ বিক্রি হচ্ছে। পাঠক তাদের বই সানন্দে সংগ্রহ করছেন।

বইমেলায় এখন প্রবেশ করলেই দেখা যায় পিয়াস মজিদের কবিতার বই ‘ভুলে যাওয়া স্কাটের সিঁড়ি’, ‘এ সকাল সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়’, পলাশ মাহবুবের ‘প্রতি মঙ্গলবার আমরা বই ছাড়া স্কুলে যাই’, মোজাফফর হোসেনের ‘নো ওম্যান্স ল্যান্ড’, সাদাত হোসাইনের ‘শঙ্খচূড়’, মিলু আমান ও হক ফারুকের ‘বাংলার রক মেটাল’, জয় শাহরিয়ারের ‘রুপালি গিটার’, প্রবর রিপনের ‘রক্তহ্রদ’, মৌরি মরিয়মের ‘অনিন্দ অনলে’, রাসেল মাহমুদের ‘কয়েকছত্র কান্নার গল্প’, মাহফুজা অনন্যার ‘কীর্তনখোলা’, জান্নাতুন নুর নিশার ‘পুরুষ সাবিত্রী’, অসীম হিমেলের ‘ধূম্রজালে খেদু মিয়া’, সাকী আহমদের ‘ছোটদের বই’, ইথার আখতারুজ্জামানের ‘বসন্ত বিভ্রম’ বইগুলো সংগ্রহ করছেন সব শ্রেণির ও বয়সের পাঠক।

বইমেলায় তরুণ লেখকদের অবস্থান কেমন, এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কবি পিয়াস মজিদ বলেন, অনেকটাই পোক্ত। তরুণদের অনেকের কবিতা ও কথাসাহিত্যের বইয়ের প্রতি পাঠকের আগ্রহ আছে। আর তরুণরা এখন শুধু গল্প-কবিতাই নয়, নাটক লিখছে, অনুবাদ করছে, সিনেমা নিয়ে লিখছে, সংগীত নিয়ে লিখছে, ইতিহাসচর্চা করছে। তাদের বিচিত্র বইপত্রের প্রতি বিষয় ও উপস্থাপনের অভিনবত্বের কারণে সব বয়সের পাঠকের মনোযোগ পাচ্ছে।

মিলু আমান বলেন, তরুণ লেখকদের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় লেখার বৈচিত্র্য। সংগীতবিষয়ক বই বইমেলার পাঠকদের এখন নতুন আগ্রহ। যেটি নিয়ে নিজেও কাজ করছি।

রাসেল মাহমুদ বলেন, মেলাটা আসলে তরুণ লেখকদের এবং এই তরুণ লেখকরা নিজেদের জায়গা তৈরি করে নিচ্ছেন। একদিকে বিচিত্র বিষয় নিয়ে লিখে তারা বাংলা কথা-কবিতার ভুবনকে সমৃদ্ধ করছেন, অন্যদিকে পৃথিবীতে বাংলা নামের মিষ্টি ভাষাটিকে আরও স্মার্ট ও শক্তিশালী করছেন। এই অঙ্গনে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান, আপনারা তরুণদের পাশে দাঁড়ান, দেখুন তারা বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে আরও কত কিছু উপহার দেয়।

সাকী আহমদ বলেন, তরুণ লেখকদের অবস্থান খুব ভালো। নতুন লেখক উঠে আসছেন। তারা নতুন নতুন বিষয় নিয়ে লিখছেন। তারাই নতুন নতুন পাঠক তৈরি করছেন। শুধু তাদের বই কিনতেও মেলায় আসছেন অনেক পাঠক। বিষয়টা খুবই আশাব্যঞ্জক।

মেলায় মূলধারার পাঠকদের মতামতও ঠিক একই ধরনের। এ বিষয়ে কথা হলে একাধিক পাঠক বলেন, কিংবদন্তিতুল্য কিংবা প্রখ্যাত লেখকের সৃষ্টিসম্ভারের বাইরে মূলত বইমেলার ষাট থেকে সত্তর শতাংশ ভূমিকা রাখছে তরুণরা। সাহিত্য সৃজনে এই তরুণদের আছে আলাদা স্বর। সৃষ্টিতে রয়েছে নিরীক্ষা প্রবণতা। বিষয়বস্তুর প্রতি আছে দায়বদ্ধতা। এসব কারণেই নবীনদের বই বেশ ভালো চলছে বইমেলায়। নতুন লেখকের মাধ্যমে পাঠকরাও খুঁজে নিচ্ছে ভিন্নতার স্বাদ।

মেলার এক সপ্তাহের মধ্যে কোনো নবীন কবির দেড় শতাধিক কাব্যগ্রন্থ বিক্রি হয়ে যাচ্ছে- এমন আশা জাগানিয়া তথ্যও প্রমাণ করে তরুণরাই নেতৃত্ব দিচ্ছে সমকালীন সাহিত্যে। আর বৈশ্বিক সাহিত্যের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করেই উদ্যমী তরুণ লেখকরা সাহিত্যচর্চা করছেন বলে মন্তব্য করেন পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্সের কর্ণধার কামরুল হাসান শায়ক।

এই প্রকাশক বলেন, তরুণদের মধ্যে যারা ভালো লিখছে আমরা তাদের তুলে ধরার চেষ্টা করি। সেক্ষেত্রে নবীন লেখকরা যথেষ্ট ভালো করছেন। সুলেখনীর মাধ্যমে টানছেন পাঠকসমাজকে। অনেক সময় প্রতিষ্ঠিত লেখকদের চেয়েও তরুণ লেখকদের বই বেশি বিক্রি হচ্ছে। এ কারণে আগামী দিনের শূন্যতা পূরণে নবীন লেখকদের নিয়ে আমরা আশাবাদী।

তিনি বলেন, একঝাঁক নতুন লেখক পূরণ করছে প্রবীণ কিংবা প্রতিষ্ঠিত লেখকের শূন্যতাকে। এর কারণ হচ্ছে, লেখালেখির জন্য তরুণ লেখকরা প্রচুর পড়াশোনা করছেন। পাশাপাশি প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারে বিশ্বসাহিত্যের প্রেক্ষাপটে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান থেকে তৈরি করছেন নিজেদের। সাহিত্য সৃষ্টিতে এসব লেখকের পরিশ্রমের কমতি নেই। নিজস্ব গতিধারা সৃষ্টিতে প্রত্যেকেই তত্ত্বগত সাহিত্যের সঙ্গে স্বকীয়তার সমন্বয় ঘটাচ্ছেন। নতুনদের অনেকেই শুধু দেশ নয় বিশ্ব পাঠকের কথা মাথায় রেখে লিখছে। এই বিষয়ে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠিত লেখকও তাদের মতো মনোযোগী নয়। সবকিছু মিলিয়ে বলা যায়, নবীন লেখকরাই আকৃষ্ট করছে নতুন পাঠককে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৩
এইচএমএস/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।