ঢাকা: একটি মাত্র সিদ্ধান্ত নিয়ে এবং সেই মোতাবেক কাজ করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ওষুধ কেনা বাবদ বরাদ্দ অর্থ থেকে ২২ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছে। এই অতিরিক্ত টাকা দিয়ে রোগীদের আরও বেশি সেবা দিতে পারছে প্রতিষ্ঠানটি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অর্থ সাশ্রয়ী সেই সিদ্ধান্ত হলো, সরকারি এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি থেকে ওষুধ না কিনে বেসরকারি কোম্পানি থেকে ওষুধ কেনা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, দেশের অন্যান্য সরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের মতোই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকেও দেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় ওষুধ কোম্পানি এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি (ইডিসিএল) থেকে ওষুধ কিনতে হয়।
ইডিসিএল ওষুধ উৎপাদন করে সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতাল, উপজেলা হাসপাতাল, জেলা সদর হাসপাতাল এবং কমিউনিটি ক্লিনিকে সরবরাহ করে। কিন্তু সরকারি হাসপাতালগুলোর সব ওষুধের চাহিদা ইডিসিএল পূরণ করতে পারে না। হাসপাতালগুলোকে বাজার থেকেও ওষুধ কিনতে হয়। আবার ইডিসিএলের ওষুধ বাজারে বিক্রি হয় না। সেক্ষেত্রে সরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। এ ছাড়া ঢাকা মেডিকেলের মতো বড় হাসপাতালগুলোর একসঙ্গে বেশি (বাল্ক) ওষুধের চাহিদা থাকলেও সেটা মেটাতে হিমসিম খেতে হয় ইডিসিএলকে।
এমন অবস্থা নিরসনে বেসরকারি কোম্পানি থেকে ওষুধ কেনার অনুমতি চায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় তাতে অনুমোদন দেয়। এরপর থেকেই প্রতিষ্ঠানটি বেসরকারি কোম্পানি থেকে ওষুধ কেনা শুরু করে। আর তাতেই সাশ্রয় হয় প্রায় ২২ কোটি টাকা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানায়, বেসরকারি কোম্পানি থেকে বেশি পরিমাণ ওষুধ একসঙ্গে কিনলে বড় ছাড় পাওয়া যায়, ফলে ওষুধের দাম কমে আসে। কিন্তু ইডিসিএল থেকে ওষুধ কিনলে কোনো ছাড় পাওয়ার সুযোগ নেই।
ইডিসিএলের ওষুধের দাম প্রসঙ্গে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক কর্মকর্তা বলেন, ইডিসিএলের ওষুধের দাম বেশি। বর্তমান বাজারে বেসরকারি কোম্পানিগুলো যে দামে ওষুধ বিক্রি করে, ইডিসিএল সেই একই ওষুধ বেশি দামে বিক্রি করে।
উদাহরণ দিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, টিসিবির বিভিন্ন পণ্যের দাম বাজারে অন্যান্য কোম্পানির দামের চেয়ে কম থাকে। বিআরটিসি বাসের ভাড়াও কম হয়। সরকারি বিভিন্ন ধরনের সেবা কিন্তু প্রাইভেট সেবার চেয়ে কম মূল্যে পাওয়া যায়। কিন্তু সরকারি ওষুধের মূল্যের ক্ষেত্রে বিষয়টি পুরো উল্টো। এদিকটা নজর দেওয়া দরকার।
ওষুধ শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেসরকারি ওষুধ কোম্পানিগুলো মার্কেটিং এবং প্রমোশন বাবদ যে অর্থ ব্যয় করে, সরকারি কোম্পানি হিসেবে ইডিসিএলের সেই খরচ নেই। এসব বিবেচনায় বেসরকারি ওষুধ কোম্পানি থেকে ইডিসিএলের ওষুধের দাম অবশ্যই অনেক কম হওয়া উচিৎ।
জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, ইডিসিএলকে আধুনিকায়ন করতে হবে। দক্ষ ও যোগ্য জনবল নিয়োগের মাধ্যমে উৎপাদনক্ষমতা বাড়াতে হবে। ওষুধ উৎপাদনের ধরন ও পরিমাণ বাড়ালে বাজারে ওষুধের দামে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে বিনামূল্যে মানুষ আরও বেশি ওষুধ পাবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া) সাবেক উপদেষ্টা এবং স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক এ বিষয়ে বলেন, যদি সত্যি সত্যি গুণগত মান, পরিমাণ এবং নির্দিষ্ট পরিমাণ ওষুধ কিনে ওই পরিমাণ টাকা সাশ্রয় হয়ে থাকে, সেটাতো ভালো কথা। তাহলে বাইরে থেকে ওষুধ কেনার অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে চিন্তা করা যেতে পারে।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, ইডিসিএলকে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে দক্ষ হতে হবে। ইডিসিএল থেকে এনওসি নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল অন্য জায়গা থেকে ওষুধ কিনে ২২ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছে। এটা কোনোমতেই সমর্থনযোগ্য না। কারণ বেশি টাকা দিয়ে তারা কেন ইডিসিএল থেকে ওষুধ কিনবে? ইডিসিএল যে দামে ওষুধ বিক্রি করে তার চেয়ে কম দামে মার্কেটে ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে। গুণগত মানে ছাড় দিতে বলা হচ্ছে না কিন্তু ইডিসিএলের দক্ষতা বাড়াতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বিশ্বে ফার্মা ইন্ডাস্ট্রি সবচেয়ে টপ কয়েকটি ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে একটি। এখানে নিখুঁতভাবে কাজ করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড ভালোভাবে প্রোডাক্ট তৈরি ও অব্যাহতভাবে ওষুধ সরবরাহ করতে পারলে বাংলাদেশের পুরো মার্কেটের ল্যান্ডস্কেপ পরিবর্তিত হয়ে যাবে। সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দক্ষতা বাড়বে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩১ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০২৫
আরকেআর/এমজেএফ