ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিশ্ব ইজতেমা

মাওলানা সাদ ‘বিরোধিতা’র নেপথ্যে

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, সিনিয়র বিভাগীয় সম্পাদক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৮
মাওলানা সাদ ‘বিরোধিতা’র নেপথ্যে মাওলানা মোহাম্মদ সাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের একাংশ। ছবি: কাশেম হারুন

তাবলিগের অন্যতম মুরব্বি দিল্লির মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্ধলভি তার কিছু বক্তব্য ও একক নেতৃত্বের প্রশ্নে সৃষ্ট জটিলতার মধ্যেই বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিতে বাংলাদেশে চলে এসেছেন। 

বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) থেকে গাজীপুরের টঙ্গীতে অনুষ্ঠেয় ইজতেমার প্রথম পর্বে অংশ নিতে দিল্লির নিজামউদ্দিন মারকাজের এই উত্তরসূরি এখন অবস্থান করছেন ঢাকার কাকরাইল মসজিদে। বুধবার (১০ জানুয়ারি) বিকেল ৪টায় তিনি মসজিদটিতে অবস্থান নিলে এর বাইরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

শুরাভিত্তিক নেতৃত্ব প্রত্যাখ্যান করে একক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা ও মাওলানা সাদের বক্তব্য নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসন না হওয়া পর্যন্ত তাকে ইজতেমায় অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকার আহবান জানিয়ে আসছেন তাবলিগ জামাতের একটি অংশ ও কওমিপন্থি আলেমরা। এমনকি ইজতেমায় তার অংশগ্রহণে বাধা দিতে আন্দোলনেও নেমেছেন তারা।  

ফ্লাইটযোগে মাওলানা সাদের আগমনের খবরে সকাল থেকেই ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইজতেমা মাঠে যাওয়ার সব রাস্তা বন্ধ করে দেন তাবলিগের একাংশের কর্মীরা। ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে বুধবার (১০ জানুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মাওলানা সাদ বিমানবন্দরে পৌঁছালেও তাকে ইজতেমার মাঠে যেতে দেওয়া হয়নি। বিশেষ নিরাপত্তা দিয়ে পুলিশি পাহারায় তাকে নিয়ে যাওয়া হয় কাকরাইলে।  

মাওলানা সাদ ইজতেমায় অংশ নেবেন কি-না, তা এখনও স্পষ্ট হয়নি। তবে কাকরাইলের শুরা সদস্য সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘এ বিষয়ে নেতৃস্থানীয় আলেমদের সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এর বেশি কিছু বলতে পারছি না। ’ 

অবশ্য নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাদ-বিরোধী এক শুরা সদস্য বাংলানিউজকে জানান, মাওলানা সাদকে ইজতেমায় অংশগ্রহণ না করার শর্তে কাকরাইল মসজিদে নেওয়া হয়েছে। তিনি এখানেই থাকবেন।

কেন মাওলানা সাদকে ইজতেমায় অংশ নিতে দেওয়া হবে না, কেন তার বিরোধিতায় রাস্তায় নেমেছেন আলেম-উলামারা, এমন প্রশ্ন ঘুরছে বিভিন্ন মহলে।

বিরোধীরা মাওলানা সাদের বক্তব্যের জন্য ভুল স্বীকার ও প্রকাশ্যে তওবা করার আহ্বান জানালেও ঠিক কোন বক্তব্য ঘিরে উত্তেজনা, তা নিয়ে চলছে আলাপ-আলোচনা।

আলেমদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাবলিগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা হযরত ইলিয়াস (রহ.)-এর নাতি মাওলানা সাদ। তার মৃত্যুর পর বিশ্ব তাবলিগ জামাতের আমিরের দায়িত্ব পালন করেন যথাক্রমে মাওলানা মোহাম্মদ ইউসুফ (রহ.), মাওলানা ইনামুল হাসান (রহ.) ও মাওলানা জুবায়েরুল হাসান (রহ.)। এদের মধ্যে মাওলানা জুবায়েরুল হাসান একক নেতৃত্ব প্রথা বিলুপ্ত করে শুরাভিত্তিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু মাওলানা জুবায়েরুল হাসানের ইন্তেকালের পর মাওলানা সাদ আমিরের দায়িত্ব পান। দায়িত্ব পেয়ে শুরাভিত্তিক প্রচলিত পদ্ধতি এড়িয়ে ফের একক নেতৃত্বে কাজ শুরু করেন তিনি।  

মাওলানা সাদের এমন কর্মপন্থা নিয়ে দিল্লি নিজামউদ্দিন মারকাজের সিনিয়র মুরব্বি বিরক্ত হয়ে দিল্লি ছেড়ে নিজ নিজ অঞ্চলে চলে যান।  

দারুল উলুম দেওবন্দের আলেমরা মাওলানা সাদের চিন্তা, কথা ও কর্মপন্থায় অসংখ্য ভুল-ত্রুটি পাওয়ার প্রেক্ষিতে তাকে তাবলিগ জামাতের বিশ্ব আমির দাবি করা থেকে বিরত হওয়ার আহ্বান জানান। একইসঙ্গে ‘ভ্রান্ত’ চিন্তা ও উক্তির বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে তাকে ক্ষমা প্রার্থনা ও প্রকাশ্যে তওবা করতে বলা হয়। মাওলানা সাদ কিছু বিষয়ে ভুল স্বীকার করলেও সব বিষয়ে এবং একক নেতৃত্বের প্রশ্নে অনড় থাকেন। তাবলিগ জামাতের কোনো আমির বা মুরব্বির কোনো বয়ান নিয়ে এর আগে এতো বিতর্ক হয়নি।  

মাওলানা সাদ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গায় কোরআন, হাদিস, ইসলাম, নবী-রাসূল ও নবুওয়ত এবং বিভিন্ন মাসয়ালা-মাসায়েল নিয়ে আপত্তিকর বয়ান করেছেন বলে মনে করেন তার বিরোধী আলেমরা। যার জন্য দেওবন্দসহ বিশ্ব আলেমদের অনেকেই তাকে প্রকাশ্যে তওবা করতে বলেন। একই দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশি আলেমরা তাকে বিশ্ব ইজতেমায় আসতে ও বয়ান করতে নিষেধ করেন। কিন্তু এসবের সুরাহা না হওয়ার মধ্যেই তিনি বাংলাদেশে চলে  এলেন।

এদিকে মাওলানা সাদের নামে পরিচালিত ফেসবুক পেজে বিকেল ৪টার দিকে একটি স্ট্যাটাস দেওয়া হয়েছে। আরবি ও ইংরেজি ভাষায় দেওয়া স্ট্যাটাসটিতে বলা হয়- ‘মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্ধলভিকে বাংলাদেশে ঢুকতে বাধা দিতে অনেক চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু সব তৎপরতা ব্যর্থ হয়েছে। ’

সেখানে কোরআনের একটি আয়াতও উল্লেখ করা হয়, ‘… এবং তারা ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত করেছিলো, আল্লাহও কৌশল অবলম্বন করেছিলেন। আল্লাহ তায়ালা কৌশলীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। -সূরা আল ইমরান: ৫৪

ওই স্ট্যাটাসে আরও বলা হয়, ‘মাওলানা সাদ বাংলাদেশে নিরাপদে পৌঁছেছেন। ইনশাআল্লাহ ১১ জানুয়ারি থেকে ইজতেমার প্রথম পর্যায় শুরু হবে। ১৪ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাত হবে। ’

স্ট্যাটাসটির শেষের দিকে বলা হয়, ‘আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করি, বাতিলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইজতেমা হোক হকের হাতিয়ার। ’

মাওলানা সাদের বিরোধী আলেম-উলামারা আশঙ্কা করছেন, এই স্ট্যাটাসের কারণে তার বিরুদ্ধে যে আন্দোলন চলছে, তাতে আরও উত্তেজনা বাড়তে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৮
এমএইউ/এইচএ/

** কাকরাইল মসজিদে মাওলানা সাদ: নিরাপত্তা জোরদার
** কাকরাইল ও ইজতেমা মাঠে লাগাতার অবস্থান ঘোষণা বেফাকের
** বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে কাকরাইলে মাওলানা সাদ
** দাবি মানা না হলে লাগাতার অবরোধের হুঁশিয়ারি
** শাহজালাল বিমানবন্দরে মাওলানা সাদ
** তাবলিগের বিক্ষোভ, ভোগান্তিতে শাহজালালের যাত্রীরা
** তাবলিগের বিক্ষোভে বিমানবন্দর সড়কে তীব্র যানজট
** মাওলানা সাদের আগমন ঠেকাতে বিমানবন্দর চত্বরে বিক্ষোভ
** বুধবারই ইজতেমায় আসছেন মাওলানা সাদ
** নেতৃত্বে জটিলতা :: ইজতেমা মালয়েশিয়ায় সরিয়ে নেয়ার প্রস্তাব!
**বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে কাকরাইলে মাওলানা সাদ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।