ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

সেকেন্দার ডাক্তারের বাড়িই একখণ্ড সুন্দরবন

আবু তালহা, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৫, ২০১৭
সেকেন্দার ডাক্তারের বাড়িই একখণ্ড সুন্দরবন সেকেন্দার ডাক্তারের বাড়িই একখণ্ড সুন্দরবন, ছবি ও ভিডিও: ডিএইচ বাদল

বাঘ, ভাল্লুক, কুমির চরে বেড়ায় না তার বাড়িতে- তবে যা রয়েছে তাতেই দেখা হয়ে যাবে সুন্দরবনের অনেকটা। আর ভাগ্য ভালো না হলে বনের ভেতরে গিয়েও সেকেন্দার ডাক্তারের করা সংগ্রহের একাংশ চোখে পড়বে না।

অনেকটা আবিষ্কারের নেশায় সুন্দরবনে য‍াওয়া শুরু করেন পল্লী চিকিৎসক ডা. জি এম সেকেন্দার হোসেন। বৈঠা টেনে বুড়ি গোয়ালিনী থেকে শরণখোলা যেতে সময় লাগতো দশ থেকে বারো দিন।

না ছিলো কম্পাস, না ম্যাপ। সূর্য-তারা দেখে দিক ঠিক করতে হতো। জোয়ার-ভাটায় স্রোত বিপরীতে গেলে নৌকা নোঙর করে বসে থাকতে হতো।

পুরো বন চিনে ফেলার পরে ডা. সেকেন্দার গাইডের কাজ শুরু করেন। এর ফাঁকে ফাঁকে সুন্দরবনের বিভিন্ন উপকরণ সংগ্রহ করাই হয়ে ওঠে তার নেশা।

সেকেন্দার ডাক্তারের বাড়িই একখণ্ড সুন্দরবনতিনটা বাঘের মাথা ও পেছনের অংশ, বুনো মহিষের শিং ও চোয়াল, গণ্ডারের মাথা, পেছনের পা, মেরুদণ্ড, বুনো শূকরের মাথা ও দাঁত, বন বিড়ালের মাথা, হায়েনার কঙ্কাল, বাঘে খাওয়া মানুষের মাথার খুলি, ছয়টা হরিণের মাথা ও শিং, দুইটা কুমিরের মাথা, হাতির মাথা ও দাঁত, কচ্ছপের আবরণ, প্রবাল পাথর, তিমি মাছের চোয়াল তার সংগ্রহে রয়েছে।

জাতীয় জাদুঘরে যে তিমি মাছটির কঙ্কাল রয়েছে, কর্তৃপক্ষ সংগ্রহ করার আগেই তার একটি হাড় সংগ্রহ করেছিলেন সেকেন্দার হোসেন। সেটি এখনো অক্ষত অবস্থায় রয়েছে। আরও রয়েছে টিকটিকির কঙ্কাল, বিভিন্ন প্রজাতির শামুকের খোলস, বর্তমানে বিলুপ্ত এক প্রজাতির কলা গাছের কাঁদি।

সেকেন্দার ডাক্তারের বাড়িই একখণ্ড সুন্দরবনএসবের বাইরে সেকেন্দার হোসেন সংগ্রহ করেছেন সুন্দরবন এলাকার বিভিন্ন মুঘল স্থাপনার চিহ্ন, তৈজসপত্রের টুকরা। কেবল দেশেই নয়, বাংলাদেশের বাইরে যে ক’টি দেশে গিয়েছেন- সেখান থেকেও নিয়ে এসেছেন নান‍া জিনিস!

তার বড় ছেলে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা শামীম হোসেন বললেন, বাবা একবার ফিলিপিন্স গিয়েছিলেন। সেখান থেকে একটি বিরল বাঁশের টুকরা সংগ্রহ করে আনেন। আমাদের দুই ভাই, দুই বোনের জন্য বাবা কিছু না কিছু আনতেন। এর বাইরে তার সংগ্রহের নেশায় বিশেষ কিছু আনতে ভুলতেন না বাবা।

বাবার স্বপ্নকে আরও এগিয়ে নিতে চান শামীম। সেকেন্দার হোসেনের বাড়ির সামনে গেলেই চোখে পড়বে দু’পাশে লেখা রয়েছে ‘পথিক একটু দাঁড়াও, পানি খেয়ে যাও। নিজের পিপাসা মিটিয়ে অন্যের পিপাসা মিটানোর জন্য সুযোগ কর’। এক সময় লেখাগুলো পাকা দেয়ালে ছিলো না! পর্যটক এলে বা কোনো পথচারী যেতে যেতে যেনো অন্তত পানি খেতে পারে সে ভাবনা থেকে সেকেন্দার হোসেন বাড়ির সামনে বিশুদ্ধ পানি ভরা কলশী আর গ্লাস রাখা শুরু করেন। পশু-পাখি যেনো তৃষ্ণার্ত না থাকা সেজন্যও ব্যবস্থা নেন।

সেকেন্দার ডাক্তারের বাড়িই একখণ্ড সুন্দরবনশামীম জানালেন, বাবা সে স্বপ্ন আরও এগিয়ে নিতে আমরা যাত্রী ছাউনী করেছি। পরিকল্পনা রয়েছে এসব সংগ্রহ নিয়ে বাড়ির সামনের অংশে জাদুঘর করবো।

২০০০ সালে স্ট্রোক হওয়ার পরে সেকেন্দার হোসেন বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। হারিয়ে ফেলেন চলাফেরার শক্তি। সব চঞ্চলতার অবসান ঘটিয়ে ২০১৪ সালের ১৬ মার্চ পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন এই পর্যটন প্রেমী। এরপর থেকে স্বামীর এসব সংগ্রহ বুকে আগলে দিন কাটছে ফাতেমা হোসেনের।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৫, ২০১৬
এটি/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ