ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

ঘুম সাগরে জল অভিযান

জাকারিয়া মন্ডল, সিনিয়র আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৪৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৬
ঘুম সাগরে জল অভিযান ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ছোপ ছোপ অন্ধকারে ছাওয়া আকাশ মাথায় নিয়েই অভিযানে নেমেছে দলটা। কানার মাথার কাছে অনেকটা পোতাশ্রয়ের আকার নেওয়া খালটা তখন ভাটার টানে শুকিয়ে আছে।

দুবলার চর (সুন্দরবন) থেকে: ছোপ ছোপ অন্ধকারে ছাওয়া আকাশ মাথায় নিয়েই অভিযানে নেমেছে দলটা। কানার মাথার কাছে অনেকটা পোতাশ্রয়ের আকার নেওয়া খালটা তখন ভাটার টানে শুকিয়ে আছে।

রাতের ট্যুরিস্ট লঞ্চগুলো দুবলা ছেড়ে এরই মধ্যে রওয়ানা হয়ে গেছে কটকার পথে।

পলিতে আটকে একটা লঞ্চ কেবল গোঁ গোঁ আওয়াজ তুলছে খালের মুখে। সকাল সাড়ে ৮টার আগে আজ জোয়ার শুরু হবে না সাগরে। তার আগ পর‌্যন্ত আটকেই থাকতে হবে ওটাকে। কিন্তু ইঞ্জিন চালু রেখে ভারসাম্য ঠিক রাখতে হবে মাস্টারকে। নয়তো জোয়ারের ধাক্কায় ওটাকে চরে উঠিয়ে দেবে সাগর। এক জেলেকে দড়ির স্ট্রেচারে করে বোটে তোলা হলো

সেই শেষ রাত থেকেই মাছের আশায় দল বেঁধে উড়ছে বদর কবুতরের ঝাঁক। ভাটার টানে ঘুমিয়ে পড়া সাগরের শান্ত খালে নোঙর ফেলে রাখা সারি সারি নৌকাগুলোর একটা থেকে আর একটায় ভিড়ছে টহল বোট।

কোন ক্যাটাগরির মাছ ধরার পারমিশন নিয়ে আসলে কে কি মাছ নিচ্ছে সেটা দেখা অন্যতম এক দায়িত্ব এ দলটার। সরকারকে রাজস্ব দিয়ে বৈধ কাগজ নিয়েছে কি না সেটাও চেক করছে তারা। ক’জনের অনুমতি নেওয়া বোটে ক’জন মানুষ থাকছে দেখছে সেটাও।

কিন্তু কৃষ্ণপক্ষের ষষ্ঠী কাছিয়ে আসায় গতরাতে মাছ ধরা পড়েছে কম। তাই অধিকাংশ নৌকাই খালি। কাঁচা মাছ কিনতে বাগেরহাট, মংলা আর খুলনা থেকে আসা বোটগুলোকে মাছ মজুদের জন্য আনা বরফ পানিতে ফেলতে দেখা গেলো। মৌসুমী কর্মক্ষেত্র থেকে বাড়ি যাচ্ছেন জেলেরা

৪ জনের দলটির প্রধান শাহজাহান মোল্লা। বন বিভাগের দুবলার চর এলাকার অপারেশন ইন চার্জ (ওসি) তিনি। জেলেদের প্রত্যয়নপত্র দিতে হয় বলে নিজের সিলটা সবসময় পকেটেই থাকে তার। ওই কাগজ না থাকলে খালি বোটে ফেরাও সময়েও হেনস্তা হতে হয় কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী বা র‌্যাব টহলের হাতে।

টহল বোটে মোল্লার সঙ্গে আছেন ফরেস্ট গার্ড আল আমিন আর বোটম্যান ইউসুফ ও মাসুদ। সবার পরনে ভারী জ্যাকেট, গলায় মাফলার।

উত্তর-পশ্চিম থেকে সাগর ছুঁয়ে আসা বাতাসের বেগ গত রাতের চেয়ে একটু বেশীই মনে হলো এখন। কুয়াশা না থাকলেও পৌষের শীত ভালোই জেঁকে বসেছে কানার মাথার সামনের খালে।

ঘণ্টা দুই ঘুরেও কোনো নৌকায় নিয়ম বহির্ভূত কিছু পেলো না মোল্লা বাহিনী। সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ তাদের বোটটা যখন কানার মাথায় ভিড়লো তখন জেলেদের ভিড়ে গমগম করতে শুরু করেছে বাজার এলাকা। দুবলার চরে শুটকি শুকোতে দেওয়া হয়েছে

দুই নৌকার চাপা খেয়ে আহত এক জেলেকে দড়ির স্ট্রেচারে করে বোটে তোলা হলো মংলায় নিয়ে যাওয়া হবে বলে। সাগরে এখন মাছ কম হওয়ায় গোটা দুই ট্রলার ভর্তি জেলে মৌসুমী কর্মক্ষেত্র থেকে বাড়ি যাচ্ছে এক সপ্তাহের ছুটিতে। দ্বাদশীর আগে আর মাছ আসবে না জালে। জেলেদের জাল ভরবে অবাবস্যা, পূর্ণিমা আর ভরা কটালে।

এ দ্বীপ থেকে প্রতি মৌসুমেই প্রায় ৩ কোটি টাকার রাজস্ব জমা হবে সরকারের কোষাগারে। সুন্দরবনের শুটকি বলতে তো এই দুবলার চরই। বন কর্মীদের একটা টিম তাই এখানে এসে থাকে অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি অবধি।

শাহজাহান মোল্লার সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো, মোট ৭১৩টি ইঞ্জিনচালিত ট্রলার আর ৪৩টি বৈঠা নৌকা এ মৌসুমে কর দিয়ে মাছ ধরছে দুবলার চরের আশপাশের সাগরে। সব মিলিয়ে ফাঁস জালের সংখ্যা ১৬৯০। ২০ হাত চওড়া এই জালের ৪০ হাত আয়তনের মুখ সাগরের পানিতে পেতে রাখা থাকে মাছের আশায়। দল বেঁধে উড়ছে বদর কবুতরের ঝাঁক

এখান থেকে প্রতি কেজি মাছে ৫ টাকা করে রাজস্ব তোলে বনবিভাগ। সঙ্গে যোগ হয় ১৫ শতাংশ ভ্যাট। এ মৌসুমের প্রথম মাসেই ৬ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে দুবলার চর থেকে। তবে মৌসুমটা এবার শুরু হতেই দেরি হয়েছে মাসখানেক।

মোট ৬টি ট্রলার এখানে মাছ কিনে নেয় জেলেদের কাছ থেকে। এদের মধ্যে এমভি সায়মা তাবাসসুমে সর্বোচ্চ দেড় লাখ কেজি মাছ ধরে একেক চালানে। এছাড়াও এমভি সাকির-২ ও রফিরাকা-৪, আকলিমা ও আশফাকুর, বায়েজিদ অ্যান্ড মহসিন, ঈসা ইত্যাদিতে করে মাছ্ আর শুটকির চালান ডাঙ্গায় যায় দুবলার চর থেকে।

** চাঁদের সাথেই মাছের প্রেম
** দুবলার সৈকতে মৃতদের মিছিল!
** সাগরের বুকে ভাসমান রাত
** জলে ভাসা রকেট কাহিনী
**
দ্বিতীয়ার চাঁদে মেঘনার হাসি
** সুন্দরী ছুঁয়ে পশুরে ভাসে গাঙচিল


সহযোগিতায়

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৬
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ