ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

খেজুর রসের গন্ধে মাতাল!

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৩৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৬
খেজুর রসের গন্ধে মাতাল! বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর

চারিদিকে কুয়াশায়াচ্ছন্ন। দশ ফুটের খেজুর গাছটায় তরতর করে বেয়ে উঠলেন গাছি। ঠিক যেভাবে দশ পনের বছরের শিশুরা গাছে ওঠে। 

বাগেরহাট থেকে: চারিদিকে কুয়াশায়াচ্ছন্ন। দশ ফুটের খেজুর গাছটায় তরতর করে বেয়ে উঠলেন গাছি।

ঠিক যেভাবে দশ পনের বছরের শিশুরা গাছে ওঠে।  

বয়স কত জানতে চাইলে একগাল হেসে বললেন, বাবা বয়স বল্লিতো গাছি উঠতি নিষেধ করবেন। এবার সত্তর হলো। বয়সের কথা শুনে কিছুটা চমকে গেলাম। তার যে গাছে ওঠার দৃশ্যর সঙ্গে মেলানো যাচ্ছিল না।  শরীরে নাকি আর কুলায় না। বিশেষ করে ভ্যান চালাতে শক্তি পান না। গাছে উঠতেও কষ্ট হয়। কিন্তু ভ্যান চালানোর চেয়ে সহজ মনে হয় তার কাছে।

এই গাছির নাম সোনামুদ্দি শেখ। বাড়ির বাগেরহাট সদরের ফতেপুর গ্রাম। তার নিজের কোনো খেজুর গাছনেই।  অন্যের গাছ চুক্তিতে নেন। এবারও বাগেরহাট-বরিশাল মহাসড়কের পাশে আশিটি গাছ ইজারা নিয়েছেন। একেকটি গাছের জন্য গাছ মালিককে আশি থেকে এক’শ টাকা দিতে হবে।  

কি পরিমাণ লাভ থাকে জানতে চাইলে বলেন, আগে দাম কম থাকলেও রস বেশি পাওয়া যেতো। এখন দাম বেড়েছে কিন্তু রস অনেক কমে গেছে। যে গাছে এক ঠিলে হতো। এখন সেই গাছে অর্ধেক রসও পাওয়া যায় না। সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) আশিটি গাছ থেকে মাত্র দেড় কলস (একেকটি কলস ১২ লিটার) রস পেয়েছেন। শীত বেড়ে গেলে আরও কিছুটা রস বড়বে বলে জানান তিনি। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোরপ্রশ্ন ছিল খেজুর রস সংগ্রহ করতে কেমন লাগে। জবাবে বলেন, বাবা মানুষ ঠিলে চুরি করে নিয়ে যায়। রাত জেগে পাহার দিতে হয়। আজকের একটি ঠিলে ও দু’টি বোতল চুরি হয়ে গেছে।

ঠিলে ব্যয়বহুল কারণে তাদের ব্যবসাতেও কিছুটা পরিবর্তন এনেছেন। বেশ কয়েকটি গাছে পানির খালি বোতল লাগানো। বললেন কয়েক দিনেই বেশ কয়েকটি ঠিলে চুরি হয়ে গেছে। কেউ কেউ নাকি রস খেয়ে হাড়ি ভেঙে রেখে যায়। এতে খুবই কষ্ট হয় তার। কিন্তু কিছুই করার নেই। ছোট্ট থেকে এই একটি মাত্র কাজ তিনি ভালো ভাবে শিখেছেন।

বাগেরহাট অঞ্চলে খেজুর রসকেন্দ্রীক বিশেষ সংস্কৃতি চালু রয়েছে। নতুন ধান ঘরে আসার পর। মেয়ে জামাইকে দাওয়াত দিয়ে আনা হয়। পিঠা ও খেজুরের পায়েস খায়ানোর জন্য। অনেকে সারা বছরের শহরে থাকলেও শীতের সময় স্বপরিবারে গ্রামে আসেন এই পায়েসের স্বাদ নিতে। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোরএর মন মাতানো মৌ মৌ গন্ধ আর কোন খাবারে পাওয়া কঠিন। সে কারণে একে ছেড়ে থাকাও কঠিন। তাই শীত এলেই অনেকে প্রাণের টানে ছুটে আসেন গ্রামে। অনেকে আবার কাঁচাই খেয়ে ফেলেন কয়েক গ্লাস। তবে ইদানীং জিকা ভাইরাসের কারণে এই উন্মাদনায় কিছুটা ভাটা পড়েছে।

তবে আগের মতোই রসের পিঠা, খেজুরের পাটালি গুড়, ঝোলা গুড়। খেজুর গুড়ের মিষ্টি, সন্দেশ আরও কত রকমের খাবার। উপভোগ করতে হলে এখনই উপযুক্ত সময়। টাটকা রস গাছির কাছ থেকে নিয়ে কয়েক ঘণ্টা খানেক সময়ের মধ্যে পায়েসে রূপান্তরের দৃশ্যও কম মোহনীয় না।

আরও পড়ুন

**কুসংস্কারে ভরা দীঘি সম্ভাবনায় ঠাসা​
**বাগেরহাট ডিসির কষ্ট ও বাস্তবতা
** চিত্রায় প্লেনের ছোঁয়া

সহযোগিতায়

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৬
এসআই/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ