ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

মুড়ি ভাজার শব্দে ঘুম ভাঙে! (ভিডিও)

মাহবুবুর রহমান মুন্না, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৬
মুড়ি ভাজার শব্দে ঘুম ভাঙে! (ভিডিও) ছবি: আবু বকর

বাগেরহাট থেকে: যান্ত্রিক কোলাহলমুক্ত শান্ত সবুজ গ্রাম বাগেরহাটের বারুইখালী ও রামনগর বৈখালী। যে গ্রাম দু’টিতে প্রবেশ করলে বাতাসে পাওয়া যাবে একটি সুঘ্রাণ। কানে ভেসে আসবে মট-মট শব্দ। ঘ্রাণ আর শব্দের সন্ধান করলে যা পাওয়া যাবে- তাতে রীতিমতো চমকে উঠতে হবে।

গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে চলছে মুড়ি ভাজার কাজ। মুড়ি ফোটার শব্দ আর ঘ্রাণ ভাসছে বাতাসে।

গ্রাম দু’টিকে বলা হয় মুড়ি গ্রাম। মুড়ি তৈরি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে আসেন অনেকে।

রোববার (১৮ ডিসেম্বর) গ্রাম দু’টি ঘুরে দেখা যায়, গ্রামের মানুষ কেউ মুড়ির জন্য শুকাচ্ছেন চাল-ধান, কেউবা আবার লাকড়ি কুড়াচ্ছেন। কেউবা মাটির খোলায় চাল গরম করছেন। গরম বালুর স্পর্শে তা মট-মট শব্দে ফুটে তৈরি হচ্ছে সুস্বাদু মুড়ি। গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই এ দৃশ্য।

ছবি: আবু বকরঐতিহ্যগতভাবেই এ গ্রামের বাসিন্দারা বংশানুক্রমে কয়েক পুরুষ ধরে দেশীয় পদ্ধতিতে মুড়ি তৈরি করে আসছেন। নারীরা মুড়ি তৈরির জন্য চাল শুকানো থেকে শুরু করে বেশির ভাগ কাজ করে থাকেন। পুরুষেরা মূলত বিক্রি করতে বাজারে নিয়ে যান। সনাতন পদ্ধতিতে হাতে মুড়ি ভেজে সংসার চাল‍ায় এ গ্রামের অনেকে।

ম‍ুড়ি ভাজার সময় কথা হয় রামনগর বৈখালী গ্রামের রানী বালার সঙ্গে। তিনি বলেন, আমাগে (আমাদের) গেরামে (গ্রামে) হগ্গলের (সবার) ছোয়াল (ছেলে) পোয়ালের ঘুম ভাঙ্গে মুড়ি ভাজার শব্দে।

ছবি: আবু বকরএকই গ্রামের সুধাংশু জানান, তারা যে মুড়ি ভাজছেন তা হুগলি ধানের। প্রতি কেজি মুড়ি পাইকারি বিক্রি করেন ৬০-৬২ টাকা দরে।

বারুইখালী গ্রামের অনিমা সাহা জানান, ভোর থেকেই প্রায় প্রতিটি বাড়িতে শুরু হয় মুড়ি ভাজার কাজ- চলে গভীর রাত পর্যন্ত। এক মণ ধানে ২০-২২ কেজি মুড়ি পাওয়া যায়।

তিনি জানান, মুড়ির চাল পানিতে ধুয়ে ধুলাবালি পরিষ্কার করে তাতে লবণ মিশিয়ে রোদে শুকানোর পর ভাজতে হয়। গরম বালুর ভেতর চাল ঢেলে নাড়তে থাকলে মুড়ি তৈরি হয়ে যায়। পরে বালু আলাদা করলেই পাওয়া যায় সুস্বাদু মুড়ি। মুড়ি তৈরির এ কাজ দেখতে প্রতিদিন অনেক পর্যটক আসেন বারুইখালী ও রামনগর বৈখালী গ্রামে। তারা মুড়ি কিনে নিয়ে যান।

ছবি: আবু বকররামনগর বৈখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সুশান্ত কুমার সাহা বাংলানিউজকে বলেন, এ এলাকার হিন্দুদের প্রধান পেশা হলো মুড়ি তৈরি। তারা বংশানুক্রমে এ পেশাকে ধরে রেখেছেন। বারুইখালী ও রামনগর বৈখালী এ দুই গ্রামকে সবাই মুড়িগ্রাম বলে চেনেন।

একই বিদ্যালয়ের শিক্ষক শীতল সাহা বাংলানিউজকে বলেন, বিশ্ব ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদ, হয়রত খান জাহানের (র.) মাজার, সুন্দরবনসহ জেলার বিভিন্ন ঐতিহাসিক নিদর্শন ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে প্রতিদিন হাজারও দেশি-বিদেশি পর্যটক আসেন বাগেরহাটে। তাদের কাছে স্থানীয় মুড়ি শিল্পকে তুলে ধরতে পারলে এ জেলার গ্রামীণ ঐহিত্য সম্পর্কেও জানতে পারবেন তারা।

আরও পড়ুন..

নারকেল-সুপারির বাগানে ভরপুর বাগেরহাট

সহযোগিতায়

** বাংলাদেশ সময়: ২১৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৬
এমআরএম/টিআই/এটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ