ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

বগালেকের মুগ্ধ গাছ!

আসিফ আজিজ, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০১৬
বগালেকের মুগ্ধ গাছ! ছবি: আসিফ আজিজ-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বগালেক ঘুরে: ভোরের আলো চোখ মেললে পাহাড় আর ঘুমাতে দেয় না। এটা একপ্রকার নিয়ম হয়ে দাঁড়ালো এবারের ট্যুরে।

বোধহয় অবর্ণনীয় সৌন্দর্য অবলোকন করাতেই সূর্যদেবের এ আহ্বান! মেঘদলের নেমে আসা, ওড়াউড়ি, পাখিদের কিচিরমিচির আর প্রকৃতির স্নিগ্ধতা- সব মিলিয়ে অপরূপ সে ভোরের পাহাড়।

বগালেকেও তাই ঘটলো। শিশিরভেজা ঘাসে পা ডুবিয়ে ভোরের বগালেক উপভোগ করে এসে নাস্তার টেবিলে বসলাম সিয়াম দিদির ঘরে। তখনও তৈরি হয়নি সব পদ। গল্প করছিলেন দিদি। কীভাবে বগালেক হলো, কীভাবে স্কুল শিক্ষক থেকে হয়ে গেলেন পর্যটকদের বন্ধু- এসব। অনেক ট্রেকার এখানে আসেন, বলতে গেলে তারাই প্রথম বগালেককে সাধারণ মানুষের কাছে পরিচিত করে তুলতে থাকেন।

এমনই এক ট্রেকার ছিলেন ডা. তাশদিদ রেজওয়ান মুগ্ধ ও তরিকুল আলম সুজন। কেওক্রাডং বেল্টের পাহাড় চড়তে গেলে বেসক্যাম্পের মতো বগালেকে ট্রেকারদের থামতেই হয়। এভাবে বগালেক আসতে আসতে দারুণ এক মধুর সম্পর্ক হয়ে যায় ডা. মুগ্ধর সঙ্গে। সিয়াম দিদির স্কুল নিয়ে তার ভাবনার শেষ ছিলো না। এমনকি স্কুলের জন্য নিয়মিত টাকা পাঠাতেন মুগ্ধর বাবা কিংবা মুগ্ধ নিজেই।

একসময় টাকা দেন স্কুলের আশপাশে কিছু গাছ লাগানোর জন্য। দিদি আর দেরি করেননি। লাগিয়ে দিলেন কিছু আমের চারা। সব বার্মিজ আম। কারণ এ আম পাহাড়ে ভালো হয়। গাছগুলো বেড়ে উঠতে থাকলো দ্রুত।

এর মধ্যে ডা. মুগ্ধর পাহাড়ে যাতায়াতও থাকলো অব্যাহত। বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চূড়া জো ত্লাং অভিযানে আসেন মুগ্ধ। সঙ্গে ছিলেন সুজন, সালেহীনসহ কয়েকজনের একটি টিম। এটি ছিলো ওই পাহাড়ে প্রথম অভিযান। ঐতিহাসিক সে অভিযান শেষে থানচির বলিপাড়ায় এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান ডা. মুগ্ধ ও সুজন। আহত হন সঙ্গীয় অন্যরা। এ দুর্ঘটনায় মারা যান মোট ১৪ জন।

এ খবর শুনে সিয়াম দিদি এতোটাই বিচলিত হন যে সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যান ঢাকায়। মুগ্ধকে শেষবারের মতো দেখতে।   কিন্তু দুর্গম পথ পেরিয়ে দিদি যখন পৌঁছান ততক্ষণে আজিমপুর কবরস্থানে তার দাফন হয়ে গেছে।

২০১২ সালের সেই স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগি হয়ে ওঠেন সিয়াম দিদি। আমাদের নিয়ে যান সেই স্কুলঘরের কাছে। গাছগুলো দেখিয়ে পাতা ধরে ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে বলেন, আমি এই গাছগুলোর নাম দিয়েছি মুগ্ধ গাছ। অন্য নামে আমি এদের ডাকি না। গাছগুলোতে এখন ফল ধরছে। খুব খারাপ লাগে মুগ্ধ এগুলো দেখতে পাচ্ছে না। যখন পর্যটকরা আসেন, কথা বলেন, আমি গাছগুলো দেখিয়ে বলি গাছগুলো চেনেন, এর নাম মুগ্ধ গাছ!

আরও পড়ুন:
**অজগরের মাংস খেতেই জেগে উঠলো বগালেক!
**সাদেকের কমলার জুসে পাহাড় মাড়ানোর ক্লান্তি দূর
**খাবারে পাহাড়ি সাজ-ঐতিহ্যের হলিডে ইন
**পাহাড়ি শিশুর খেলায় প্রাণ যায় মায়াবি পাখির
** পৃথিবীর সেরা পানি আমাদের পাহাড়ে!

** ৩ ঘণ্টার ট্রেইলে ঘেমে-নেয়ে কেওক্রাডংয়ের স্বর্গচূড়ায়
** রাস্তা হলে দেশি পর্যটকই জায়গা পাবে না বগালেকে

** পাহাড়ের ময়না যাচ্ছে পর্যটকের খাঁচায়
** হরেক পদের খাবারে ওয়াগ্যোয়াই পোয়েঃ’র শুভেচ্ছা
** পাহাড়চূড়ায় চোখের সামনে  রংধনুর ’পর রংধনু (ভিডিওসহ)
** ইউরোপ-আমেরিকাকেও পায়ে ঠেলবে রাঙামাটির লংগদু
** ধসে যাচ্ছে রাঙামাটি শহরের পর্যটন
** রাঙামাটিতে বোটভাড়া নিয়ে ঠকবেন না যদি…
** বিকেলটা কাটুক হেরিটেজ পার্কে
** দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম বুদ্ধমূর্তির দেশে
** পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী সব খাবার ‘সিস্টেমে’
** বাঁশের ভেতর মুরগি, পদের নাম ব্যাম্বো চিকেন
** পাহাড়ের সবুজ মাল্টায় দেশজুড়ে বিপ্লব
** নীলাচলে ভোরের আলোয় মেঘের ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’ 

 

বাংলাদেশ সময়: ১০১২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০১৬
এএ/জেডএম

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ