ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

শিশিরভেজা সকালে ম্যারাইংতং পাহাড়ের ম্রো পাড়ায়

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০১৬
শিশিরভেজা সকালে ম্যারাইংতং পাহাড়ের ম্রো পাড়ায় ছবি- সোহেল সরওয়ার- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

আলীকদমের ম্যারাইংতং পাহাড় ঘুরে: প্রায় হাজার দেড়েক ফুট হেলানো পাথুরে পথ মাড়িয়ে যখন পাহাড়ের দুই তৃতীয়াংশ ওঠা শেষ, ম্যারাইংতং পাহাড়ের মাথায় তখন সবে রোদ উঠি উঠি করছে।

শিশির ভেজা পাহাড়ে ওঠার পথের ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র পাথর ও মাটি ভিজে সামান্য পিচ্ছিল উঠ‍ায় বেশ কষ্ট করতে হলো।

ফলে হাজার ফুট উঠতেই ঘেমে-নেয়ে একাকার অবস্থা।

উদ্দেশ্য ছিলো- বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার ২ হাজার ফুট উঁচু ম্যারাইংতং পাহাড়, বেসরকারি ‍‌‌উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) কারিতাসের উদ্যোগে পাহাড়ের কমলা বাগান দর্শন ও ম্রো পাড়া দেখা।

প্রায় ঘণ্টাখানেক সময় খরচায় দেড় হাজার ফুট উপরে ওঠার পর পাহাড় দেখার সাধ অনেকটা উবে গেছে। তবে ম্যারাইংতং পাহাড় চূড়ার কয়েকশ’ ফুট নিচে পাহাড়ের একটা উঁচু-নিচু অংশে পাওয়া গেলো ম্রো পাড়া। পাড়াটার নাম মাংহাই পাড়া।

দলবেঁধে ম্রো পাড়ায় সাংবাদিক আগমনের খবর আগেই পেয়েছিলেন মাংহাই পাড়ার কমলা চাষি পাহাড়িরা। মাংহাই পাড়ায় পৌঁছুতেই তাই দেখা মিললো ‍সামং ম্রো’র।

কাঠখোট্টা চেহারার বেটে আকৃতির সামং আগেই খবর পেয়ে অপেক্ষা করছিলেন। তার হাতে আপ্যায়নের জন্য পাহাড়ি কলার একটা কাদি। সঙ্গে আরও ক’জন ম্রো কমলা চাষি।

পরিচয় বিনিময় হতেই জানা গেলো, এতো উঁচুতে তারা বংশ পরম্পরায় বসবাস করে আসছেন। তবে পাহাড়ের মাথায় তাদের জুম ক্ষেত। ফসলের নিরাপত্তার জন্যই তারা ‌উঁচুতে চাষবাদ আর কিছুটা নিচে বসবাস করেন।

ম্রো চাষি তায়ং ও  মেঅং ম্রো ঘুরে ঘুরে দেখালেন কারিতাসের সহায়তায় করা তাদের সমন্বিত ফল ও কমলা বাগান। এরপর ম্রো চাষি মেনং ও সামং ম্রো নিয়ে গেলেন পাড়ার ভেতরে, যেখানে সারিবদ্ধভাবে তৈরি তাদের মাচান ঘর।

ঘর বলতে বাঁশ ও কাঠের মাচানের ওপর তৈরি স্থাপনা। এ মাচাং তৈরি হয় পাহাড়ে জন্মানো বোরাক নামে এক প্রজাতির বেশ মোটা ও লম্বা বাঁশ দিয়ে। তারা জানালেন, আশপাশের পাহাড়েও কিছু ম্রো পরিবার বাস করে। তবে এ পাহাড়ে মাংহাই পাড়ায় তারা বর্তমানে ১৮টি পরিবার রয়েছেন, যারা সবাই পরস্পর আত্মীয়। অন্য সব আদিবাসী পাড়ার মতোই তাদের পাড়া। তবে প্রায় জনমানবশূন্য, বেশিরভাগ নারী-পুরুষ গেছেন জুম চাষ বা অন্য কাজে। পাড়ায় রয়েছেন বয়স্কা নারী-পুরুষ  ও শিশুরা।

সামং জানালেন, নিচে তারা বসবাস করেন আর উপরের দিকে চাষাবাদ।

বাংলা ভালো বলতে না পারলেও বুঝতে পারা সামং জানান, তাদের সন্তানেরা কাছাকাছি স্কুলে পড়তে যায়। তবে হাইস্কুলে ভর্তি হলেও শেষ পর্যন্ত টিকে  থাকতে পারে না।

আগে পাড়ায় ছোট বড় কয়েকটি ঝিরি থাকলেও এখন শুকিয়ে গেছে। ফলে তাদের একমাত্র ভরসা পাহাড়ের কালো পাথরের ঝরনা।

জুমের ফসল ডাল, ধান, ভুট্টা, কলা, কুমড়া বিক্রি করতে পাহাড় থেকে আশপাশের বাজারে যান তারা। কিন্তু এতে তাদের ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। পাহাড় থেকে পণ্য নেওয়ার জন্য কোনো ব্যবস্থা হলে ভালো হতো বলে জানান তিনি।

এ ম্রো পাড়ায় উৎসব বলতে নিজেদের সামাজিক কৃষ্টি। তবে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ম্রোদের সবচেয়ে বড় আনন্দের উপলক্ষ্য ২ হাজার ফুট উঁচু ‍এ পাহাড়ের চূড়ায় নির্মিত বৌদ্ধ জাদী মন্দিরের মহা বৌদ্ধ মেলা ও উৎসব।

১৯৯২ সালে পূজনীয় ভিক্ষু সংঘের উদ্যোগে ওই জাদী মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিবছর নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠেয় ওই উৎসবকে কেন্দ্র করে এখানে আসেন অসংখ্য ভিক্ষু, পূণ্যার্থী ও পর্যটক। সারাবছর নিভৃতে কাটানো ম্রো পাড়ার আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার জন্য ওই উৎসবের দিনগুলোই হয়ে ওঠে আনন্দ-উল্লাসের।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০১৬
এসআর/এমএ/জেডএম

আরও পড়ুন-
** মাতামুহুরী নদীর 'বক দ্বীপ'
** নিরবধি বয়ে চলা 'শৈল প্রপাত'
** দ্য ওয়াটার ল্যান্ড অব রাঙামাটি
** পানির রাজ্যে পাহাড়ের বুদ্ধ...
** প্রশান্তি বিলাতে কাপ্তাইয়ের ‘রিভার ভিউ পিকনিক স্পট’
** দেশের যে শহরে রিকশা নেই!
** খাগড়াছড়ির প্রবারণা উৎসবে…
** 'জিরাফ গলার' ঝুলন্ত সেতুর আকর্ষণও কম নয়
** রেল স্টেশনে বিনামূল্যে বিশুদ্ধ পানি
** রাবার ড্যামে চেঙ্গী নদীপাড়ের কৃষকদের সুদিন

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ