ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

আলীকদম পর্যটনে প্রধান সমস্যা পানি

আসাদ জামান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৪৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১৬
আলীকদম পর্যটনে প্রধান সমস্যা পানি

আলীকদম (বান্দরবান) ঘুরে: চারদিক পাহাড় ঘেরা আলীকদমে মাতামুহুরী নদী, আলীর গুহা, মারিয়ানটং পাহাড়, পাহাড়চূড়ায় বুদ্ধজাদী মন্দির, রূপমুহুরী ঝরনা, পোয়ামুহুরী ঝরনা, লাগমেরাগ ঝরনা, খংখিয়ং ঝরনা, বাদুর পাহাড়, মারাইনভং পাহাড়, সাইংপ্রাটুইন ঝরনা সর্বপরি এশিয়ার দ্বিতীয় সর্বচ্চো সড়ক- কী নেই আলীকদমে?
 
এরপরও পযর্টক আলীকদমে আসতে চান না। তারা বান্দরবানের নীলাচল, শৈলপ্রপাত, চিম্বুক পাহাড়, নীলগিরি, থানচি, রোমা, তাজিংডং, কেউক্রাডাং ঘুরে চলে যান।

আলীকদমের দিকে পা বাড়ান না। কিন্তু কেন?

কারণ অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গোটা আলীকদমে ব্যবহার ও পানযোগ্য পানির প্রচণ্ড অভাব। চারদিক পাহাড় ঘেরা আলীকদমের বাসিন্দরাই আছেন পানি সংকটে। পানির সহজলভ্যতার অভাবে নিজেরোই থাকেন দুর্ভোগে। এরমধ্যে আবার অতিথি ডেকে বাড়তি ঝামেলা পোহাতে যাবেন কেন?


প্রাচীনকাল থেকেই আলীমকদমের পানির প্রধান উৎস ছিল পাহাড়ের ঝরনা, ঝিরি ও ছড়া। মাতামুহুরী নদীর পানিও খাবার পানি হিসেবে ব্যবহার করত আলীকদমের বাসিন্দারা| কিন্তু কালক্রমে ঝরনা, ঝিরি ও ছড়াগুলো মরে যাওয়ায় এবং মাতামুহুরী নদীর পানি দূষিত হয়ে যাওয়ায় তীব্র পানি সংকটে পড়েন আলী কদমের সাধারণ মানুষ।

ফলে ব্যবহার ও পানযোগ্য পানির জন্য এ জনপদের মানুষ নতুন উপায় খুঁজতে শুরু করেন। বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে তাদেরকে বেছে নিতে হয় রিংওয়েল পদ্ধতি। কিন্তু এই রিংওয়েল ব্যবস্থা অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও জটিল।

পাহাড়ী জনপদে টিউবওয়েলের বিকল্প হিসেবেই রিংওয়েল ব্যবস্থার উদ্ভব। পানির লেয়ার ধরতে পাথর খুঁড়ে খুঁড়ে নিচে যেতে হয়। ফলে স্টিল বা প্লাস্টিকের পাইপ বসানো আলীকদমে অসম্ভব। তাই  ৪/৬ ফুট ব্যাসের কুয়ো খনন করে সেখানে কংক্রিটের রিং বসাতে হয় পানির জন্য। ৩-৪ শ’ ফুট গভীর যাওয়ার পর মেলে বিশুদ্ধ পানি।
 
এই পানির লেয়ারে নামিয়ে দেওয়া হয় পাইপ। আর কুয়ার মুখে কংক্রিটের  ঢাকনা বসিয়ে সেখানে সেট করা হয় টিউবওয়েল। বর্তমান বাজার মূল্যে এই ধরনের একটি কাজ সম্পন্ন করতে কয়েক লাখ টাকার প্রয়োজন হয়। যা কোনো ব্যক্তির একার পক্ষে করা সম্ভব না।

আবার ইউনিয়ন পরিষদের বাজেট দিয়ে এত বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব না। তাই সরকারি ও বেসরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠান নিজেদের অর্থায়নে আলীকদমে কয়েকটি রিংওয়েল স্থাপন করেছে। এই রিংওয়েল থেকেই এ জনপদের মানুষের খাবার পানির চাহিদা পূরণ হচ্ছে।


তবে অতিমাত্রায় পানি তোলার কারণে শুষ্ক মৌসুমে পানির লেয়ার নিচে নেমে যায়। তখন পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে পড়ে। এলাকার বাসিন্দরা তখন পড়েন সীমাহীন দুর্ভোগে। আলীকদম ঘুরে এ রকম বেশ কয়েকটি পরিত্যক্ত রিংওয়েল দেখা যায়।

আবার যেসব রিংওয়েল সচল আছে, সেগুলোতে ভোর থেকে গভীর রাত পযর্ন্ত চলে পানি সংগ্রহ করতে দেখা গেছে। কেউ গোসল করছেন, কেউ পানি নিচ্ছেন। কেউ আবার থালা-বাসন পরিষ্কার করছেন। তবে গোসল, থালা-বাসন পরিষ্কার কাপড় ধোয়া এবং অফিস ও বড় স্থাপনায় ব্যবহারের জন্য আরেকটি পদ্ধতি চালু আছে আলীকদমে।
 
ঝিরির পাশে গভীর কূপ খনন করে সেখানে রিং বসানো হয়। ঝিরি থেকে একটা পাইপ ওই রিংয়ের মধ্যে নামানো থাকে। ওই পাইপ দিয়ে ঝিরির পানি রিংয়ে গিয়ে জমা হয়। পরে এই রিং থেকে মোটর দিয়ে পানি তোলা হয় ব্যবহারের জন্য। কিন্তু কুয়োয় জমা হওয়া ঝিরির এই পানি ঘোলা ও আবর্জনাযুক্ত থাকে। বাথরুমের কাজে এটি ব্যবহার করা গেলেও গোসল ও মুখ ধোয়ার কাজে ব্যবহার করা অনেক সময় কঠিন হয়ে যায়।

এমন পরিস্থিতিতে আলীকদম পযর্টনবান্ধব হয়ে ওঠা কঠিন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে পকেটে টাকা থাকলে এ সমস্যার কিছুটা সমাধান হতে পারে। আলীকদম শহরে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বোতলজাত পানি পাওয়া যায়। এটা দিয়ে মোটামুটি খাবার পানির সমাধান হবে। কিন্তু সমস্যা হলো গোসল ও অন্যান্য কাজের ক্ষেত্রে।
 

আরও পড়ুন..

** মাতামুহুরীর বাঁকে স্বর্গ দর্শন

** চুম্বকের মতো পযর্টক টানবে চিম্বুক
** নীলাচলে পায়ের নিচে মেঘবালিকা
** মোহম্মদীয়া হোটেলে জুরাছড়ির পযর্টন বাধা দূর!
** এটি কিন্তু জুরাছড়ি!
** হাজারছড়ায় পযর্টকের অপেক্ষায় আফিদা
** বিজিবির আতুরঘরে
** আলুটিলা রহস্যগুহায় গা ছমছমে অনুভূতি
** পাহাড়ে নিরুত্তাপ হরতাল
** সময় বশীভূত ইউএস বাংলায়!

বাংলাদেশ সময়: ০৬৪৭ অক্টোবর ২২, ২০১৬
এজেড/টিআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ