ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

সমুদ্র আর সৈকতই ভরসা পর্যটন নগরীর

অমিয় দত্ত ভৌমিক, ওয়েব ইনচার্জ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ৭, ২০১৬
সমুদ্র আর সৈকতই ভরসা পর্যটন নগরীর ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কক্সবাজার থেকে: চৈত্রের কড়া রোদ শেষে পড়ন্ত বিকেলে আবু তাহের দম্পতি হাজির হলেন পর্যটন নগরী কক্সবাজারের লাবনী পয়েন্টে। সন্ধ্যা পর্যন্ত সমুদ্র তীরে সৈকতে হিমেল বাতাসে নিজেদের জুড়িয়ে শহরের কোনো বিনোদন কেন্দ্র খুঁজছিলেন তারা।

একাধিক জনকে জিজ্ঞেস করেও পেলেন না তেমন কোনো বিনোদন কেন্দ্রের খোঁজ। বারবার আশপাশের পরিচিত-অপরিচিতজনদের কাছে জানতে চান, কোনো ভালো সিনেমা হল আছে কিনা?

কিন্তু উত্তরে কেবল মিললো, শহরে তেমন কোনো ভালো সিনেমা হল নেই। যেগুলো আছে তার অবস্থা খুবই নাজুক।  

এই বিনোদনপ্রেমীসহ একাধিক পর্যটকের কথার রেশ ধরে কক্সবাজারের দু’টি সিনেমা হলে ঢু মারতেই পাওয়া গেলো হলগুলোর জরাজীর্ণ অবস্থা।

শহরের প্রাণ কেন্দ্র বঙ্গবন্ধু রোডে সত্তরের দশকে নির্মিত টকি হাউস সিনেমা হল। এক সময় বেশ নাম-ডাক ছিলো।

সেখানে  গিয়ে দেখা গেলো, প্রাচীন সভ্যতার মতো ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে সিনেমা হলটি। একটি সিনেমা হলের চিরাচরিত যে চিত্র তার তো দেখা মিললোই না, বরং ভেতরে প্রবেশ করে দেখা গেলো জীর্ণ অবস্থা। কয়েকটি ফ্যান গো গো শব্দ করে নিথর গতিতে ঘুরছে। চেয়ারগুলোও ভাঙাচোরা ও এলোমেলো।   দেখে মনে হয়, পরিত্যক্ত কোনো ভবন।

অনেকেই বলছিলেন, সিনেমা হলে ১০ মিনিট বসে থাকার উপায় নেই ছারপোকার অত্যাচারে। দীর্ঘদিন ধরে অবহেলা ও অযত্নে পড়ে থাকতে থাকতে এটিতে দর্শনার্থীর সংখ্যা দিনে দিনে প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে।

কথা হয় টকি হাউস সিনেমা হলের টিকিট কাউন্টারের ম্যানেজার দুলাল দের সঙ্গে। জানালেন, সারাদিনে তারা চারটি শো চালান। সন্ধ্যার শোতে টিকিট বিক্রি করছেন মাত্র সাতটি। দুপুর ১২টার শোতেও টিকিট বিক্রি করেছিলেন সাতটি।

‘শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিনই চার শো’তে ২৫ থেকে ৩০টি টিকিট বিক্রি হয়। ওইদিন গড়ে ১০০টি টিকিট বিক্রি হয়। অথচ এক সময় কক্সবাজারে ভ্রমণে আসা পর্যটকদের বেশির ভাগই এখানে সিনেমা দেখতে আসতেন। ভিড় লেগে থাকতো স্থানীয়দেরও,’ হতাশ ভঙ্গিতে বলেন তিনি।   ‍

দুলাল দের কথার মিল পাওয়া গেলো স্থানীয় সিনেমা ভক্তদের জবানিতেও।

পাশেই বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন স্থানীয় মোজাম্মেল হক, হেলাল, সুজন ও শাহজাহান।  

এগিয়ে গেলে তাদের কেউ কেউ বলতে শুরু করেন, এক সময়ে হলে আসা প্রতিটি সিনেমাই দেখতাম। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে আর সিনেমা হলে যাওয়া হয় না।

হেলাল বলেন, হলটির পরিবেশ খুবই নোংরা। অথচ এ হলেই সিনেমা দেখার জন্য সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে টিকিট কিনেছি অনেক।

খানিকক্ষণ মন দিয়ে কথাগুলো শুনে যাচ্ছিলেন শাহাজাহান। যিনি পেশায় গাড়ি চালক। ‘দশ মিনিট এই হলে থাকলে শরীরের সব রক্ত শেষ হয়ে যাবে,’ মুখ খুলেন তিনি।

এই কথায় মাথা নেড়ে সমর্থন জানালেন মোজাম্মেল, সুজনরাও। তবে এ বিষয়ে একমত নন হল কর্তৃপক্ষ।

হলের টিকিট ম্যানেজার দুলাল দে’র বলছেন, নিত্য নতুন প্রযুক্তির কারণে সবার হাতে হাতেই স্মার্টফোন, অনেকের আছে ল্যাপটপ-ডেস্কটপ। নতুন কোনো সিনেমা এলে সেখানেই দেখে ফেলে সবাই। তাই মানুষ হল বিমুখ হচ্ছেন।

তবে তার এ কথার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করলেন স্থানীয় লোকজন ও কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটকেরা।

তারা বলেন, সিনেমা ডিজিটাল করলে এবং মনোরোম পরিবেশ থাকলে অবশ্যই সবাই হলে গিয়েই সিনেমা দেখবে।  

একই অবস্থা দেখা গেলো বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) অডিটোরিয়ামেও। বিজিবি পরিচালিত হলটিও নিয়মিত ভুগছে দর্শক খরায়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বিজিবি অডিটোরিয়ামের অবকাঠামোগত অবস্থা ও পরিবেশ মোটামুটি ভালো। তবে এ যুগে এনালগ পদ্ধতিতে সিনেমা উপভোগ করতে আসেন না দর্শকরা।

রাজশাহী থেকে কক্সবাজারে ঘুরতে আসা হেলাল আহমেদ বলেন, বিদেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে সিনেমা হলসহ নানা ধরনের বিনোদন কেন্দ্র আছে। আমাদের রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমুদ্র সৈকত। কিন্তু  এখানে শুধু সমুদ্র বিলাস ছাড়া বিনোদনের তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই।

‘সমুদ্রের হাওয়া আর সৈকতই এখানকার বিনোদনের স্পট,’ বলেন তিনি।

বাংলানিউজকে হেলাল বলেন, বিশ্বের অনেক দেশই পর্যটন দিয়ে অনেক এগিয়ে গেছে। আমাদের সে সম্ভাবনা থাকলেও পর্যটক টানতে সে ধরনের কোনো উদ্যোগ নেই। থাকলেও কার্যকর নয়।

‘দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে আমাদের সরকারের উচিত বিভিন্নমুখী বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলা। যেখানে থাকবে আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন ভালো মানের সিনেমা হলও,’ দাবি জানান তিনি।
 
বাংলাদেশ সময়: ২১২৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০১৬
একে/এডিবি/এমএ

** সেন্টমার্টিন যেভাবে যাবেন
** দূর থেকে ভাসমান, কাছে গেলেই দৃশ্যমান ছেঁড়া দ্বীপ

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ