ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

হালতি বিলে দাগ কেটে ক্রিকেট, ধুমছে খেলা (ভিডিওসহ)

আসিফ আজিজ ও শুভ্রনীল সাগর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৬
হালতি বিলে দাগ কেটে ক্রিকেট, ধুমছে খেলা (ভিডিওসহ) ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

হালতি বিল, চলন বিল, নাটোর থেকে ফিরে: সারি সারি দাগ কাটা। দাগগুলোর উপরের অংশ ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে ঢাকা।

একজন ব্যাট চেপে, তার ডাক পড়তেই দাগ লক্ষ্য করে বাকিদের ছুট। কার আগে কে ধরবে!

এ দৃশ্য দেখামাত্রই ‘একটি নির্দিষ্ট প্রজন্ম অব্দি’ যেকোনো ছেলের চোখ চকচক করে উঠবে!

আহা, কী সব সোনালি মুহূর্ত। হুড়মুড় করে দাগ ধরা। দাগের নিচে ‘ম্যাজিকাল নাম্বার’। যে এক পাবে তার আগে ব্যাট, যার ভাগ্যে আট বা নয় সে সবার পরে। কেউ মুহূর্তের দ্বিধাদ্বন্দ্বে দু-তিনবারও দাগ পাল্টাতো। পরে দেখা যেতো আগের দাগেই ভালো নম্বর পড়েছিলো। তখন তার হাড়ির মতো মুখ ছিলো দেখার মতো। আহারে!

‘দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায় রইল না
সেই-যে আমার নানা রঙের দিনগুলি’।

বেলা বাড়ে। মেঘে মেঘে আমাদেরও বয়স হয়। আমরা শৈশব ছেড়ে ইট-পাথরের নাগরিক প্রান্তরে চলে আসি। তবু ‘আমরা যাইনি ম’রে আজো- তাই কেবলই দৃশ্যের জন্ম হয়’। তাই হঠাৎ আমরা নাটোরের হালতি বিলে দাগ কেটে ক্রিকেট খেলার দৃশ্য দেখে ফেলি। সেই দৃশ্য যেমন দৃশ্যের জন্ম দেয়, তেমনি এক ঝটকায় এরকম অসংখ্য সুখজাগানিয়া দৃশ্য চোখের সামনে নিয়ে আসে।

হালতি মূলত চলনবিলের একাংশ। সীমানা নির্ধারণ করলে পূর্বে মোহনপুর, পশ্চিমে মাধনগর স্টেশন, উত্তরে খাজুরা আর দক্ষিণে পড়েছে পাটুল। হিসেব করলে প্রায় চার হাজার একর। নাটোর শহর থেকে বিল হালতির একেবারে মধ্যিখান পর্যন্ত দূরত্ব প্রায় ১৩ কিমি পথ পেরুলে খোলাবাড়িয়া গ্রাম।

‘হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে, সিংহল-সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয়-সাগরে’। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা হালতির বুকে, বাংলানিউজের বিশেষ দল সেখানে ছিলো।

হালতির বুকে যখন পা রাখি তখন পড়ন্ত বিকেল। চারদিকে সবুজের মহাসমারোহ। সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকে নামতেই চোখ চলে গেলো মাঠে। বলা ভালো, মাঠভর্তি নবীন প্রাণের দলে। মাঠের একাংশে চলছে জমজমাট ফুটবল, অন্য অংশে ভলিবল। যারা খেলায় নেই তারা সানন্দে পূরণ করছে দর্শকের কোটা।

এ গেলো বিকেলের কথা। পরদিন ভোর হতেই আবার তাদের পাওয়া গেলো মাঠে। সবার চোখেমুখে যেনো, ‘আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে’! সকালে চলছে ক্রিকেট। তাই বলে লেখাপড়া ফাঁকি দিয়ে নয়। স্কুল-মাদ্রাসা শুরু হওয়ার ‍আগে যতোটুকু খেলা যায় আর কী!

শুরুতে ইনভার্টেট কমা দেওয়া একটি বিষয় ছিলো, ‘একটি নির্দিষ্ট প্রজন্ম অব্দি’। বিষয়টি হলো, বর্তমান প্রজন্ম, যাদের বলা হয় ‘জেন ওয়াই’- তাদের তো আর মাঠেই দেখা যায় না। তাদের ভিড় এখন স্যোশাল মিডিয়া আর অনলাইনের প্রান্তরে। কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাব, স্মার্টফোনসহ নানা ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের পর্দা থেকে তাদের চোখ তো সরতেই চায় না। তারাও ক্রিকেট-ফুটবল খেলে তবে সেটি কম্পিউটার বা স্মার্টফোনে। তাদের ভাষ্যে সেগুলো হলো, ‘গেমস’।

গেম এর বাংলা খেলা হলেও, খেলার সঙ্গে এসে যায় ধূলা- খেলাধুলা। শব্দটি এসেছে ‘খেলা + ধূলা’ থেকে। মানে, খেলার সঙ্গে ধূলার যোগ রয়েছে। বলা যায়, অবিচ্ছেদ্য অংশ। অর্থাৎ, গায়ে ধূলা না লাগিয়ে যে খেলা, সেটি আসলে কোনো খেলাই নয়। আর ধূলা লাগাতে যেতে হবে মাঠে।

বিশ্বায়ন ও উন্মুক্ত প্রযুক্তির যুগে, এখন গ্রাম বলে কিছু নেই। বিল হালতির গ্রামগুলোতেও পৌঁছে গেছে স্মার্টফোন-ইন্টারনেট আর ক্যাবল নেটওয়ার্ক। তারপরও হালতি বিলের ছেলেরা যে মাঠ ছেড়ে দেয়ালবন্দি হয়নি, এটি দেখে প্রাণ ভরে গেলো।

যাইহোক, জেন ওয়াইয়ের ইন্টারনেটবন্দি হওয়াতে কী লাভ কী ক্ষতি, সে আলোচনা সমাজবিজ্ঞানীরাই করবেন। আমরা ফিরে যাই হালতির বুকে।

বিলে এখন শুকনো মৌসুম। তাই যা কিছু এখন সামনে পড়ছে, বর্ষায় সেসব চলে যায় পানির নিচে। শুধু উঁচু করে বানানো বাড়ি আর গাছগুলো বকের মতো গলা তুলে দাঁড়িয়ে থাকে। সাধারণত জুন-জুলাই থেকে অক্টোবর-নভেম্বর পর্যন্ত বিল স্বরূপে দেখা দেয়। বাকি ছয় মাস ঠিক তার উল্টো।



তখন ঘরবন্দি থাকে গ্রামের মানুষ। সেসময়ও নবীন প্রাণেরা অবশ্য ঘরে থাকে না। গৃহস্থালি নৌকা নিয়ে বেরিয়ে পড়ে অন্য খেলার নেশায়। কিন্তু ক্রিকেট-ফুটবল তো আর হয়ে ওঠে না। তাই বুঝি হালতি বিলের ছেলেরা মাস ছয় খেলতে না পারার আক্ষেপ মিটিয়ে নিচ্ছে শুকনো মৌসুমেই!

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৬
এসএস/এএ/এটি

** ভাসমান স্কুলে হাতেখড়ি, দ্বীপস্কুলে পড়াশোনা
** দত্তপাড়ার মিষ্টি পান ঠোঁট রাঙাচ্ছে সৌদিতে
** একফসলি জমিতেই ভাত-কাপড়
** লাল ইটের দ্বীপগ্রাম (ভিডিওসহ)
** চলনবিলের শুটকিতে নারীর হাতের জাদু
** ‘পাকিস্তানিরাও সালাম দিতে বাধ্য হতো’
** মহিষের পিঠে নাটোর!
** চাঁপাইয়ের কালাই রুটিতে বুঁদ নাটোর
** উষ্ণতম লালপুরে শীতে কাবু পশু-পাখিও!
** পানি নেই মিনি কক্সবাজারে!
** টিনের চালে বৃষ্টি নুপুর (অডিওসহ)
** চলনবিলের রোদচকচকে মাছ শিকার (ভিডিওসহ)
** ঘরে সিরিয়াল, বাজারে তুমুল আড্ডা
** বৃষ্টিতে কনকনে শীত, প্যান্ট-লুঙ্গি একসঙ্গে!
** ভরদুপুরে কাকভোর!
** ডুবো রাস্তায় চৌচির হালতি
** হঠাৎ বৃষ্টিতে শীতের দাপট
** ঝুড়ি পাতলেই টেংরা-পুঁটি (ভিডিওসহ)
** শহীদ সাগরে আজও রক্তের চোরা স্রোত
** ‘অলৌকিক’ কুয়া, বট ও নারিকেল গাছের গল্প
** মানবতার ভাববিশ্বে পরিভ্রমণ
** সুধীরের সন্দেশ-ছানার জিলাপির টানে
** নতুন বইয়ে নতুন উদ্যম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ