ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আগরতলা

চাষিরা চাইছেন ত্রিপুরায় লেবু প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র চালু হোক

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০২০
চাষিরা চাইছেন ত্রিপুরায় লেবু প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র চালু হোক ত্রিপুরার লেবু চাষি

আগরতলা(ত্রিপুরা): ত্রিপুরা লেবু চাষের জন্য বিখ্যাত। রাজ্যের প্রতিটি জেলাতেই লেবু চাষ হয়ে থাকে।

তবে সবচেয়ে বেশি লেবু চাষ হয় ধলাই জেলায়, দ্বিতীয় স্থানে খোয়াই জেলা। এই জেলার তেলিয়ামুড়া এলাকার বড়মুড়া পাহাড়ে প্রচুর লেবু বাগান রয়েছে। মূলত জনজাতি অংশের মানুষ বড়মুড়া পাহাড়ে লেবু চাষ করে থাকেন। এছাড়াও সিপাহীজলা জেলা, গোমতী জেলা এবং দক্ষিণ জেলাতেও লেবু চাষ হয়। এগুলোর মধ্যে গন্ধরাজ, এলাইচি, কাগজি, পাতিলেবু ইত্যাদি।

ত্রিপুরা সরকারের কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের অন্তর্গত উদ্যান বিভাগের অধীনে লেবু চাষ হয়ে থাকে। উদ্যান বিভাগের হিসাব অনুসারে ত্রিপুরা রাজ্যের মোট পাঁচ হাজার হেক্টরের বেশি পরিমাণ জমিতে লেবু চাষ হয় এবং এই বাগানগুলো থেকে বছরে প্রায় ২৩ হাজার মেট্রিক টন লেবু উৎপাদিত হয়।

বড়মুড়া পাহাড় এলাকার লেবু চাষিদের বক্তব্য, তাদের উৎপাদিত সব লেবু আগরতলা শহরে চলে আসে পাইকারদের মাধ্যমে। বড়মুড়া পাহাড়ের উপর দিয়ে ৮ নম্বর জাতীয় সড়ক ত্রিপুরা ও বর্হিঃরাজ্যকে সংযুক্ত করেছে, তাই ট্রাকে করে কিছু পরিমাণ লেবু ত্রিপুরার বাইরে রপ্তানি হয় বলেও জানান চাষিরা। মূলত গন্ধরাজ ও এলাইচিসহ সুগন্ধযুক্ত লেবু অন্য রাজ্যে রপ্তানি হয়।

বড়মুড়া পাহাড়ের পাদ দেশের জনজাতি অধ্যুষিত একটি জনপদের নাম সাধু চন্দ্রপাড়া। এই পাড়ার একজন বাসিন্দা হীরন্য রূপিণী (৫৩)।  

তিনি বাংলানিউজকে জানান, তার ছয় বিঘা লেবু বাগান রয়েছে। এছাড়াও তিনি ধানসহ সবজি চাষ করে থাকেন। লেবু বাগান থেকে সারা বছরই লেবু পাওয়া যায়। বর্ষার সময় অধিক পরিমাণ লেবু উৎপাদিত হয়, শীতকালে বর্ষার তুলনায় সামান্য কম পরিমাণে লেবু হলেও তখন অনেক বেশি দাম পাওয়া যায়। এই সময় সপ্তাহে চার থেকে পাঁচ দিন লেবু বাগান থেকে সংগ্রহ করেন। একেক দিন দুই থেকে তিন হাজার লেবু সংগ্রহ করা হয়। জাতীয় সড়কের পাশে লেবুগুলো নিয়ে আসেন তারা। আগরতলা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকাররা গাড়ি নিয়ে গিয়ে লেবু কিনে নেয়। জায়গাতে বসেই দুই থেকে আড়াই রুপি করে প্রতিটি লেবু তারা পাইকারের কাছে বিক্রি করেন। মূলত লেবুর আকার ও সুগন্ধির উপর দাম নির্ভর করে।  

হীরন্য'র মতো সন্ধ্যারানী রূপিণী, জয়মতী রূপিণীসহ অন্যান্যদেরও একই বক্তব্য। তবে সরকারের কাছে তাদের দাবি যদি রাজ্যে একটি লেবু প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র চালু হত তাহলে তারা আরও বেশি পরিমাণে এবং বেশি দামে লেবু বিক্রি করতে পারবেন। কারণ, ত্রিপুরা রাজ্যে বর্তমানে যে পরিমাণে লেবু উৎপাদিত হয় তা চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি। অনেক সময় তাই লেবু বাগানে নষ্ট হয়। সরকার যদি একটি কারখানা স্থাপন করত তাহলে চাষিদের লেবু নষ্ট হতো না।

চাষিদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে চলে এলেন দু’জন পাইকার। মানিক সাহা নামে এক পাইকার জানান, তিনি রাজধানীর বাধারঘাট থেকে এসেছেন। দু’তিন দিন পর পরই সাধু চন্দ্রপাড়া থেকে লেবু নিয়ে। এখান থেকে লেবু কেনার বিশেষত্ব কী? এই প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, বড়মুড়া পাহাড় এলাকার লেবুর চাহিদা খুব বেশি। তাছাড়া জন জাতীয় অংশের চাষিরাও খুব ভালো। আগাম ফোন করে লেবুর অর্ডার দিয়ে রাখলে তারা চাহিদা অনুসারে লেবু রেখে দেন। অন্য কোন পাইকার বেশি দাম দিয়ে লেবু কিনতে চাইলে তারা তা অন্যের কাছে বিক্রি করেন না। তাদের এই ব্যবহারের জন্য সবার কাছে তাদের সুনাম রয়েছে।

৮ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে বড়মুড়া পাহাড়ের সামান্য ভিতর গেলে দেখা যায় বিশাল বিশাল লেবু বাগান রয়েছে পাহাড়ের ঢালে। এই বাগানগুলোতে ছোট-বড় বিভিন্ন আকারের লেবু রয়েছে, অক্টোবর মাসেও গাছে নতুন করে ফুল এসেছে। এখানকার লেবু চাষিরা জানান, ফুলগুলো শীতের মৌসুমে বিক্রির উপযুক্ত লেবু হয়ে যাবে।

ত্রিপুরা রাজ্যে লেবু প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র চালু করার বিষয়ে ত্রিপুরা শিল্প উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান টিংকু রায় জানান, ত্রিপুরা রাজ্যে বিপুল পরিমাণ লেবু উৎপাদনের কথা বর্তমান সরকারও জানে। রাজ্য অথবা অন্য রাজ্যের কোন শিল্প বা ব্যবসায়ী গোষ্ঠী যদি লেবু কারখানা করতে চায় এখানে তবে শিল্প উন্নয়ন নিগম তাদেরকে নিয়ম অনুসারে সব ধরনের সুবিধা দেবে। সেই সঙ্গে তিনি আশা ব্যক্ত করেন- খুব দ্রুত রাজ্যে লেবু প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র চালু হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৩ ঘণ্টা, অক্টোবর, ২০২০।
এসসিএন/এমআইএইচ/জেআইএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।