ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আগরতলা

গাছ থেকে রাবার সংগ্রহ করতে না পারায় চিন্তিত চাষিরা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০২০
গাছ থেকে রাবার সংগ্রহ করতে না পারায় চিন্তিত চাষিরা লকডাউনের জেরে ত্রিপুরা রাজ্যের প্রাকৃতিক রাবার উৎপাদন মুখ থুবড়ে পড়েছে।

আগরতলা (ত্রিপুরা): লকডাউনের জেরে ত্রিপুরা রাজ্যের প্রাকৃতিক রাবার উৎপাদন মুখ থুবড়ে পড়েছে। ভরা মৌসুমে গাছ থেকে রাবার লেটেক্স সংগ্রহ না করতে পারায় চিন্তিত হয়ে পড়েছেন রাবার বাগানের মালিক এবং শ্রমিকরা।

ভারতবর্ষের মধ্যে প্রাকৃতিক রাবার উৎপাদনে কেরালা রাজ্য প্রথম স্থানে রয়েছে এবং দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ত্রিপুরা রাজ্য। ত্রিপুরা শিল্প উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান টিংকু রায়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যে বছরে প্রায় ৭৫ হাজার মেট্রিক টন প্রাকৃতিক রাবার উৎপাদিত হয়।

শীতকালে রাবার গাছের পাতা ঝরে যায়। এ সময় গাছ থেকে রাবার সংগ্রহ করা হয় না। বসন্তের শেষ লগ্নে বৃষ্টি হলে রাবার গাছে নতুন পাতা গজায়। এরপরে গাছ থেকে নতুন করে রাবার সংগ্রহ করার কাজ শুরু হয়।

বর্তমানে রাবার গাছ থেকে লেটেক্স সংগ্রহ করার ভরা মৌসুম। কিন্তু এবছর এখন পর্যন্ত তা সংগ্রহ করা শুরু হয়নি বলে বাংলানিউজকে জানান ত্রিপুরার পশ্চিম জেলার অন্তর্গত হরিণাখোলা এলাকার রাবার চাষের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকরা।

লকডাউনের জেরে এ বছর রাবার গাছের লেটেক্স সংগ্রহ করার কাজ শুরু হয়নি বলে জানান তারা। ফলে তারা যেমন বেকার অবস্থায় দিনযাপন করছেন, তেমনি আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন রাবার বাগানের মালিকরাও।

ভরা মৌসুমে গাছ থেকে রাবার লেটেক্স সংগ্রহ না করতে পারায় চিন্তিত হয়ে পড়েছেন রাবার বাগানের মালিক এবং শ্রমিকরা। রাবার বাগানের একজন শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ৩৫০ রুপি। কাজ নেই তাই তারা মজুরি পাচ্ছেন না ফলে বাধ্য হয়ে আশপাশের এলাকার লোকজনের কাছ থেকে ধার দেনা করে সংসার চালাতে হচ্ছে তাদের। এ অবস্থায় মালিকদের পক্ষ থেকে তাদের কোনো সহায়তা দেওয়া হচ্ছে কিনা, এ প্রশ্নের উত্তরে রাবার শ্রমিক সুমন দেবনাথ জানান, তারা কাজ করতে পারছেন না। তাদের উৎপাদিত রাবার বিক্রি করে মালিক নিজের সংসার চালান এবং মজুরি দেন। এখন শ্রমিকরা কাজ করতে পারছেন না তবে কী করে মালিক তাদের সহায়তা করবেন?

একই ধরনের বক্তব্য রাবার শিল্পের সঙ্গে যুক্ত অন্য শ্রমিকদেরও। কারণ তাদের মতে মালিক বাঁচলে পরেই শ্রমিকদের বাঁচা সম্ভব।

এ এলাকারই রাবার বাগানের মালিক লুকাস তালুকদার জানান, গতবছর এক কেজি রাবার সিট তিনি ১১০ থেকে ১২০ রুপি দামে বিক্রি করেছেন। লকডাউন শেষ হলে তারা বাগান থেকে রাবার সংগ্রহ শুরু করবেন তবে রাবারের মূল্য এ বছর গত বছরের মতো পাবেন কিনা তা নিয়ে তিনি যথেষ্ট চিন্তায় রয়েছেন। কারণ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কারণে রাবারের দাম কমার আশঙ্কা রয়েছে।

এ মৌসুমে রাবারের লেটেক্স সংগ্রহ করতে না পারায় যে ক্ষতি হচ্ছে তা নিয়ে মালিক ও শ্রমিকরা অত্যন্ত চিন্তিত। একটি রাবার গাছ প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ লেটেক্স সরবরাহ করতে সক্ষম। এছাড়া বছরের নির্দিষ্ট একটি সময় পর্যন্ত রাবার আহরণ করা সম্ভব। এখন যা সংগ্রহ করা যাচ্ছে না, চাইলেই পরবর্তী সময় অতিরিক্ত রাবার সংগ্রহ করা যাবে না। তাই এখন যে ক্ষতি হচ্ছে তা আর পূরণ করা সম্ভব নয়।

সব মিলিয়ে এক অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন রাবার চাষের সঙ্গে যুক্ত ত্রিপুরা রাজ্যের কয়েক হাজার পরিবার।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০২০
এসসিএন/এফএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।