ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আগরতলা

মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করেছি: শ্যামল চৌধুরী

সুদীপ চন্দ্র নাথ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩, ২০১৮
মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করেছি: শ্যামল চৌধুরী শ্যামল চৌধুরী। ছবি: সুদীপ নাথ

আগরতলা (ত্রিপুরা): শেখ মুজিবুর রহমানে ডাকে সাড়া দিয়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের হাজার হাজার যুবকের সঙ্গে ত্রিপুরার যুব সমাজের একটি বড় অংশ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। 

এদের অনেকে সরাসরি যুদ্ধ করেছেন আবার অনেকে বিভিন্নভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করেছেন। এছাড়া পাক হানাদার বাহিনীর অত্যাচারের শিকার হয়ে ত্রিপুরায় আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীদেরও সহায়তা করেন তারা।


 
তাদের একজন ত্রিপুরার আগরতলার বাসিন্দা শ্যামল চৌধুরী। মুক্তিযুদ্ধে তার কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশ সরকার ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর তাকে মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননায় ভূষিত করে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় শ্যামল চৌধুরীর বয়স আনুমানিক ৩৩ বছর। যুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন গোমতী জেলার উদয়পুরে। পরে তিনি আগরতলার প্যালেস কম্পাউন্ড এলাকায় নতুন বাড়ি করেছেন।

ছবি: সুদীপ নাথবাংলানিউজকে মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলতে গিয়ে তিনি বলেন, পাকিস্তান সেনাদের নির্যাতনে একদিকে যখন প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে ত্রিপুরার  গ্রাম-শহরে আশ্রয় নিচ্ছে। অপরদিকে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীন বাংলাদেশের ডাকে সাড়া দিতে ত্রিপুরার যুবকরা  দলে দলে মুক্তিযুদ্ধ শিবিরে যোগ দিয়েছে।  তখন আশ্রয় শিবিরে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষদের  জন্য ভারত সরকার রেশন বরাদ্দ দিতো। আর এ রেশন আশ্রয় শিবিরে ঠিকঠাক মতো পৌঁছচ্ছে কিনা তা দেখভাল করতাম আমি।  

ছবি: সুদীপ নাথসে সময় আমার বাড়িতে কিছুদিনের জন্য বাংলাদেশের কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, চট্টগ্রাম এলাকার মুক্তিযোদ্ধা সাত্তার চৌধুরীসহ আরও বেশ কয়েকজন বড় মাপের নেতারা এসেছিলেন। তাদের আমার বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করেছিলাম।  

শ্যামল চৌধুরী স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আরও বলেন, সে সময় মতিয়া চৌধুরী জনপ্রিয় নেত্রী ছিলেন। তিনি ত্রিপুরা রাজ্যের বিভিন্ন এলাকার শরণার্থী শিবিরে ঘুরে ঘুরে জনসভা করতেন ও যুবকদের অনুপ্রাণিত করতেন মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য। গাড়িতে করে তিনি কোনো শিবিরে পৌঁছালেই মুহূর্তে প্রচুর মানুষ জড়ো হতো এবং তার ভাষণ শুনে মানুষ আপ্লুত হয়ে যেতো।
 
ছবি: সুদীপ নাথতিনি জানান, মতিয়া চৌধুরীকে তিনি মতিয়া দি বলে সম্বোধন করেন। সে সময় তিনি প্রতিটি জনসভায় একটি কথাই বলতেন - ইনশাল্লাহ আপনারা ধৈর্য ধরুন, খুব দ্রুত স্বাধীন হবে বাংলাদেশ। আমরা বিশ্ববাসীর কাছে সাহায্য চেয়েছি। তারা সবাই আমাদের মুক্তির জন্য সহযোগিতা করছেন। তার এই বক্তব্য শুনে সভায় উপস্থিতরা করতালিতে ভরিয়ে তুলতেন।  

শ্যামল চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তান থেকে আসা নেতা-কর্মীদের সভা করার ব্যবস্থা করে দিতেন। এছাড়া তিনি ত্রিপুরার যুবকদের মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার ব্যবস্থাও করে দিতেন। পাশাপাশি ভারতের বিভিন্ন জায়গায় ট্রেনিং নেওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের নিরাপদে বিভিন্ন ক্যাম্পে পাঠানোর কাজেও যুক্ত ছিলেন তিনি।  

ত্রিপুরা সরকারের কাছে শ্যামল চৌধুরীসহ অনেকে দাবি তুলেছেন যেনো আগরতলার ধ্বলেশ্বর এলাকার সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারে বঙ্গবন্ধুর সরণে একটি জাদুঘর তৈরি করা হয়। কারণ এই কারাগার বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত। এই কারাগারে ১৯৬৩ সালের জানুয়ারি মাসে বঙ্গবন্ধু একদিন কাটিয়ে ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০১৮
এসসিএন/এপি 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।