দিন ৬
ইন্দ্রার পাড় (লালমনিরহাট)-কুড়িগ্রাম শহর-রাজারহাট সদর (কুড়িগ্রাম জেলা) (২৯.২১ কিমি)
প্রভাতের নতুন সূর্যটা নতুন নতুন জেলায় দেখার পরম সৌভাগ্য হচ্ছে এ ক'দিনে। কাল যেহেতু জেলা সদর থেকে কিছুটা দূরে মণ্ডল ভাইয়ের বাসায় ছিলাম, সেহেতু আরেকটু আগেভাগেই উঠে পড়লাম।
আরও পড়ুন>>পায়ে পায়ে ৬৪ জেলা (পঞ্চগড়-১)

আরও পড়ুন>>পায়ে পায়ে ৬৪ জেলা (ঠাকুরগাঁও-২)
‘বেলা-অবেলা’ নামের বাস সার্ভিসের বাসের এইদিকে ভালোইজনপ্রিয়তা। রাস্তাজুড়ে এদেরই রাজত্ব। রাস্তার ওপাশে বেশ কজন স্কুলগামীছাত্র আমার বেশ-ভূষা দেখে মন্তব্য করলো- কল্লাকাডনি নি কোনো? একটা গাছ কেন্দ্র করে চৌকোণা বৈঠকখানায় পথিকের প্রতি উত্তরবঙ্গের ভাষায় উদাত্ত আহ্বান - আইসো বাহে, বসি। কুড়িগ্রাম ৯ কিমি লেখা মাইলফলক পার হতেই শেষ রাজারহাট উপজেলা। সদর উপজেলার প্রথম বাজার কাঁঠালবাড়ীতে এক ফার্মেসিওয়ালার আন্তরিক ডাকে সাড়া না দিয়ে পারা গেলো না। আমার উদ্দেশ্য জানতে পেরে ভদ্রলোক এই নাদানকে একটি স্যালুট ঠুকে দিলেন। খালিসা কালোয়া ছাড়িয়ে পড়লো দাশেরহাট আরডিআরএস বাজার। এনজিওর নামে এই প্রথম কোনো বাজারের নামকরণ দেখলাম।

আরও পড়ুন>> পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (দিনাজপুর-৩)
ছোটখাট একটা ইন্টারভিউ শেষে রূপসী বাংলা হোটেলে জম্পেশ খাওয়া হলো হাঁস দিয়ে। ঘোল খাইয়ে খাওয়ার ইতি টানলেন বিশ্বজিৎ দা। এর মধ্যেই বিদ্যুৎ ভাই বললেন, ধরলা নদী না দেখলে কুড়িগ্রাম দেখা সম্পূর্ণ হবে না। সোহাগ ভাইয়ের বাইকে চেপে শহর ঘুরিয়ে এনে আবার নির্দিষ্ট জায়গায় নামিয়ে দেওয়ার প্রস্তাবটা বিদ্যুৎ ভাই দিতেই লুফে নিলাম। ধরলা নদী দেখে যথারীতি মন খারাপ। নদী যদি এরকম মরা হয়, কারই না দেখতে ভালো লাগবে? কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণে চিরশায়িত সৈয়দ শামসুল হকের কবর আর উত্তরবঙ্গ জাদুঘরে ঢুঁ মেরে আবার দু পায়ে চলা শুরু।
ত্রিমোহনী থেকে এবার বামে পথচলা। দু’দিকে বিস্তীর্ণ ধানক্ষেতের মাঝে মাঝে মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ইটভাটার চিমনি। একটু পর থেকেই মূল রাস্তার সঙ্গে সমান্তরালে সঙ্গী হলো রেললাইন। টগরই হাট থেকে দিনোবাজার হয়ে এসে পড়লাম এক খালের পাড়ে। তার পাড়েই ঠাঁটমারী বধ্যভূমি। যাদুর বাজার হয়ে রাজারহাট রেলস্টেশন পেরিয়ে মূল সদরে যখন পৌঁছেছি তখন সবে পৌনে পাঁচটা। ইমরান ভাইকে ফোন করতেই উনি এসে নিয়ে গেলেন পাশের চা দোকানে৷ বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে রাশেদুল ভাই উলিপুর থেকে ফিরতেই ওনার বাইকে চেপে বিএল স্কুললাগোয়া ওনাদের টিনের বাড়িতে। এখানেই আজকের রাত্রিযাপন।
আরও পড়ুন>> পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪)
ফ্রেশ হয়ে রাশেদুল ভাইয়ের সঙ্গে বেরুলাম আবার। কুড়িগ্রাম ফেরার পথে দেখা করে গেলেন রাকিব ভাই আর রাজু ভাই। খানিক পরে আমাকে জিজ্ঞেস করা হলো, তিস্তার হাওয়া খাবেন নাকি ধরলার হাওয়া? আমার ভোট তিস্তার হাওয়ার বাক্সে পড়তেই বাইক ছুটলো রাজারহাট থেকে ১০ কিমি দূরের বুড়ির বাজারে। আমি বসেছি সানি ভাইয়ের পেছনে। ভদ্রলোক দেখতে অবিকল গ্যাংস অব ওয়াসিপুর মুভির সুলতান চরিত্রে অভিনয় করা পংকজ ত্রিপাঠির মতো। গলায় ওরকমই একটা মাফলার। আর ওনার বাইকটাও দেখতে অবিকল মুভির সুলতান চরিত্রের বাইকের মতো। হাওয়া বিলাস করে রাশেদুল ভাইয়ের বাসায় যখন ঢুকছি ততক্ষণে সন্ধ্যার পর থেকে ৮-৯ কাপ চা-কফি পান করা শেষ।
চলবে...
আরও পড়ুন>> পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫)
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০২০
এএ