ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

বর্ষায় নয়নাভিরাম চলনবিল

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১২ ঘণ্টা, আগস্ট ৮, ২০১৯
বর্ষায় নয়নাভিরাম চলনবিল

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিলের নাম চলনবিল। ৩টি জেলাজুড়ে এর বিস্তৃতি। নাটোর, সিরাজগঞ্জ ও পাবনা জেলার অংশ জুড়ে যে জলভূমি, বর্ষা এবং বর্ষাপরবর্তী সময়ে দেখা যায় সেটাই বিখ্যাত চলনবিল।

শুকনো মৌসুমে এসব বিলে জল থাকে না। তখন চাষাবাদ চলে বিলের জমিনে।

তবে বর্ষায় কানায় কানায় পানিতে পূর্ণ হয়ে রূপের পসরা সাজিয়ে বসে। জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চলনবিল ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। ব্রহ্মপুত্র নদ যখন তার প্রবাহপথ পরিবর্তন করে বর্তমান যমুনায় রূপ নেয়, সে সময়েই চলনবিলের সৃষ্টি। গঠিত হওয়ার সময় চলনবিলের আয়তন ছিল প্রায় ১ হাজার ৮৮ বর্গ কিলোমিটার। বর্তমানে এর আয়তন অনেক কমে এসেছে। আসলে চলনবিল অনেকগুলো ছোট ছোট বিলের সমষ্টি। বর্ষায় এই বিলগুলোতে জলপ্রবাহ বেড়ে এরা একসঙ্গে বিশাল এক অখণ্ড বিলের রূপ নেয়। সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ, পাবনা জেলার চাটমোহর এবং নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলাজুড়ে এ বিলের বিস্তৃতি। বর্ষাকালে প্রকৃতির অপরূপ রূপে সাজে এ বিল। চারিদিকে শুধু পানি থৈ-থৈ করে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভ্রমণপিপাসুরা ভিড় করে চলনবিলে। এই ভরা বর্ষা মৌসুমেও সেটাই ঘটছে। এ মুহূর্তে দিগন্তপ্রসারি টলমল জলে এক নয়নমনোহর রূপে, এক অপরূপ সাজে সেজেছে চলনবিল।

মাঝে মাঝে বিদেশি পর্যটকদেরও দেখা মেলে এ-অঞ্চলে। তবে কারো পৌষ মাস, কারো সর্বনাশ। বর্ষাকালে ভ্রমণপিপাসুরা আনন্দ মেতে উঠলেও এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের পোহাতে হয় নানা বেদনা-দুর্ভোগ। বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, স্কুল, বাজার ডুবে যাওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হয় বানভাসিদের। তিশিখালি মাজারভ্রমণপিপাসুদের আনন্দ
চাকুরিজীবী, ব্যবসায়ী বা কর্মব্যস্ত মানুষদের একঘেঁয়মি কাটাতে প্রয়োজন আনন্দভ্রমণ। সারাদেশের বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রের মতোই একটি স্থান চলনবিল। সাপ্তাহিক ছুটির দিন অর্থাৎ শুক্রবার দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এ অঞ্চলে ছুটে আসেন হাজার হাজার মানুষ।

প্রতিদিনই ভিড় জমে এ বিলে। মোটর সাইকেল, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস এমনকি রিকশায় চড়ে হাজারো মানুষকে আসতে দেখা যায় চলনবিল এলাকায়। শুক্রবার বিকেল হলেই বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের কর্মকর্তারা, চাকুরিজীবী, ব্যবসায়ী, স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা চলে আসেন আনন্দ উপভোগের জন্য। শ্যালো নৌকা, বৈঠা-নৌকা, পালতোলা নৌকায় ঘুরতে দেখা যায় ভ্রমণপিপাসুদের।

বানভাসিদের বেদনা
বর্ষাকালে চারিদিকে পানি বৃদ্ধির কারণে বিলাঞ্চলের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, স্কুল, বাজার ডুবে যাওয়ায় দূর্ভোগ পোহাতে হয় চলনবিলের বানভাসিদের। তারা বাড়িতে থাকতে পারে না, রাস্তায় ঠিকমত চলাফেরা করতে পারে না। স্কুল-পড়ুয়া ছেলেমেয়েরা স্কুলে যেতে পারে না। বর্ষাকালে এ দুর্ভোগ কাটিয়ে আবার তারা ফিরে পায় আগের অবস্থা।

ক্ষতিকারক দিক
বর্ষাকালে পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে বিষাক্ত সাপের উপদ্রব বেড়ে যায়। ফলে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে পরে। গ্রামে বাড়িগুলোর পায়খানা ডুবে গেলে ঝুলন্ত পায়খানা স্থাপনের কারণে পানি দূষিত হয়ে পড়ে। এ পানি ব্যবহারের ফলে বিভিন্ন ধরনের রোগ-জীবাণুর সংক্রমণ ঘটে। বর্ষাকালে পাট জাগ দেয়ার কারণেও পানি দুষিত হয়। নৌকায় অধিক বোঝা বহণের কারণে নৌকা ডুবে ঘটতে পারে বিভিন্ন দুর্ঘটনা। এদিকে সবাইকে সজাগ হতে হবে। নৌকার ছাদে উঠে লাফালাফি বা সেলফি তুলতে গেলে বিদ্যুতের তারে জড়িয়েও ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। এজন্য আমাদের আনন্দভ্রমণ যেন বেদনায় রূপ না নেয় সেদিকে সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

আসবেন যেভাবে
নাটোর বা বগুড়া থেকে সড়কপথে সিংড়া আসতে হবে। সিংড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে অটোরিক্সা বা ভ্যান যোগে পূর্ব দিকে প্রায় তিন কিলোমিটার পথ গেলে দশ টাকা ভাড়ার বিনিময়ে পেয়ে যাবেন আপনার কাঙ্ক্ষিত ভ্রমণের স্থান চলনবিল। সেখান থেকে শ্যালো নৌকা, বৈঠা-নৌকা, পালতোলা নৌকায় ঘুরতে পারেন আপনার পছন্দের চলনবিলে। সিংড়া শহরে পাবেন খাওয়ার জন্য হোটেল ও রেস্তোরাঁ। তবে সিংড়ায় কোনো আবাসিক হোটেল না থাকায় নাটোর বা বগুড়ায় পাবেন রাত্রি যাপনের জন্য আবাসিক হোটেল। চলনবিল থেকে সূর্য ডোবার দৃশ্যতিশিখালি মাজার
চলনবিলের ঐতিহ্যবাহী ঘাঁসি দেওয়ান পীরের মাজার রয়েছে এখানকার দর্শনীয় স্থানের তালিকায়। সেখানে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে খয়রাত বা মানসা করতে আসেন লোকজন। সেখানে নামাজের জন্য রয়েছে একটি মসজিদও।

প্রয়োজনীয় তথ্য
চলনবিলে বেড়ানোর জন্য স্থানীয় নৌকা পাওয়া যাবে ভাড়ায়। সারাদিনের জন্য ভালো মানের একটি নৌকার ভাড়া পড়বে ১ হাজার টাকা থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত।

চলনবিল জাদুঘর
এই সুযোগে দেখে নিতে পারেন চলনবিল জাদুঘরটিও। গুরুদাসপুর উপজেলার খুবজিপুর গ্রামে এ জাদুঘর। স্থানীয় শিক্ষক আব্দুল হামিদ ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় নিজ বাড়িতে ১৯৭৮ সালে গড়ে তুলেছেন ব্যতিক্রমী এ সংগ্রহশালা। চলনবিলে প্রাপ্ত নানান নিদর্শন, মাছ ধরার বিভিন্ন সরঞ্জাম ছাড়াও এখানে আছে অনেক দুর্লভ সংগ্রহ। নাটোর থেকে বাসে গুরুদাসপুর উপজেলায় এসে সেখান থেকে নদী পার হয়ে রিকশায় আসা যাবে খুবজিপুর গ্রামের এই জাদুঘরে। শনিবার জাদুঘর বন্ধ থাকে।

সতর্কতা
যারা সাঁতার জানেন না, তারা চলনবিলে ভ্রমণে গেলে অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট সঙ্গে নেবেন। নৌকায় ভ্রমণকালে হৈ চৈ, লাফালাফি করবেন না। এতে যে কোনো সময় দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন। ঝড়ো বাতাস উঠলে চলনবিলের পানিতে বিশাল বিশাল ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়।

আবু জাফর সিদ্দিকী

লেখক: আবু জাফর সিদ্দিকী





বাংলাদেশ সময়: ১৭০১ ঘণ্টা, আগস্ট ০৮, ২০১৯
জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।