ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

নীলে হয়েছি বিলীন

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১, ২০১৯
নীলে হয়েছি বিলীন কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে দর্শণার্থীরা, ছবি: ডিএইচ বাদল

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত থেকে: সবাই এগোচ্ছে যে যার মতো। কানের কাছে মন্ত্র পড়ার মতো গুনগুন করছে অনেকেই। তাদের কথা কেউ শুনছে, কেউ শুনছে না। তবে তাতে কারো মাথাব্যথা নেই। সবাই দ্রুতপায়ে হাঁটছে তাদের স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে। সঙ্গে আছে নির্মল হাসি। আর একটু এগিয়ে গেলেই সুখের খোরাক। বিশাল সমুদ্র আর দিগন্ত জোড়া আকাশ ছোট একটা বিন্দু হয়ে আটকে যাবে চোখের ভেতর।

কথা বলছি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত থেকে। একটু তাকালেই অনাবিল উচ্ছ্বাসে ভরে উঠে তৃষ্ণার্ত বুক।

ঢেউ ওঠে, জল ছোটে। তার মুখে ফেনা লোটে। ছুটে যায়, উঠে যায় পাহাড় সমান আকাশের মুখে। সে দৃশ্যে জাগে বিস্ময়। মুগ্ধ হয় শত সহস্র হৃদয়। আসমানী শাড়ির আকাশী নীল রঙে সেসব হৃদয় খুঁজে নেয় সুললিত সুখ। এমনটাই অভিব্যক্তি সৈকতে আসা দর্শণার্থীদের। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে দর্শণার্থীরা, ছবি: ডিএইচ বাদলশুক্রবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিশ্বের দীর্ঘতম এ সমুদ্র সৈকতে কথা হয় বেশ কয়েকজন দর্শণার্থীদের সঙ্গে। সাগর পাড়ে এসে অনাবিল এক উচ্ছ্বাসে জেগে ওঠা প্রাণ নিয়ে তারা সবাই আনন্দিত। অফুরন্ত নীলের সংস্পর্শে নিরাভিমান এক মুক্ত আনন্দের গরিমা যেন পূর্ণ করেছে তাদের।

সমুদ্র ভ্রমণের আনন্দ প্রসঙ্গে কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নীলিমা ইব্রাহিম বাংলানিউজকে বলেন, এটা আমার প্রথম সমুদ্র ভ্রমণ, আজ সকালেই এসে পৌঁছেছি। অনেক গল্প শুনলেও কখনও ভাবিনি সমুদ্র এতো দ্রুত মানুষকে আপন করে নিতে পারে। আর মনের সব ভাবনার দুয়ার বন্ধ করে দিয়ে সেখানে শুধু তাকে উদযাপনের জন্য উচ্ছ্বাস সৃষ্টি করে দেয়। বড় বড় ঢেউগুলো শুধু তীরে নয়, পানিতে নামার পর সেই ঢেউ সৈকতের সঙ্গে সঙ্গে দোল দিয়ে যায় মনের ভেতরও।

শুধু ঢেউ নয়, পানিতে নেমে সাঁতার কাটা, ডুব দেওয়া, লবণাক্ত পানি মুখ থেকে মুছে ফেলা বা স্বচ্ছ জলে ঝিনুক কুড়ানোর মতো অনেককে দেখা যায় সৈকতের বালিতে রোদ পোহাতেও। কেউ আবার ভালোবেসে তীরে লিখে যায় প্রিয় মানুষটির নাম। স্মৃতি ধরে রাখতে তুলে নেয় ছবি। কেউ কেউ ভাবেন, আরও আগে আসিনি কেন?কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে দর্শণার্থীরা, ছবি: ডিএইচ বাদলকথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবিদ আজমের সঙ্গে। ইতিহাস বিভাগের কয়েকজন বন্ধুরা মিলে ঘুরতে এসেছেন তারা। কথা হলে আবিদ বলেন, আমার বন্ধুরা এর আগেও এসেছে, তবে আমি প্রথম। এখন মনে হচ্ছে আমার আরো আগে এখানে আসা উচিত ছিল। যদিও সরকার পর্যটনকে এখন যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে, তবুও আরো বেশি প্রচার জরুরি বলেই আমি মনে করি।

সৈকতে মনোরম ছাতার নিচে শুয়ে-বসে পানিতে শিশুদের খেলা দেখছিলেন নীলফামারীর সরকারি কর্মকর্তা আজিজুল হক। পানিতে খুব বেশি দূরে যায় না বাচ্চারা। ঢেউ দেখলেই ছুটে চলে আসে বালুতটে। তাদের পাশেই টিউব নিয়ে পানিতে জলকেলি করছিলেন একই জেলার কয়েকজন তরুণ বন্ধু ইমরান, আরাফাত ও রতন।

কথা হলে আজিজুল হক বলেন, এর আগেও কয়েকবার আমি এখানে এসেছি। সমুদ্র এখন আগের তুলনায় বেশ পরিচ্ছন্ন। সতর্কতার দিক দিয়েও আছে টুরিস্ট পুলিশ ও অন্যান্য পরিচালক। শিশুরা স্পিডবোট, ওয়াটার বাইক ও ঘোড়ায় চড়লো। তারাও বেশ আনন্দিত। সবমিলিয়ে বেশ ভালো লাগছে, ভালো সময় কাটছে। পরিবার নিয়ে ছুটির দিনগুলো কাটানোর জন্য অনেক ভালো একটি জায়গা এটি।

সৈকত থেকে তাকালে যতদূর চোখ যায়, শুধু নীল আর নীল। সমুদ্রের নীলের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়েছে দিগন্তস্পর্শী আকাশ। সে নীলে বিলীন হয় ভ্রমণপিয়াসু মানুষগুলো। ঢেউয়ে ঢেউয়ে স্নান করে শরীরে মেখে নেয় এক পশরা নীল সমুদ্রের ঘ্রাণ। সে ঘ্রাণে তৃষ্ণা জাগে, দিন শেষে ঘরে ফেরা মানুষগুলোকে তা যেন আবারও টেনে আনে নীল জলে বিলীন হতে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০১৯
এইচএমএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।