ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

সান্দাকফু ট্রেক-২

পিচঢালা রাস্তার ওপারেই নেপাল

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩১৮ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১৭
পিচঢালা রাস্তার ওপারেই নেপাল পিচঢালা রাস্তার ওপারেই নেপাল। ছবি: বাংলানিউজ

উত্তরবঙ্গ মানেই অরণ্য পাহাড় নিয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘার পায়ের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা সাক্ষাৎ এক স্বর্গ। বিশাল হিমালয়ের বৈচিত্র্যময় ভূ-বিন্যাসের শুরুও এখান থেকে। কত না নয়ন জুড়ানো সব জায়গা।

সেই ব্রিটিশ শাসনামলে পত্তন হয়েছিলো দার্জিলিংয়ের। তাকে কেন্দ্র করে আজ তৈরি হয়েছে এমন এক পর্যটন মানচিত্র যার ঠিক উপরে পৃথিবীর তৃতীয় সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা ও তার সৈন্য সামন্তরা।

আমাদের মূল লক্ষ্য কাঞ্চনজঙ্ঘার পায়ের কাছাকাছি পৌঁছানো। সীমান্তের ভূগোল আর জটিল রাজনীতির মারপ্যাঁচে হয়তো একেবারে কাছাকাছি পৌঁছাতে পারবো না, কিন্তু যেখানে যাচ্ছি সেখান থেকে ভাগ্য ভালো থাকলে কাঞ্চনজঙ্ঘা তার পুরো রূপ নিয়ে হাজির হতে পারে। অবশ্য উদ্দেশ্য আরেকটি আছে। হিমালয়ের উচ্চতায় শরীর মন কি ধরনের আচরণ করে তা দেখাও এ যাত্রার অন্যতম উদ্দেশ্য।

শুকনা ক্যান্টনমেন্ট পার হয়ে পাহাড় শুরু হওয়ার আগ দিয়েই দুধিয়া। ড্রাইভার বললেন তিনি ক্ষুধার্ত। ক্ষুধা আমাদেরও বেশ চাগিয়ে উঠলো। সামনে ধাবার দিদির কাছে জিজ্ঞেস করতে জানা গেলো থালি পাওয়া যাবে। থালির কথা শুনে শুনে খাওয়ার ইচ্ছা আমার অনেক দিনের। দিয়ে দিলাম ননভেজ থালির অর্ডার। কেউ চাওমিন কেউ মোমো। মোমো আমার প্রথম খাওয়া। পুদিনা পাতার চাটনিতে খারাপ লাগলো না। এর মধ্যে চলে এলো আমার থালি। কাঁসার প্লেটের মধ্যে খানে চুড়ো করে রাখা ভাত চার পাশে সবজি, চিকেন আর ডাল। প্রথম গ্রাস থেকেই স্বাদ মুখে লেগে গেলো। সেই থেকে আমি থালির ভক্ত। ট্যুর শেষে ফেরার পথেও শিলিগুড়িতে চলেছে থালির খোঁজ। পিচঢালা রাস্তার ওপারেই নেপাল।  ছবি: বাংলানিউজ
শেষ বিকেলে আমাদের জিপ পাহাড়ে ওঠা শুরু করলো। আমার এর আগে অতিক্রম করা সর্বোচ্চ উচ্চতা ছিলো পঁয়ত্রিশশো ফুট। অনেকক্ষণ আগে সেই উচ্চতা পেছনে ফেলে গাড়ি উঠছে আরও উপরে। মেঘ এসে ভিজিয়ে দিলো গাড়ির গ্লাস। আমার সেদিকে মন নেই। মাউন্টেন সিকনেস সম্পর্কে এতো কথা শুনেছি যে প্রতি মুহূর্তেই মনে হচ্ছিলো এই শুরু হয় বমি কিংবা মাথা ব্যাথা। কিন্তু অনেকক্ষণেও যখন কিছুই হলো না তখন গ্লাসের বাইরে মন দিলাম।

এ কোথা দিয়ে চলছি আমরা। মেঘরাজ্যের ভেতরে তখন চলছে যাদুবাস্তবতার খেলা। বড়জোর বিশ পঁচিশ ফুট পর্যন্ত সামনে দেখা যাচ্ছে। এক চিলতে রাস্তা তার ভীষণ সব বাঁক। চারপাশে চায়ের বাগান ফেলে আমরা কখনও ঢুকে যাচ্ছি পাইনের বনে, কখনো পাহাড়ি জনবসতির মাঝখান নিয়ে গেছে রাস্তা। পিচঢালা রাস্তার ওপারেই নেপাল।  ছবি: বাংলানিউজপাহাড়ে সন্ধ্যা নামলো বলে। সারাদিনের পথ ক্লান্তিতে একটু ঝিমুনো চললো ক্ষানিকক্ষণ। অবশ্য তা ভাঙিয়ে দিলো সমৃদ্ধ পাহাড়ি জনপদ মিরিকের কোলাহল। মিরিক লেকের কথা অনেক আগেই শুনেছি। স্থানীয় আর পর্যটকে জমজমাট মিরিক বাজার। চলছে দেদারসে বিকিকিনি। লাস্যময়ী নেপালি তরুণী মোটরবাইকে প্রেমিকের পিছে চুল খুলে দিয়ে চলেছে ছুটে। আমাদের কিন্তু এতে ভুললে চলবে না। পিপ চলছে তার মতোই। আস্তে আস্তে আঁধার নামছে পাহাড়ে। সুকিয়া পোকরিকে পেছনে ফেলে গাড়ি ছুটলো। ঠান্ডা চেপে ধরেছে। এতক্ষণে ফুলহাতা টি শার্টেই কাজ চালাচ্ছিলাম। এবার উইন্ড প্রুভটা বের করতে হলো। সন্ধ্যার মাথায় আমরা থামলাম সীমানা বাজার। আসলেই সীমানা। ভারতীয় পিচঢালা রাস্তার ওপারেই নেপালের সীমানা। গরম গরম চপ ভাজা আর কফি খেয়ে চাঙ্গা হয়ে নিলাম। আকাশ এর মধ্যে কিছুটা পরিষ্কার হয়েছে। যেখানে দাঁড়িয়ে আছি তার নীচে রাশি রাশি মেঘ জমাট বেঁধে আছে। সান্দাকফু কি এরও উপরে??পিচঢালা রাস্তার ওপারেই নেপাল।  ছবি: বাংলানিউজ
এবার গাড়ি নিচের দিকে নামছে। নিচে পাহাড়ের বুকে হাজারো আলোর রোশনাই জ্বলে আছে। ওটাই মানেভঞ্জন। আমাদের আজকের গন্তব্য। পাহাড়ের নিয়ম সাড়ে সাতটা আটটার মধ্যে বাতি নিভিয়ে ঘুমিয়ে পড়া। তারা নিয়মের ব্যতিক্রম করেনি। আমরাই বরং নিয়ম ভেঙেছি। আরও আগে পৌঁছানো উচিত ছিলো। যাইহোক তড়িঘড়ি করে হোটেল খোঁজা হলো। এক রুমে সাতটি বিছানা, ভাড়া ২০০ রুপি করে।  

** ভালোয় ভালোয় পার বাংলাবান্ধা সীমান্ত

বাংলাদেশ সময়: ০৯০৯ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১৭
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।