ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

পাহাড়-মায়ায় ঘেরা সৌন্দর্যের সাজেক

সুমন বড়ুয়া, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২০৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৬
পাহাড়-মায়ায় ঘেরা সৌন্দর্যের সাজেক ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বেশ কিছুদিন থেকেই পত্রপত্রিকায় লেখা হচ্ছে সাজেকের আকর্ষণীয় রূপ নিয়ে। বর্ণনা পড়ে, ছবি দেখে আগ্রহ ক্রমে বাড়তে থাকলো সে অপার সৌন্দর্য দেখার।

তাই ঠিক হলো এবার আমাদের যাত্রা সাজেক উপত্যকা।

একসময় সাজেককে বলা হতো দুর্গম সাজেক। সেনাবাহিনীর হাতে পড়ে এখন আর জায়গাটি দুর্গম নেই। বেড়ানোর জন্য সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা ফিটফাট পর্যটনস্থান। সাজেক যেতে চাচ্ছিলাম জায়গাটার দুর্গমতা নিয়ে ছোটবেলা থেকে আগ্রহ ছিল বলে। আমাদের উদ্দেশ্য সাজেকের পথটা উপভোগ করা এবং আদিবাসীদের জীবনযাত্রা দেখা। ।

বিলাস বহুল ‘সাজেক রির্সোট’ ও ‘রুন্ময় রির্সোট’ এড়িয়ে থাকার পরিকল্পনা করি স্থানীয় লুসাই পরিবারগুলোর মাচাং ঘরে।

সকাল দশটায় খাগড়াছড়ি পৌঁছে দেখি আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে অনেক পুরনো একটা জিপ গাড়িড়ী। পাইলট মানে চালকের বয়স গাড়ির চেয়ে কম হবে না। মনে স্বস্তি ড্রাইভারের অভিজ্ঞতার কমতি হবে না পাহাড়ি পথে।

দুই সপ্তাহের টানা বৃষ্টির পর ঝকঝকে সকাল জানান দিচ্ছে ভ্রমণ মনমতো না হয়ে যায় না। ক্রমশ আমরা অতিক্রম করতে থাকি দিঘীনালা, বাঘাইহাট, মাচালং বাজার, খাগড়াছড়ির সীমানা ছাড়িয়ে রাঙামাটির সীমানা। পথে পথে আদিবাসীদের সরল জীবনযাপন মুগ্ধ করে। মাঝে মধ্যে গাড়ি থামিয়ে ছবি তুলি।

এই পথটার বিশেষত্ব  হচ্ছে পথের বাঁকে বাঁকে পাহাড়ি শিশুদের হাত নাড়ানো। আমরা তাদের জন্য অনেক চকলেট নিয়ে গিয়েছিলাম। শেষের দিকের পাঁচ-ছয় কিলোমিটার ভয়াবহ উচ্চতার রাস্তা পার হতে গিয়ে দেখলাম বন্ধু শহীদের চোখেমুখে ভীতি। বললাম এ হলো ভয়ংকর সুন্দর, একে উপভোগ করতে জানলে ভয় পরিণত হবে বিস্ময়ে।

বিকেল ৩টায় সাজেকের রুইলুই পাড়ায় পৌঁছাই। লুসাই আদিবাসীদের এ পাড়াটি সেনাবাহিনী পরিপাটি করে সাজিয়ে নিয়েছে। রুইলুই পাড়া, কংলাক পাড়া, পাংখোয়াই পাড়া, এগুলো মোটামুটি কাছাকাছি। রুইলুই পাড়াকে আমরা নাম দিয়েছি পাড়াদের রাজধানী।

আমাদের শুধু রাজধানী দেখলে চলবে না। আমরা আরও ভিতরে যেতে চাই। খুমা লুসাইয়ের বাড়িতে লাগেজ রেখে বেরিয়ে পড়ি এ অঞ্চলের সর্বশেষ  জনবসতি কংলাক পাড়ার উদ্দেশ্যে। কিছুদূর এগিয়ে যাওয়ার পর কেউ একজন বললো ভ্রমণের টাকা-পয়সা সমেত ব্যাগটাই হারিয়ে গেছে। আবার দু’জন ছুটলো পিছনে রুইলুই পাড়ায়। খবর এলো ব্যাগ পাওয়া গেছে হেলিপ্যাডের কাছে। কেউ ছুঁয়েও দেখেনি। বুঝলাম এটি নিখাদ ভদ্র পাড়া।

অনেকক্ষণ হাঁটতে হাঁটতে সবচেয়ে উঁচু পাহাড় অতিক্রম করলাম। পেয়ে গেলাম কংলাক পাড়া। এটিও একটি লুসাই জনবসতি। পাড়াটি অনেক পরিছন্ন। একটি প্রাইমারি স্কুল ও একটি গির্জা নিয়ে কিছু পরিবার বাস করে। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো তারা মিজোরামে যায় অনেক কাজে। আরেকটু এগিয়ে গেলে কমলা বাগান।

পরিবারগুলোর সঙ্গে সন্ধ্যা নাগাদ কাটালাম। এবার পাহাড় থেকে নামার পালা। মনে হলো কি নিঃসঙ্গ বিচ্ছিন্নতার মধ্যে এদের বসবাস। দিনটি ছিল অষ্টমী। আকাশে তখনও চাঁদ ওঠেনি। হালকা অন্ধকারে আমরা পাহাড়ি পথ অতিক্রম করছিলাম দ্রুত পায়ে হেঁটে, চুপচাপ।
রাতে খুমার মাচা থেকে বের হয়ে নির্জন স্থানে বসলাম। এখানকার আবহাওয়া অনেক শীতল। মাঝে মধ্যে এক পশলা মেঘ এসে ছুঁয়ে দিয়ে যাচ্ছে আমাদের। ছন্দ আর গিয়াস গান ধরলো। চারদিকের ভীষণরকম নিস্তব্ধতায় খালি গলার গান আমাদের সম্মোহিত করে রাখে।

অনেক দূরের আবছায়া রহস্যময়  পাহাড়গুলো থেকে ধেয়ে আসা বিবাগী বাতাস সমস্ত ক্লান্তি চুষে নিচ্ছে ক্রমশ। এরকম প্রকৃতির মাঝে ডুবে যেতে চাই বলেই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়ি বারবার। অনেক রাত পর্যন্ত বসেছিলাম সাজেক উপত্যকায়, আদিগন্ত পাহাড়ের সমুদ্রে।

কীভাবে যাবেন
সাজেক রাঙামাটি জেলায় হলেও যোগাযোগের সুবিধা খাগড়াছড়ি দিয়ে। ঢাকা থেকে বাসে সরাসরি খাগড়াছড়ির দীঘিনালা বাজার। সেখান থেকে চান্দের গাড়িতে সাজেক ভ্যালি। বাস ভাড়া ৫৮০ টাকা। চান্দের গাড়ি রিজার্ভ ৪,০০০ টাকা। পরের দিন ফেরার জন্যে গাড়ি রেখে দিলে সেক্ষেত্রে ৬,৫০০ থেকে ৭,০০০ টাকা।

কোথায় থাকবেন
কম টাকায় বিশাল বহর নিয়ে থাকতে চাইলে সাজেক ক্লাব হাউস, ভাড়া মাথা পিছু ২০০ টাকা। তবে পুরো হাউস রিজার্ভ করতে চাইলে অল্প কিছু টাকা বেশি গুণে থাকা যাবে আয়েশি ঢঙে। এছাড়া রয়েছে সেনাবাহিনী পরিচালিত সাজেক রিসোর্ট ও বিজিপি পরিচালিত সাজেকের আইকন রুন্ময় কটেজ। অগ্রীম বুকিং ও মৌসুম অনুযায়ী রুম ভাড়া জানার জন্য নেটে সার্চ দিলেই যাবতীয় তথ্য পাওয়া যাবে।

কী খাবেন
যদি সাজেকে দু-তিনদিন থাকার ইচ্ছে থাকে তাহলে খাগড়াছড়ি দিঘীনালা হতে বাজার সদাই করে নেয়া ভাল এছাড়া  বেশ কিছু রেষ্টুরেন্টও রয়েছে।
টিপস
অতিরঞ্চিত কিছু করা হতে বিরত থাকুন।
দলে  কম সংখ্যক সদস্য রাখুন।
আদিবাসিদের সঙ্গে যথা সম্ভব মার্জিত আচরণ করুন।
প্রকৃতি ও পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কোন বর্জ্য যেখানে সেখানে ফেলবেন না।

মূল আকর্ষণ
দীঘিনালা হতে সাজেক যাওয়ার পথের সৌন্দর্য দেখতে চাইলে মাঝে মধ্যেই গাড়ি ব্রেক করবেন। এমনও হতে পারে সাজেক পর্যটন কেন্দ্রের চাইতে সাজেক যাওয়ার পথের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য আপনাকে বেশি মুগ্ধ করবে।

প্রিয় পাঠক, ভ্রমণ যাদের নেশা, বেড়ানোর সুযোগ এলে যারা উড়িয়ে দেন সব বাধা, কাজের অংশ হিসেবে যারা ভ্রমণ করেন কিংবা যাদের কালেভদ্রে সুযোগ হয় ভ্রমণের তারা সবাই হতে পারেন ট্রাভেলার্স নোটবুক’র লেখক। আপনার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারেন বাংলানিউজের পাঠকদের সঙ্গে।

আর একটা কথা লেখার সঙ্গে ছবি পাঠাতে ভুলবেনই না, সেই সঙ্গে বাতলে দিন সেখানে যাওয়ার পথঘাটের বিবরণও।  

প্রিয় পাঠক, আপনার ভ্রমণ আনন্দ বিশ্বজুড়ে বাঙালির কাছে ছড়িয়ে দিতে আমাদের ই-মেইল করুন-



বাংলাদেশ সময়: ০১৫১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৫
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।