ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বাণিজ্যমেলা

শেষ পর্যায়েও জমে ওঠেনি বাণিজ্য মেলা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৪
শেষ পর্যায়েও জমে ওঠেনি বাণিজ্য মেলা

মেলা প্রাঙ্গণ থেকে: একে একে ২৬ দিন ফুরিয়েছে ১৯তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার। অার কয়েক দিন পরেই শেষ হয়ে যাবে এ বছরের মেলা।

শুরুর মতো শেষ সময়েও কাটেনি মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীদের খরা।
 
মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীদের এমন করুণ উপস্থিতিতে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন অংশগ্রহণকারী অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান। অথচ দিন গড়ালে ক্রেতা-দর্শনার্থী বাড়বে প্রথম দিকে এমন আশাই ছিলো তাদের।
 
অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, রাজনৈতিক অস্থিরতার পাশাপাশি আয়োজক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) নজরদারির অভাবে মেলার এমন দশা।
 
তাদের দাবি, নানা অরাজকতা ও অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে চলছে বাণিজ্য মেলা। ক্রেতা-দর্শনার্থীর অভাব থাকলেও চোর, হকার আর পকেট মারের অভাব নেই মেলাতে। এতে মেলায় আসা দর্শনার্থীরা প্রতিনিয়ত পড়ছেন নানা বিড়ম্বনায়। অথচ এসব সমস্যার বিষয়ে বার বার ইপিবির কাছে আবেদন করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি।
 
অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, মেলায় ছুটির দিনগুলো ছাড়া তেমন একটা ক্রেতা-দর্শনার্থী আসছে না। আর সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত আসা দর্শনার্থীদের সংখ্যা হাতে গুণেই হিসাব করা যাবে।
 
এদিকে মেলার ২৬তম দিন বুধবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত মেলা প্রাঙ্গণ ও স্টলগুলোতে তেমন কোনো ভিড় দেখা যায়নি। কোনো কোনো স্টলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ক্রেতা শূন্য দেখা গেছে।
 
মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায় এদিন দুপুর পর্যন্ত মেলায় আসা দর্শনার্থীদের বড় অংশই স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রী। কেউ স্কুল ছুটির পর আবার কেউ স্কুল শুরু আগে মেলায় এসেছে শুধুই সময় কাটাতে।
 
কোকোলা ফুডের প্যাভিলিয়ন ইনচার্জ আব্দুল মমিন বলেন, প্রথম দিকে মেলায় ক্রেতা দর্শনার্থীদের মোটামুটি সাড়া পাওয়া গিয়েছিলো। কিন্তু দিন যত পার হয়েছে ক্রেতা-দর্শনার্থী না বেড়ে উল্টো কমেছে।
 
তিনি বলেন, একদিকে দর্শনার্থী খরা অন্যদিকে মেলায় হকারে ভরে গেছে। ফলে বিক্রয় নেই বললেই চলে। এতে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে। হকারদের বিষয়ে ইপিবিকে জানিয়েও কোনো ফল পাওয়া যায়নি। উল্টো সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেড়েছে হকারের সংখ্যা।
 
ফুল বিক্রয়ের স্টল বোরহান ট্রেডার্সের মালিক বোরহান বলেন, মেলায় হকার প্রবেশের কোনো সুযোগ নেই। অথচ মেলা প্রাঙ্গণের এমন কোনো স্থান নেই যেখানে হকার দেখা যাবে না।
 
তিনি বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এবার খুব একটা ক্রেতা-দর্শনার্থী আসছে না। ফলে ক্রেতাও কম। অন্যদিকে স্টলের চাইতে হকারদের কাছ থেকে কম দামে পণ্য পাচ্ছেন ক্রেতারা। ফলে বিক্রয় একেবারেই হচ্ছে না বললেই চলে।
 
হোমটেক্সের হিসাবরক্ষক রূপু বলেন, এবারের মেলায় দর্শনার্থীর সংখ্যা অনেক কম। মূলত রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণেই এমন অবস্থা বলে মনে করছেন রূপু।
 
এদিকে দর্শনার্থীরা বলছেন মেলায় চোর, পকেট মার ও ছিন্নমূলদের কারণে নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। ফলে মেলার প্রতি দর্শনার্থীদের আকর্ষণ কমছে।
 
ধানমন্ডি থেকে আসা আসলাম শেখ বলেন, আমার এক বন্ধু পরিবার নিয়ে গত শুক্রবার মেলায় এসেছিলেন। মেলা থেকে বন্ধুর মানিব্যাগ এবং মেয়ের পার্স ও মোবাইল নিয়ে গেছে চোরেরা। বিষয়টি নিয়ে দায়িত্বরত পুলিশের কাছে অভিযোগ করেই কোনো ফল হয়নি। বন্ধুর কাছে এমন গল্প শুনেও বাচ্চাদের আবদার পূরণ করতে মেলায় এসেছি। তবে যাতে কোনো বিড়ম্বনায় না পড়ি সে জন্য সকালে এসেছি। ভিড় হওয়ার আগেই চলে যাবো।
 
দল বেঁধে মেলায় আসা স্কুল ছাত্রী আফরোজা বলেন, স্কুল ছুটির পর বন্ধুরা মিলে মেলায় ঘুরতে এসেছি। মাঝে মধ্যেই মেলায় ঘুরতে আসি উল্লেখ করে আফরোজা বলেন, বিকেলের আগেই বাসায় চলে যাবো।
 
অংশগ্রহণকরী প্রতিষ্ঠান ও দর্শনার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান সুভাশীষ বসু বলেন, মেলায় যাতে হকার ঢুকতে না পারে সে জন্য আমাদের পুলিশ রয়েছে। তারাই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে।
 
মেলায় দায়িত্বরত উপ-পুলিশ পরিদর্শক মো. জহুরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মানিব্যাগ, মোবাইল চুরি হওয়ার বিষয়ে বেশকিছু অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছে। কিন্তু কারা এটি করছেন তা খুঁজে বের করা কঠিন। কারণ সবাই দর্শনার্থী সেজে মেলায় আসছেন।
 
হকারদের বিষয়ে তিনি বলেন, হকাররা যাতে মেলায় প্রবেশ করতে না পারে সে বিষয়ে আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। তারপরও বিভিন্ন উপায়ে কিছু হকার মেলায় ঢুকে পড়ছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।