ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পর্যটন

সমুদ্রস্নানের আনন্দে স্বাস্থ্যবিধির পরাজয়!

সুনীল বড়ুয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২১
সমুদ্রস্নানের আনন্দে স্বাস্থ্যবিধির পরাজয়! সাগরের লোনাপানিতে আনন্দে মেতেছেন পর্যটকরা। ছবি: বাংলানিউজ

কক্সবাজার: পর্যটন মৌসুম শুরুর আগে থেকেই পর্যটকে ভরপুর কক্সবাজার। সমুদ্রসৈকতে তো কথাই নেই, রোদ-বৃষ্টি কিছুই মানছেন না দূর-দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকেরা।

আর নির্মল এ আনন্দে অনেক ক্ষেত্রে হার মানছে স্বাস্থ্যবিধিও।  

করোনা মহামারিতে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ঘরবন্দি মানুষ একটু প্রাণভরে নিশ্বাস নিতে ছুটে আসছে বিশ্বের দীর্ঘতম এই সমুদ্রসৈকতে। বিশেষ করে সপ্তাহের ছুটির দিনে পর্যটকদের ভিড় হচ্ছে বেশি।  অন্যদিকে দীর্ঘদিনের মন্দাভাব কাটিয়ে পর্যটনশিল্পে আবার সুদিন আসছে, এমন আশায় দারুণ খুশি পর্যটন ব্যবসায়ীরা। তবে, সৈকতে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে হিমশিম খাচ্ছেন টুরিস্ট পুলিশসহ সংশ্লিষ্টরা।  

সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর)  বিকেলে সৈকতের সুগন্ধা, কলাতলী ও লাবণী পয়েন্টে হাজারো প্রাণের কোলাহল দেখে মনে হয়নি আজ ছুটির দিন নয়। উত্তাল সৈকতের ঢেউয়ের আঁছড় গড়িয়ে পড়ছে বালিয়াড়িতে। এরই মধ্যেই বালিয়াড়িতে চলছে দৌড়ঝাঁপ, সমুদ্রস্নানসহ নানা আনন্দে মেতে ওঠেছেন পর্যটকেরা।  সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে নামতেই দেখা গেল সি-সেইফ লাইভগার্ডের দুই কর্মী টাওয়ারে বসে দায়িত্ব পালন করছেন। বেশিরভাগ পর্যটক লোনা জলে গা ভেজাতে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন সৈকতে। টুরিস্ট পুলিশ ও বীচকর্মীরা এদিক-ওদিক ছুটে পর্যটকদের স্বাস্থ্যবিধি মানার তাগাদা দিচ্ছেন। কিন্তু কে শুনে কার কথা! সমুদ্রস্নানের আনন্দে যেন স্বাস্থ্যবিধির পরাজয়!

মাস্ক পরেননি কেন-এমন প্রশ্ন করা হয় একজন পর্যটকে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ভাই সমুদ্রসৈকতে এসেছি, একটু প্রাণ ভরে নিশ্বাস নিতে। সৈকতেই যদি মাস্ক পরে ঘুরতে হয়, তাহলে নিশ্বাসটা নেবো কীভাবে? 

দীর্ঘদিন ঘরবন্দি থাকতে থাকতে আর ভালো লাগছিল না। তাই এখানে ছুটে এসেছি।  এখানে এসে মনে হচ্ছে মাথাটা বেশ হাল্কা হয়ে গেছে। ছেলে-মেয়েরাও খুব মজা করছে, এভাবেই প্রতিক্রিয়া জানালেন কুমিল্লা থেকে আসা পর্যটক মোশারফ হোসেন।

ঢাকার সাভার থেকে সপরিবারে কক্সবাজার বেড়াতে এসেছেন ব্যবসায়ী নুর মোহাম্মদ।  তিনি বলেন, আমি নিরিবিলি পরিবেশ পছন্দ করি, ভাবছিলাম এ সময়ে কক্সবাজারে পর্যটক কম থাকবে। কিন্তু এখানে এসে দেখি ভিন্নচিত্র।  তবুও সময় ভালোই কাটছে। বিশাল এই সমুদ্রের সামনে এলে মনটা আহা! জুড়িয়ে যায়! এটাই হচ্ছে কক্সবাজার ভ্রমণের আনন্দ এভাবেই প্রতিক্রিয়া যোগ করেন ওই ব্যবসায়ী।  

কক্সবাজার হোটেল মোটেল অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, ঘরবন্দি থাকতে থাকতে লোকজন অসুস্থ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। তাই একটু স্বস্তির জন্য তারা এখানে ছুটে আসছে। সরকারি নির্দেশনা মেনে আমরাও পর্যটকদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। যেকোন পর্যটক যেন কক্সবাজার থেকে আনন্দময় ভ্রমণের স্মৃতি নিয়ে নিজ গন্তব্যে ফিরতে পারে সেভাবেই কাজ করছি আমরা।

পর্যটনের ভর মৌসুমে কক্সবাজারে পর্যটকদের জন্য আবাসন সংকট প্রকট হতে পারে এ কথা জানিয়ে এক হোটেল কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, এখানকার চার শতাধিক হোটেল মোটেল ও গেস্ট হাউসে সোয়া লাখ পর্যটকের রাত্রি যাপনের সুযোগ থাকলেও রোহিঙ্গারা আসার পর এসব হোটেল মোটেলের বড় একটি অংশ জাতিসংঘভুক্ত সংস্থা, আইএনজিও, এনজিওসহ বিভিন্ন সংস্থায় কর্মরত-কর্মকর্তাদের মাসিক ভাড়ায় চলে গেছে। এরই মধ্যে এখন করোনা মহামারির কারণে ৫০ শতাংশ রুম ভাড়া দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে রুমের সংকট প্রকট হতে পারে।  কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. জিল্লুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, দিন দিন কক্সবাজারে পর্যটকের চাপ বাড়ছে। মাস্ক পরিধান, স্বাস্থ্যবিধি মানাসহ সরকারি নির্দেশনা প্রতিপালনে টুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি করোনা সংক্রমণরোধে পর্যটকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে টুরিস্ট বলে জানালেন এসপি জিল্লুর রহমান।

জেলা প্রশাসক ড. মো. মামুনুর রশীদ বাংলানিউজকে বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার শর্তে পর্যটনকেন্দ্র খোলার অনুমতি দিয়েছে সরকার। এক্ষেত্রে পর্যটকসহ সবাইকে সরকারি নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। এতে কেউ নিয়ম না মানলে ভ্রাম্যমাণ আদালত ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আইনি ব্যবস্থা নেবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১২৪৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২১
এসবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।