ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পর্যটন

এই ঈদে বেড়াতে যেতে পারেন ‘দহগ্রাম আঙ্গোরপোতা’

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৪ ঘণ্টা, জুন ৫, ২০১৯
এই ঈদে বেড়াতে যেতে পারেন ‘দহগ্রাম আঙ্গোরপোতা’

লালমনিরহাট: পরিবার পরিজন নিয়ে পবিত্র ঈদুল ফিতরের দীর্ঘ ছুটিতে ঘুরে আসতে পারেন ইতিহাস সমৃদ্ধ ভারতের ভেতর একটুকরো বাংলাদেশ ‘দহগ্রাম আঙ্গোরপোতা’।

বহুল আলোচিত সাবেক ছিটমহল ভারতের সীমান্ত ঘেঁষা লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম আঙ্গোরপোতা। ভারতের অভ্যন্তরে থাকা তিন বিঘা আয়তনের একটি জনপদ এটি।

যেখানে গেলে হৃদয়ে নাড়া দেবে ভারত বিভাজন, বঙ্গবন্ধু ও ইন্দিরা গান্ধীর রাজনৈতিক সম্পর্কের ইতিহাস তথা ভারত বাংলাদেশের সংস্কৃতির মিশ্রন।  

এখানকার ইতিহাস বড়ই বেদনার। এক সময় এ জনপদের মানুষগুলো ভারতে বাস করলেও তারা ছিলেন বাংলাদেশের নাগরিক। কিন্তু ছিলো না তাদের কোনো নাগরিক অধিকার। দীর্ঘ সময় বঞ্চিত ও অবরুদ্ধ জীবন কাটানো এসব সংগ্রামী মানুষের ইতিহাস জানতে অনেকেই ছুটে আসেন দহগ্রাম আঙ্গোরপোতা তথা তিন বিঘা করিডোরে।

জানা যায়, ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান দেশ দুইটি ভাগের পর ভারতের অভ্যন্তরে ২২.৬৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের দহগ্রাম ও আঙ্গোরপোতা পাকিস্তানের অংশে পড়ে। পরবর্তীতে দহগ্রাম আঙ্গোরপোতা বাংলাদেশ হিসেবে পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে। কিন্তু সেই থেকে ভারতের কাছে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম আঙ্গোরপোতার পুরো জনপদ।  

পরবর্তীতে ১৯৯২ সালে এ দহগ্রাম আঙ্গোরপোতাকে ৯৯ বছরের জন্য বাংলাদেশকে লিজ দেয় ভারত। এর ফলশ্রুতিতে ১৯৯২ সালের ২৬ জুন রেশনিং পদ্ধতিতে ‘তিনবিঘা করিডর’ এক ঘণ্টা পরপর দিনে ৬ ঘণ্টা খোলা রাখা শুরু করে। তখন কিছুটা হলেও মুক্তির স্বাদ পায় দহগ্রাম ও আঙ্গোরপোতা দুটি ছিটমহলের মানুষ। সেই থেকে ২৬ জুন তিনবিঘা করিডোর মুক্তদিবস পালন করেন দহগ্রামবাসী।

২০০১ সালের ২১ এপ্রিল আরও ৬ ঘণ্টা বাড়িয়ে সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত করিডোর গেট খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হয়।  
এর ধারাবাহিকতায় ২০১১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং বাংলাদেশ সফরে এলে গেটটি ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হয়। ওই সালের ১৯ অক্টোবর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘দহগ্রাম ও আঙ্গোরপোতা’ সফরের মধ্য দিয়ে এ গেট ২৪ ঘণ্টা ব্যবহারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। একটুকরো বাংলাদেশ ‘দহগ্রাম আঙ্গোরপোতা’।  ছবি: বাংলানিউজএমনই সংগ্রামী জীবনের ইতিহাস সমৃদ্ধ দহগ্রামে বর্তমানে রয়েছে দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ, দহগ্রাম ১০ শয্যার হাসপাতাল, বডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ক্যাম্প, পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র, সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়সহ নানা সরকারি দফতর ও স্থাপনা। দীর্ঘ বঞ্চিতদের এগিয়ে নিতে দেওয়া হয়েছে বিশেষ সুযোগ সুবিধা।  

দহগ্রাম আঙ্গোরপোতার দক্ষিণে বয়ে চলেছে তিস্তা নদী। তৈরী করা হয়েছে নয়নাভিরাম ও দৃষ্টিনন্দন চা বাগান। কৃষি, ব্যবসাসহ নানা পেশায় বিপ্লব ঘটিয়ে মূল ভূ-খণ্ডের সঙ্গে তাল মিলিয়ে উন্নয়নের ছোঁয়ায় আলোকিত জনপদে পরিণত হয়েছে এক সময়ের অবহেলিত দহগ্রাম। উন্নয়নের দ্বীপশিখা জ্বালানোর কৌশল জানতে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন দহগ্রাম আঙ্গোরপোতায়।

ভারত-বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস সমৃদ্ধ দহগ্রাম আঙ্গোরপোতায় প্রতিদিন বেড়াতে আসেন বিভিন্ন এলাকার মানুষ। ঈদসহ বিশেষ দিনগুলোতে দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়ে করিডোর গেটে।

রাজধানী ঢাকা থেকে ‘লালমনি এক্সপ্রেস’ ট্রেন অথবা বাসে পাটগ্রাম পৌঁছাতে হবে। এরপর যেকোনো যানবাহনে পৌঁছাতে পারেন ‘দহগ্রাম আঙ্গোপোতায়’। যে করিডোর গেটের চৌরাস্তার এক দিকে (পূর্ব-পশ্চিমে) বাংলাদেশের মানুষ ও অপরদিকে (উত্তর-দক্ষিণে) ভারতীয় মানুষ যাতায়ত করে।  

দু’দেশের মানুষ ও হালকা যানবাহন চলাচল করলেও দীর্ঘ ইতিহাসে এ চৌরাস্তার মোড়ে এখন পর্যন্ত দুর্ঘটনার কোনো খবর পাওয়া যায়নি। তবে বাংলাদেশি মানুষ এ করিডোর গেটে আন্ডারপাস সড়ক অথবা ফ্লাইওভার চেয়ে দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে। ফ্লাইওভার বা আন্ডারপাস সড়ক নির্মাণ করতে দুই দেশের শীর্ষ পর্যয়ের আলোচনা ও সম্মতির প্রয়োজন রয়েছে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪১ ঘণ্টা, জুন ০৫, ২০১৯
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।