ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পর্যটন

প্রকৃতির সান্নিধ্যে ব্রহ্মপুত্রের ওপার

এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৯ ঘণ্টা, জুন ৩, ২০১৯
প্রকৃতির সান্নিধ্যে ব্রহ্মপুত্রের ওপার

ময়মনসিংহ: একটা সময় ছিল যখন ময়মনসিংহ শহরে দাঁড়িয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের পূর্ব দিকে তাকালে চোখে পড়তো বিস্তীর্ণ চর আর নির্জন জনমানবহীন এলাকা। বর্ষা মৌসুমে তা রূপ নিতো বানভাসি এলাকায়। আর অন্য মৌসুমে দেখা মিলতো কাশফুল কিংবা নাম না জানা বাহারি গাছগাছালির ঝোপ-ঝাড়।

সেখানে ফোটা শরতের কাশফুলে দুল খেলতো সাদা মেঘের শুভ্রতা। এতে চোখ জুড়িয়ে যেতো ব্রহ্মপুত্রের এপারের বাসিন্দাদের।

 

চরাঞ্চলের সেই গ্রামীণ ভূমিকে বলা হয় ব্রহ্মপুত্রের ওপার। এপারে প্রাচীন শহর ময়মনসিংহ। আর ওপারে চরাঞ্চলের গ্রাম। তবে এখন দৃশ্যপট পাল্টেছে, বদলাচ্ছে সম্ভাবনাও। আগে ব্রহ্মপুত্রের বাঁকে দক্ষিণ-পশ্চিমে শহর ছিল। আর এখন শহর বিস্তৃত হয়েছে নদ পেরিয়ে।

বর্তমানে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন হয়েছে। আগের পৌর এলাকা ছাপিয়ে মহানগরের সীমানা বেড়ে ব্রহ্মপুত্রের ওপারে নতুন একাধিক ওয়ার্ড হয়েছে। ব্রহ্মপুত্রের দু’পাড়েই এখন স্বপ্নের মহানগর। মূলত ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহরের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল ব্রহ্মপুত্রের ওপারেই।

ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় স্থানীয় অধিবাসীদের সঙ্গে প্রশাসনের দ্বন্দ্ব বিভাগীয় শহর সম্ভাবনাকে হতাশার কালো মেঘে ঢেকে দিয়েছিল। এখন সেই সমস্যাও কেটেছে। ছুটির দিনে মানুষজন যখন ব্রহ্মপুত্র পেরিয়ে ওপারে গিয়ে বদলে যাওয়া বিকেলে এপারের দিকে তাকায়, তখন এপারের মানুষের ভিড়ে ওপারকে মনে হয় নির্জন অরণ্য!

চিত্ত-বিনোদনের জন্য শুধু পার্কই মানুষের একমাত্র আকর্ষণ নয়। গাছের সুশীতল ছায়ায় বসলেই সময় কাটে- এটাই শেষ কথা নয়। কখনো কখনো সময় কাটাতে মানুষের পছন্দ খোলা আকাশ। নীল আকাশের নিচে নির্জন প্রান্তরে মানুষ খুঁজে অবসর উদযাপনের একান্ত সময়।  

ব্রহ্মপুত্রের ওপারের চরের বিশাল জায়গার পুরোটাই খালি। কোথাও কোনো ঘরবাড়ি নেই। পার্কের মতো বনায়ন সমৃদ্ধ গাছ নেই। বসারও কোনো ব্যবস্থা নেই। শুধু আছে সবুজ মাঠ।

দুপুরের পর ব্রহ্মপুত্র পেরিয়ে মানুষের অভিযান চলে ওপারের শূন্যতা দখলের। কোনো কোনো বিকেল যেনো দৃশ্যপটকেই বদলে দেয়। আর ঈদের সময় তো কথাই নেই।

ওই সময় দূর থেকে দেখা যায়, খণ্ড খণ্ড মানুষের বর্ণাঢ্য জটলায় ওপারের নির্জনতা ভেঙে গেছে। সেখানে অসংখ্য জনারণ্য স্থির হয়ে আছে শেষ বিকেল পর্যন্ত। তবে সন্ধ্যা নেমে আসার আগেই মিলিয়ে যায় সেইসব মানুষের হৈ-হুল্লোড়।  

ঈদের সময়টাতে শহরের জয়নুল উদ্যানে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয়। যাদের এক তৃতীয়াংশই যেনো অধিকতর নির্জনতার সন্ধানে ব্রহ্মপুত্রের ওপারটাকে বিকল্প পার্ক করে তুলে!

প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ ব্রহ্মপুত্র তীরে আসে। যার উল্লেখযোগ্য অংশেরই পছন্দ ব্রহ্মপুত্রের ওপার। ঈদ মৌসুমে আবার সেখানে কোনো কোনো দিন তিল ধারণেরও ঠাঁইও থাকে না।  

ময়মনসিংহ মহানগরের ক্রমবর্ধমান মানুষের চিত্তবিনোদনের জন্য বিদ্যমান পার্ক যথেষ্ট নয়। মানুষের প্রয়োজন আরও বিস্তৃত ভূমি।  

ছবি: বাংলানিউজ

ঈদ ছুটিতে ময়মনসিংহ শহরের মানুষজন চিত্তবিনোদনের অংশ হিসেবে ব্রহ্মপুত্র পার হয়ে ওপারে যায়। তবে শুষ্ক মৌসুমে ব্রহ্মপুত্র থাকে পানিশূন্য। মানুষ তখন হেঁটে বেড়ায় ব্রহ্মপুত্রের বুকে।

ঈদে, নববর্ষে বা অন্য কোনো উৎসবে ময়মনসিংহে বিনোদন কেন্দ্র বলতে ব্রহ্মপুত্রের উপকণ্ঠ। সাহেব কোয়ার্টার পার্ক যা এখন জয়নুল উদ্যান, সেটি ছাপিয়ে বিনোদন প্রেমীরা পৌঁছে যায় ব্রহ্মপুত্রের ওপারে। বর্তমানে সেখানে রয়েছে পরিকল্পিত পর্যটন সম্ভাবনা।

পারিবারিকভাবে যারা জয়নুল উদ্যানে আসেন, তারা সঙ্গে আনেন শিশুদের। বন্ধুবান্ধবসহ যারা প্রচুর সময় নিয়ে আসেন, তাদের আকর্ষণ করে ওপার। আর রোমান্টিক জুটি বা নব বিবাহিতদের পছন্দ বোটানিক্যাল গার্ডেন।  

এখানকার চিত্তবিনোদনে সিনেমা হল এখন অভিজাত শ্রেণির কাছে কোনো আকর্ষণই নয়। নাটক বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নগরীর অ্যাডভোকেট তারেক স্মৃতি অডিটোরিয়াম ও পাবলিক হলই দর্শক টানে।

তবে সংস্কৃতির নগরী ময়মনসিংহে বিনোদন ব্যবস্থার আরও বিকাশ ও আধুনিকায়ন জরুরি।  

আগের মতো এ শহরের পাড়া মহল্লায় এখন পর্যাপ্ত খেলার মাঠ নেই। নগরীর যান্ত্রিক জীবন তাই অপেক্ষায় থাকে সাপ্তাহিক ছুটির দিনের। বিশেষ করে ঈদ পর্ব কিংবা বিশেষ কোনো উৎসবের দিনের।  

ছুটির দিন কিংবা বিশেষ উৎসবের দিন মানেই অনিবার্য ভিড় ব্রহ্মপুত্র নদকে ঘিরে। উৎসবের দিন রঙিন করতেই যেনো সবার ঠিকানা হয়ে উঠেছে ব্রহ্মপুত্রের এপার-ওপার।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৯ ঘণ্টা, জুন ০৩, ২০১৯ 
এমএএএম/এসএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।