ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পর্যটন

হিমালয়ে দুঃসাহসী একক অভিযানে সালেহীন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৯ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০১৯
হিমালয়ে দুঃসাহসী একক অভিযানে সালেহীন গাঞ্জালা পাস হাই ক্যাম্প, ছবি: সংগৃহীত

নিজের অভিজ্ঞতা, যোগ্যতা ও সক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে সম্পূর্ণ একা অপরিচিত কোনো জায়গায় ঘুরতে যাওয়ার মধ্যে রয়েছে অন্য রকম একটা অ্যাডভেঞ্চার। যাকে আমরা সোলো ট্রিপ বা একক অভিযান বলি। আর এটা যদি হয় হিমালয়ের বরফঢাকা জনমানবহীন, বসতিবিহীন কোনো পর্বত শিখরে? 

সেখানে বৈরী আবহাওয়া-তুষারপাতের মধ্যে আপনার খাবার, পানি, ওষুধ, জামাকাপড়, তাঁবু সর্বোপরি আপনার বেঁচে থাকার সব রসদ বহন করতে হবে নিজেকেই। আপনি কোন পথে যাবেন সেই পথও নির্ধারণ করতে হবে।

ভুল করে পা পিছলে গেলে হারিয়ে যেতে পারেন বরফঢাকা পাহাড়ের গভীর কোনো খাদে। সাহায্য করার জন্য সেখানে থাকবে না কেউ।  

পর্বত আরোহণে যখন একাধিক মানুষ তখন সবাই কাজ ভাগ করে নেন। কিন্তু এক্ষেত্রে আপনার বেঁচে থাকার সব গুরুত্বপূর্ণ কাজই আপনাকে একা করতে হবে। এমন একটি অভিযান আপনার জীবনে এনে দেবে ভিন্ন এক অনুভূতি। সালেহীন আরশাদী জানান সেই রোমঞ্চকর অভিজ্ঞতার কথা। দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এ ধরনের সোলো ট্রিপ। থারপু চুলির লোয়ার ফ্ল্যাংক ক্লাইম্ব, ছবি: সংগৃহীত সালেহীন ২৭ দিনের সোলো ট্রেকিং এ নেপালের লাংতাং রিজিওনে গিয়েছিলেন ২০১৮ সালের মে মাসে। সেখানে গাঞ্জালা পাস (৫১৬০ মিটার) অতিক্রম করেন সম্পূর্ণ একা। গোসাইকুন্ড ট্রেক করে হেলাম্বু আবার হেলাম্বু ট্রেক করে দুর্গম গাঞ্জালা পাস অতিক্রম করে লাংতাং ভ্যালিতে পৌঁছান। গোসাইকুন্ডের উপর ৫০৭০ মিটারের একটি অনামি শৃঙ্গও আরোহণ করেন তিনি।

তাড়াহুড়ো না করে পুরো সময়টা উপভোগ করেছেন নিজের মতো করে। যেখানে ভালো লেগেছে সেখানেই ক্যাম্প সেট করে থেকেছেন। গান শুনে বা বই পড়ে কাটিয়ে দিয়েছেন সময়। গাঞ্জালা পাস অতিক্রমকালে কেলডাং নামক জনমানব ও পানিবিহীন একটা জায়গায় সম্পূর্ণ একা ক্যাম্প করেছিলেন তিনি। সেই সোলো ট্রিপ থেকে শিখেছেন একা বেঁচে থাকার অনেক কিছু।

সালেহীন আবারো হিমালয়ের পথে একা বেরিয়েছেন। তার এবারের গন্তব্য হিমালয়ের অন্নপূর্ণা অঞ্চলে অবস্থিত থারপু চুলি পর্বতচূড়া। ৩০ দিনের অভিযানে এবারও যাচ্ছেন একা। গোসাইকুণ্ডের উপর ৫০৭০ মিটারের অনামী শৃঙ্গ, ছবি: সংগৃহীত২০১৪ সালেও একবার থারপু চুলিতে অভিযানে গিয়েছিলেন সালেহীন। কিন্তু প্রচণ্ড খারাপ আবহাওয়ার কারণে সমস্ত পরিকল্পনা সেবার ভেস্তে গিয়েছিল। নিম্নচাপ হুদহুদের কারণে প্রচণ্ড তুষারপাত হয়েছিল। মাত্র দু’দিনের ঝড়ে আট ফিটের মতো তুষারপাত হয়েছিল। ফেরার পথে ঘন মেঘের আড়ালে লুকিয়ে থাকা থারপু চুলির দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন, 'নিশ্চয়ই আবার দেখা হবে'।

সালেহীনের এই সোলো পর্বতাভিযানটি পরিচালনা করছে The Quest অ্যাডভেঞ্চার ক্লাব। থারপু চুলি (৫৬০০+) অন্নপূর্ণা ম্যাসিফের ঠিক মাঝামাঝি অবস্থিত একটা পিক। এর চূড়া থেকে আশপাশের গগনস্পর্শী চূড়াগুলোর দিকে তাকালে মনে হয় পুরো একটি এম্ফিথিয়েটারে দাঁড়িয়ে আছি।  

থারপু চুলি পর্বতের কাছে যাওয়ার আগে তাকে অতিক্রম করতে হবে অন্নপূর্ণা হিমবাহ। ক্রেভাসপূর্ণ আইসফিল্ড পাড় হয়ে ৪শ ফুটের একটা ওয়াল ক্লাইম্ব করে রিজলাইনে উঠতে হবে। পথে থাকবে বরফে ঢাকা পথ। বৈরী আবহাওয়া-তুষারপাতের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে তাকে একা পৌঁছাতে হবে থারপু চুলি।

সালেহীনের মতে পর্বত আরোহণ একটা দর্শনের ব্যাপার। সাধারণত চূড়ায় পৌছানোকেই সবাই প্রাধান্য দেয়। কিন্তু তিনি মনে করেন চুড়ায় পৌঁছানোর চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কীভাবে পৌঁছালাম। এলপাইনিজমের দর্শন হচ্ছে ‘পাহাড়ে তুমি নিজের যোগ্যতায় যাও’। কোনো ধরনের সাহায্য না নিয়ে, যত কম রসদ ব্যবহার করে, যতটা হালকা জিনিস নিয়ে তুমি যেতে পারো। লরেবিনা পাস, ছবি: সংগৃহীতএই দর্শন দীর্ঘদিন ধরে অনুসরণ করে আসছেন তিনি। তার মতে একা থাকলে মানুষের মধ্যে যে দক্ষতা আছে সেগুলো আরেকটু ভালোভাবে প্রকাশ করার সুযোগ পাওয়া যায়।

নতুনদের জন্য সোলো ট্রেকের ক্ষেত্রে শুরুটা বাংলাদেশের বান্দরবানের পাহাড় দিয়েই ট্রেক শুরু করার পরামর্শ দেন। পর্বত আরোহণ সম্পর্কিত প্রচুর বই পড়তে হবে, ম্যাপ সম্পর্কে ধারণা এবং যে ট্রেকে যাচ্ছেন সেই ট্রেকের প্রকৃতি সম্পর্কে খুব ভালো ধারণা নেওয়ার পরামর্শ দেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৮ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০১৯
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।