ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পর্যটন

সাগরের বুকে জেগে ওঠা নতুন চরে নতুন দিগন্ত

মুশফিক সৌরভ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৭
সাগরের বুকে জেগে ওঠা নতুন চরে নতুন দিগন্ত লাল কাঁকড়ার অবাধ ছোটাছুটি

পটুয়াখালী: নীল আকাশের নিচে চারদিকে জলরাশি, মাঝখানে বালুচর। সাদা বালুর বুকচিরে লাল কাঁকড়ার অবাধ ছোটাছুটি আর অতিথি পাখির কলকাকলী মুহূর্তেই মুগ্ধ করে দেবে যে কাউকে।

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার কুয়াকাটা সংলগ্ন গভীর সাগরে এমনই এক চরের অবস্থান। জেলেদের কাছে এ চর কখনো ‘আইচা বা মালই টিলা’, কখনো ‘হাইরের চর’ নামে পরিচিত হয়েছে।

তবে চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে কুয়াকাটার স্থানীয়রা ও বেশ কিছু পর্যটক চরটিতে ভ্রমণ শুরু করলে এর অঘোষিত সর্বশেষ নামকরণ করা হয়েছে ‘চর বিজয়’ নামে।  

কিন্তু প্রশাসনিকভাবে এখনো এ চরের কোনো নামকরণ হয়নি বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। আপাতত কুয়াকাটা থেকে ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠা এ চরটি বাংলাদেশের ভূখণ্ড হিসেবে সনাক্ত করেছেন তারা। পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরকারের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে চরটিতে চলছে মাপঝোপ আর গাছ লাগানোর কাজ।
অতিথি পাখির বিচরণএরইমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসনসহ জনপ্রতিনিধিরা চরটি পরিদর্শন করেছেন। যা ৬-৭ বর্গকিলোমিটার হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

পর্যটক ও সৌখিন আলোকচিত্রী মো. আরিফুর রহমান জানান, কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব কোণে দ্বীপটির অবস্থান। যেখানে কুয়াকাটা সি ট্যুরিজমের ফাইবার বোটে গিয়েছেন তিনি। সময় লাগে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা।  

তিনি বলেন, যাত্রার সবচেয়ে মজার বিষয় কুয়াকাটা সৈকত থেকে বোটে কিছুদূর যাওয়ার পরই সাগরের জলের রং অনেকটা পাল্টে গিয়ে নীলাভ আকার ধারণ করার দৃশ্য। তবে পুরোপুরি নীলও নয় জলের রং। এরপর চরের কাছাকাছি গেলে দেখা যাবে অতিথি পাখি। তারা কখনো ঝাপটা মেলে উড়ছে, আবার কখনো পানিতে উড়ছে, সঙ্গে থাকছে উচ্ছ্বসিত কোলাহল। পাখি দেখতে দেখতে চরে পা দিলেই মিলবে লাল কাঁকড়ার দেখা। দল বেঁধে হাজার হাজার কাকড়া যেন যাদুর লালগালিচা পেতে রেখেছে অতিথিদের জন্য। এখানে যে কেউ এলেই প্রকৃতির প্রেমে নিজেকে হারিয়ে ফেলবেন।

তবে চরটি পর্যটক ও প্রশাসনের কাছে চলতি বছর চোখে পড়লেও স্থানীয় জেলেরা দেখছেন বহু বছর ধরে।

স্থানীয় জেলে কবির মাঝি জানান, বহু বছর ধরে এটি দেখে আসছেন তারা। বর্ষার সময়ে এই চর বা দ্বীপটি পানির নিচে হারিয়ে যায় বলে ডুবোচর হিসেবেই জানতেন। তবে এটি দেখতে নারিকেলের আইচা বা মালাইয়ের মতো হওয়ায় আমাদের কাছে আইচা বা মালই টিলা নামে পরিচিত। বর্তমানে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার লম্বা এবং আড়াই কিলোমিটার প্রস্থ এ চরটির পশ্চিম দিকে একটি লেজেরও সৃষ্টি হয়েছে। এর কাছাকাছি আরো একটি ছোট চর রয়েছে বলেও জানান তিনি।

অপর এক জেলে মিজান জানান, মূলত ওই চরটি সাগরের পানি প্রবাহের প্রবল স্রোতধারার কাছে অবস্থিত। এ স্রোতধারার মুখেই জেলেরা ইলিশসহ বিভিন্ন মাছ ধরার জন্য জাল পেতে থাকেন। আর স্রোতধারার মুখ বা চ্যানেলটাকে হাইর বলেই স্থানীয়ভাবে ডাকা হয়ে থাকে। হাইরের পাশের এ চররে তাই হাইরের চরই বলা হয়।

তিনি জানান, এই চরে প্রচুর মাছ ধরা পড়ার কারণে বিগত সময়ে জেলেদের মধ্যে বহু বিবাদও হয়েছে এখানে। শীতের সময়ে অনেক জেলে অস্থায়ী ঘর তৈরি করে মাছ শিকার এবং শুঁটকি তৈরি করেন এখানে। মানুষ খুব একটা যায় না বলে শীতে এখানে সমাগম ঘটে লাখ লাখ অতিথি পাখির।  

কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট বোট মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি জনি আলমগীর বলেন, সমুদ্রের মধ্যে সুন্দর এ চরটি কুয়াকাটার পর্যটনের নতুন এক দিগন্ত। এটি দেশি-বিদেশি ভ্রমণ পিয়াসীদের কাছে কুয়াকাটার পর্যটনকে আরো বেশি আকর্ষণীয় করে তুলবে।

তবে এখন চরটি পর্যটন উপযোগী নয় বলে জানিয়েছেন পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক ড. মাছুমুর রহমান। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, চরের সন্ধান পেয়ে আমরা এটিকে সরকারের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছি। এখন এটির মাপঝোপের কাজ চলছে। সময় সাপেক্ষে এর প্রকৃত মাপ জানা যাবে।
জেগে ওঠা চরে পর্যটকদের আকর্ষণ
তিনি বলেন, জায়গাটিকে এখনো পর্যটন উপযোগী হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। পথটাও অনেক দূরের।

জেলা প্রশাসক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ চরটিতে প্রচুর পরিমাণে গাছ লাগানোর কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। বালু ও লবণ সহিষ্ণু গাছের চারা ও হাজার হাজার গাছের বীজ ফেলা হচ্ছে। পরিকল্পিত উদ্যোগের মধ্য দিয়ে একসময় এটি পর্যটন উপযোগী হিসেবে গড়ে উঠবে।  

এদিকে এরইমধ্যে চরটিতে পর্যটকদের বিচরণ বেড়েছে। তবে চরটিতে পর্যটকদের অতি সাবধানে বিচরণ করার কথা বলেছে উপজেলা প্রশাসন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর, ২৯, ২০১৭
এমএস/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।