ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পর্যটন

তাজিনডং নয়, দেশের সর্বোচ্চ চূড়া ত্লাংময়

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৭
তাজিনডং নয়, দেশের সর্বোচ্চ চূড়া ত্লাংময় দেশের সর্বোচ্চ চূড়া ত্লাংময়/ছবি: বাংলানিউজ

সরকারি নথিপত্র ও পাঠ্যপুস্তকে থাকা তাজিনডং নয়, ত্লাংময়ই দেশের সর্বোচ্চ পাহাড় চূড়া। সম্প্রতি পরিচালিত এক গবেষণায় উঠে এসেছে এ তথ্য। গবেষণাটি করেছেন ভূ-তথ্য প্রযুক্তিবিদ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সাইদুর রহমান চৌধুরি।

উচ্চতা পরিমাপের জন্য এসআরটিএম জরিপের তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানান সাইদুর রহমান চৌধুরি। এর আগে ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধের নিষ্পত্তির পর দেশের সমুদ্রসীমার প্রথম পূর্ণাঙ্গ মানচিত্র প্রণয়ন করেছিলেন অধ্যাপক চৌধুরি।



গবেষণায় ত্লাংময়ের উচ্চতা পাওয়া গেছে ৩ হাজার ৪৫১ ফুট। তার গবেষণার ফলাফলসহ অন্য তথ্য mapsnmaps.blogspot.com নামের একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে।

দেশের সর্বোচ্চ চূড়া ত্লাংময়/ছবি: বাংলানিউজতিনি বলেন, পর্বতশৃঙ্গের উচ্চতা পরিমাপের জন্য বিশ্বে দু’টি পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। একটি কলোরাডো পদ্ধতি, অন্যটি অ্যালান ডওসন পদ্ধতি। তুলনামূলকভাবে কম পাহাড়ি দেশে কলোরাডো পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২ হাজার ফুটের বেশি উচ্চতাসম্পন্ন স্থানকে পর্বত বা মাউন্টেন বলা হয়। আবার উচ্চতা যত বেশিই হোক, নির্দিষ্ট মাত্রার আশপাশের এলাকা থেকে কত উঁচু তার পরিমাপ টপোগ্রাফিক্যাল প্রমিনেন্স না থাকলে একটি পর্বতচূড়াকে স্বতন্ত্র শৃঙ্গ হিসেবে বিবেচনা করা যায় না।

কলোরাডো পদ্ধতিতে স্বতন্ত্র শৃঙ্গ হওয়ার জন্য একটি চূড়ার কমপক্ষে ৩শ ফুট প্রমিনেন্স থাকতে হবে। বাংলাদেশ তুলনামূলক কম পাহাড়ি দেশ, বিধায় গবেষণায় কলোরাডো নিয়ম অনুসরণ করি।

দেশের সর্বোচ্চ চূড়া ত্লাংময়/ছবি: বাংলানিউজদেশের ৭৫টি শৃঙ্গের মধ্যে উচ্চতা ও প্রমিনেন্সের ভিত্তিতে সামিটেবিলিটি স্কোর নির্ধারণ করা হয়ে বলে জানান ড. সাইদুর রহমান। সামিটেবিলিটি স্কোরের ভিত্তিতে পর্বতারোহীরা আকর্ষণীয় পর্বত নির্ধারণ করে থাকেন। তিনি বলেন, সরকারি হিসাবে তাজিনডংয়ের উচ্চতা ৪ হাজার ৩শ ফুট দেখানো হলেও তা ঠিক নয়। আসলে এর উচ্চতা ২ হাজার ৫৮৯ ফুট।

উচ্চতার হিসেবে দেশের ৭৫টি পাহাড়চূড়ার মধ্যে তাজিনডংকে ২৬তম বলে দাবি করেছেন তিনি।

ড. সাইদুর গবেষণা সম্পন্ন করতে ব্যবহার করেছেন মার্কিন গবেষকদের সূক্ষ্ম শাটল রাডার উপাত্ত, স্যাটেলাইট চিত্র, টপোগ্রাফিক মানচিত্র ও বাংলাদেশি পর্বতারোহীদের সংগৃহীত উপাত্তগুলো।

দেশের সর্বোচ্চ চূড়া ত্লাংময়/ছবি: বাংলানিউজপর্বতশৃঙ্গের উচ্চতা পরিমাপের জন্য শাটল রাডারের তথ্যই পৃথিবীতে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য বলে দাবি করেন তিনি। তিনি বলেন, ব্রিটিশ ভারতের ১৯৩৮ সালের এবং পাকিস্তান আমলের ১৯৪৮ সালের মানচিত্র অনুসরণ করে তৈরি করা যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীর টপোগ্রাফিক মানচিত্রেও দেখা যায় মোদক তংয়ের উচ্চতা সবচেয়ে বেশি।
তিনি ছাড়াও দেশের বিভিন্ন অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী পর্যটকদের জিপিএস পরিমাপেও ত্লাংময় সর্বোচ্চ চূড়া হিসেবে উঠে এসেছে।

এ ব্যাপারে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা বাংলানিউজকে বলেন, ইতোমধ্যেই দেশের সর্বোচ্চ চূড়া নির্ধারণের বিষয়টি নিয়ে সেনাবাহিনীকে দু’বার চিঠি দেওয়া হয়েছে। কারণ ইতোপূর্বে বিষয়টি তাদের মাধ্যমেই হয়েছে। আশা করছি এ ব্যাপারে একটি ফলাফল পাওয়া যাবে।

২০০৬ সালে ব্রিটিশ পর্বতারোহী জিঙ ফুলেন প্রথম এ পর্বত আরোহণ করেন। পরে ২০০৭ সালে প্রথম বাংলাদেশি দল এ চূড়া আরোহণ করে। এ দলে ছিলেন  এভারেস্ট আরোহণকারী পর্বতারোহী সজল খালেদ। এ সময় এ চূড়ার নামকরণ করা হয় ত্লাংময়। এটি বম ভাষার শব্দ। ত্রিপুরা ভাষায় সাকা হাফং নামেও অনেকে এ চূড়াটিকে ডেকে থাকেন। এছাড়া মদক তং নামেই পরিচিত এটি। বান্দরবানের রুমা ও থানচি উপজেলা হয়ে যাওয়া যায় এখানে। তবে এটি পড়েছে থানচি উপজেলায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৭
এএ

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।